অভাবে চিকিৎসা বন্ধ শেকলবন্দি লাভলীর

অভাবে চিকিৎসা বন্ধ শেকলবন্দি লাভলীর

লাভলী আক্তার (২৫)। দেখে বোঝার উপায় নেই, তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। প্রশ্ন করলে স্বাভাবিকভাবে উত্তর দেন। মাঝেমধ্যে হাসেন, আবার কান্না করেন।

বিজ্ঞাপনস্বামী ছেড়ে চলে যাওয়ায় লাভলীর দুই শিশুসন্তানদের দত্তক দেওয়া হয়েছে। এর পর থেকে আরো মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পরেন তিনি। দুই বছর ধরে নিজ ঘরে শেকলবন্দি করে রাখা হয়েছে তাকে। ডাক্তাররা বলছেন, চিকিৎসা করাতে পারলে ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু অভাবের কারণে চিকিৎসা করাতে পারছে না লাভলীর দরিদ্র পরিবার।

ফুলবাড়িয়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের শাইদ্দাবাড়ি গ্রামের আ. মালেকের মেয়ে লাভলী আক্তার। প্রায় আট বছর আগে নিজ গ্রামেই বিয়ে হয়। সেখানে এক ছেলেসন্তান হয়। সন্তান হওয়ার কয়েক মাস পর তার মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। এই সংসারে বিচ্ছেদের পর চার বছর আগে আবারও বিয়ে হয় লাভলীর। সেই সংসারে দুই সন্তান রয়েছে। বড় মেয়ে আফরুজার বয়স যখন প্রায় দুই বছর ও ছেলে লাবিবের বয়স ৮ মাস। তখন আবারও মানসিক সমস্যা দেখা দেয় লাভলীর। দুই সন্তানসহ তাকে তার বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেন স্বামী রুবেল মিয়া। এর পর আর কোনো খোঁজখবর নেননি।  

বাবার অভাবের সংসার। অভাবের কারণে লাভলীর দুই সন্তান দত্তক দিয়ে দিয়েছেন তারা। এরপর দিন দিন লাভলীর অসুস্থতা বাড়তে থাকে। এ কারণে দুই বছর ধরে শেকলবন্দি করে রাখা হয়েছে তাকে।

গত মঙ্গলবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শেকলে বাঁধা লাভলীর পাশে একটি চৌকিতে বসে রয়েছে তার বাবা মালেক। সে-ও কিছুটা মানসিক রোগী। মা নুরজাহান বেগম বাড়ির উঠানে বসে কান্না করছেন, মেয়েকে শিকলে বেঁধে আবার ঢাকায় চলে যাবেন কাজ করতে। কাজ করতে না পারলে মেয়েকে চিকিৎসা করাতে পারবেন না, সবাইকে না খেয়ে থাকতে হবে।

ফারুক হোসেন, খাইরুল ইসলামসহ লাভলীল একাধিক প্রতিবেশী বলেন, শেকলবন্দি লাভলী ভালো ছিল, হঠাৎ করে মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসায় ভালো হয়েছিল। আবারও মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। অভাবের কারণে সংসার চলে না, দুটি সন্তান দত্তক দিয়ে দিয়েছে। চিকিৎসা করাবে কী করে? তার মা লাভলীকে বেঁধে রেখে ঢাকায় চলে যান বাসাবাড়িতে কাজ করতে।

নুরজাহান বেগম বলেন, ‘মেয়েডা ভালা আছিন, বিয়া অইছিল, বাচ্চাও ছিল। হঠাৎ কইরা পাগলা অইয়া গেছে, ডাক্তর দেহাইয়া ভালা করছিলাম। অভাবের লিগা অহন চিগিৎসা (চিকিৎসা) করবার পাই না। ডাক্তার কইছে ঠিকমতো চিকিৎসা করাবার পাইলে এক্কেবারে ভালা অইয়া যাব। মেয়েডার একটা ভাতার কার্ড হয়নি, ভাতা পাইলে চিকিৎসা করবার পাইতাম। নিজের মাইয়ারে শিকলে বাইন্দা কাম করবার লিগা ঢাহা যামুগা, কেডা আমার পাগলা মাইয়াডারে দেখব। ‘

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক বলেন, মেয়েটির চিকিৎসার জন্য এককালীন কিছু টাকা ও একটি ভাতার কার্ডের ব্যবস্থা করা যাবে। তার পরিবার চাইলে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পে রাখার সুপারিশ করতে পারব।

ফুলবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা ডা. হারুন আল মাকসুদ বলেন, হয়তোবা মেয়েটি কোনো সময় ব্যাপক মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। যেহেতু এখন স্বাভাবিক কথাবার্তা বলে, ঠিকমতো চিকিৎসা করালে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.