তিন মাসেই ফের ভাগাড় ঢাকা দক্ষিণের ১২ খাল

তিন মাসেই ফের ভাগাড় ঢাকা দক্ষিণের ১২ খাল

বুড়িগঙ্গা ও বালু নদীকে সংযুক্ত করেছে ধোলাইখাল। নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের ব্যবসায়ীরা এক সময় এই খাল দিয়ে নৌপথে ঢাকার সঙ্গে বাণিজ্য করতেন। এখন খালটির অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। যতটুকু আছে, ময়লার ভাগাড়। শুধু ধোলাইখাল নয়, গত এপ্রিলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ১২টি খাল থেকে ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার করে। পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে কিছু কিছু অংশে খননও করা হয়। তবে মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে এসব খাল আগের চেহারায় ফিরে এসেছে। আশপাশের বাসাবাড়ি, দোকানপাট ও কলকারখানা থেকে ফেলা বর্জ্য আর প্লাস্টিকে খালগুলো ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

গত রোববার সরেজমিন ধোলাইখাল, কদমতলী, পাটেরবাগ, জুরাইন, শ্যামপুর, দনিয়া, যাত্রাবাড়ী ও বাসাবো খালে এ দৃশ্য দেখা যায়। নগরবিদরা বলছেন, বর্ষার আগে খাল পরিস্কার করা হলেও তদারকি নেই। এ জন্য সমানের খালে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এ বছর বর্ষা এখনও তার আসল রূপে হাজির হয়নি। বর্ষার শেষদিকেও ভারি বৃষ্টি হলে নগরবাসীকে জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি পোহাতে হবে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, মাত্র ৫৫ থেকে ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেই রাজধানীতে জলবদ্ধতা দেখা দেবে। কারণ, রাজধানীর সারফেস ড্রেনের মুখগুলো প্লাস্টিক ও বর্জ্যে বন্ধ। বৃষ্টির পানি ড্রেনের মুখেই আটকে থাকবে। সিটি করপোরেশনের উচিত, খালগুলো দখলমুক্ত করে আবারও পরিস্কার করা। পাশাপাশি নিয়মিত তদারকি করা। নাগরিকদেরও দায়িত্ববান হতে হবে।

যদিও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শফিকউল্লাহ সিদ্দিক ভূঁইয়া আশাবাদী, এবার বর্ষায় ঢাকা শহরে জলাবদ্ধতা হবে না। কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, খালের ওপরে বর্জ্যের আস্তরণ দেখা গেলেও নিচে পানির স্তর আছে। বৃষ্টি হলে সমস্যা হবে না। সহজে খাল হয়ে পানি নদীতে যেতে পারবে।

এই প্রকৌশলী সমকালকে জানান, জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ষা মৌসুম ধরে আমরা এপ্রিলের মধ্যে রাজধানীর খালগুলো পরিস্কার করেছি। এবার ১২টি খাল থেকে প্রায় ৪০ হাজার টন বর্জ্য এবং ৪ লাখ টন পলি অপসারণ করা হয়। এখন শ্যামপুর, বাসাবো, কাজলা ও মান্ডা খাল থেকে বর্জ্য অপসারণকাজ চলছে। সিটি করপোরশেনর অন্তর্ভুক্ত নতুন ইউনিয়নের খালগুলোর সঠিক তথ্য পাওয়া গেলে মাস্টারপ্লান করে খনন ও দুই পাশে পার্ক করা হবে।

কদমতলী সড়কের পাশ দিয়ে গেছে কদমতলী খাল। প্রায় আড়াই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের খালটির কিছু দূর পরপর সাঁকো। স্থানীয়দের অভিযোগ, দখলে খালটি সরু হয়ে গেছে। এখন ময়লায় ভর্তি। জুরাইনের রহমতবাগের পাটেরবাগ ও জুরাইন খালের দশাও একই। দেখে বোঝার উপাই নেই, এটি খাল নাকি ড্রেন! শ্যামপুর খালের কিছু অংশে কচুরিপানা; বাকিটা বর্জ্য ও প্লাস্টিকে ভরা। দখল-দূষণে দনিয়া খাল সবাইকে হার মানিয়েছে। খালের কিনারা ধরে যতদূর চোখ যায়, শুধু প্লাস্টিক আর আবর্জনা। খাল ছাপিয়ে এখন বর্জ্য সড়কেও জমা করছেন বাসিন্দারা। রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকায় যাত্রাবাড়ী খালটি আশপাশের ভবন থেকে ফেলা ময়লা-আবর্জনায় রুগ্‌ণ। বাসাবো আর মান্ডা খাল তুলনামূলক পরিস্কার থাকলেও দখলে ড্রেনের চেহারা পেয়েছে।
পুরান ঢাকার লোহারপুল এলাকার বাসিন্দা সুলতান মাহমুদ বলেন, বুড়িগঙ্গা থেকে ধোলাইখাল নারিন্দা, কমলাপুর হয়ে শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীতে মিশেছে। এখান থেকে নৌকায় উঠলে নারায়ণগঞ্জ আর নরসিংদী যাওয়া যেত। স্রোতের তোড়ে এক সময় সাঁতরে পার হওয়া যেত না। ‘৮৮ সালের বন্যার পর খালটিকে গলাটিপে হত্যা করা হয়েছে। কিছুদিন আগে সিটি করপোরেশনের লোকজন পরিস্কার করলেও এখন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

বাসাবো খালপাড়ের বাসিন্দা আজিমুল হক বলেন, কালের বিবর্তনে প্রশস্ত খাল এখন ড্রেনে পরিণত হয়েছে। খাল দখল করে দুই পাশে সড়ক ও ভবন বানানো হেেচ্ছ। দনিয়া খালপাড়ের বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা বলেন, আশপাশের ভবন, দোকান ও কারখানা থেকে এখানে প্রতিদিন ময়লা ফেলা হয়। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব চললেও কোনো পদক্ষেপ নেই। বৃষ্টি শুরু হলে ভোগান্তির শেষ থাকবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published.