প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের উদাসীনতায় ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) প্রশাসনের অসহযোগিতায় গুণগতমান হারাচ্ছে সপ্তদশ থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর প্রাচীন কাঠের প্রত্নস্তম্ভ।
জানা যায়, গত বছরের ১৯ মার্চ কুমিল্লা জেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের ইটাল্লা গ্রামে প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান পরিচালনা করার সময় একটি পুকুর খনন করতে গিয়ে এটি উদ্ধার করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসেন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও গবেষণা টিমের প্রধান মোর্শেদ রায়হান। প্রায় ১৪ ফুট দীর্ঘ আকৃতির কাঠের স্তম্ভটিতে রয়েছে কারুকার্য খচিত নকশা। এর কিছু অংশে নীল রঙের আস্তরণ দেখে অনুমান করা হচ্ছে, স্তম্ভটিতে নীল রঙের প্রলেপ ছিল।
এছাড়াও আপেক্ষিক কাল নির্ণয়ের মাধ্যমে জানা যায় স্থাপনাটি কুমিল্লার লালমাই-ময়নামতির সামসময়িক কালের। সেখানে এলাকাবাসী পুকুর খনন করতে গিয়ে বেকুর আঘাতে সাইটটি ধ্বংস করলেও বিক্ষিপ্তভাবে পাওয়া কাঠের টুকরা ও ইটের আকার বলে দেয় সেখানে একসময় বড় একটি প্রতœতাত্ত্বিক স্থাপনা ছিল। যা কুমিল্লার ইতিহাসকে আরও সমৃদ্ধ করবে বলে গবেষণা দলটির অভিমত।
এদিকে স্থাপনাটি শিক্ষক মোর্শেদ রায়হান প্রায় দুই বছর ধরে চৌবাচ্চা করে পানি দিয়ে সংরক্ষণ করলেও গত ৬ মাস আগে কেউ একজন অসাবধানতাবশত চৌবাচ্চাটি ফুটো করে দেয়। ফলে চৌবাচ্চাটি বেশিক্ষণ পানি ধারণ করে রাখতে পারে না। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে শুকনা অবস্থা রোদে বৃষ্টিতে ভিজে চিড়ধরা ও উইপোকার আক্রমণে গুণাগুণ হারাতে বসেছে স্তম্ভটি। এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যেই মূল্যবান স্তম্ভটি নষ্ট হয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উদ্ধারকারী শিক্ষক ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোর্শেদ রায়হান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘর থাকলে সেখানে এটাকে প্রদর্শন করা যেত এবং এর মাধ্যমে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থীরা কাঠের সংরক্ষণ শেখার সুযোগ পেত। কিন্তু বর্তমানে এটি প্রিজার্ভেশনের অভাবে নষ্ট হচ্ছে কারণ এটার দেখভাল করার জন্য লোকবল দরকার, বাজেট দরকার। আমাদের এই প্রকল্পের বাজেট শেষ হয়ে যাওয়ায় আমরা নিজ উদ্যোগে কিছু করতে পারছি না। আমরা এটা পাওয়ার পর প্রাথমিক গবেষণা শেষে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরকে জমা নিয়ে যাওয়ার জন্য জানিয়েছি। অধিদফতরও কাস্টোডিয়ানকে গ্রহণ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে বলে জানিয়েছে কিন্তু তারা এখনও কেন এটা সংরক্ষণ করেনি আমরা জানি না।
প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিচালক এ কে এম সাইফুর রহমান বলেন, আমাদেরকে হেড কোয়ার্টার থেকে জানানোর পর আমরা ময়নামতি জাদুঘরের কাস্টোডিয়ানকে জানিয়েছি। তারা অতিদ্রুত এটা ময়নামতি জাদুঘরে সংরক্ষণ করবে বলে আমাদের অবগত করেছে।
তবে ময়নামতি জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান হাসিবুল হাসান সুমি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আঞ্চলিক অফিস থেকে আমাদের জানিয়েছে। আমরা এই মাসের মধ্যে স্থাপনাটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, আমি এই বিষয়ে জানতাম না। এখন যেহেতু জানতে পেরেছি আমি এটা বিভাগের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব। তবে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল মঈনের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।