অফিসে কর্মঘণ্টা কমায় দৃঢ় হচ্ছে পারিবারিক বন্ধন

অফিসে কর্মঘণ্টা কমায় দৃঢ় হচ্ছে পারিবারিক বন্ধন

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে শিডিউল লোডশেডিং চালু করে সরকার। দিনের আলোর সর্বোচ্চ ব্যবহারের লক্ষ্যে কমানো হয় অফিস-আদালতের কর্মঘণ্টা। এমন পরিকল্পনায় পরিবর্তন আসছে মানুষের জীবনধারায়। এখন সকাল সকাল অফিস শুরু হয়। শেষও হয় আগেভাগে। ফলে চাকরিজীবী এসব মানুষ পরিবারে বেশি সময় দিতে পারছেন। ফলে পরিবারেও ভালোবাসার বন্ধন আরো দৃঢ় হচ্ছে। দীর্ঘদিন একটি নিয়ম মেনে আসা এসব মানুষ খাপ খাইয়ে নিচ্ছেন নতুন এই নিয়মের সঙ্গে।

গত মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) কর্মঘণ্টা কমিয়ে অফিস ও ব্যাংকের সময়সূচি বদলে দেয় সরকার। বুধবার থেকে দেশের সব সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত অফিস শুরু হয় সকাল ৮টা থেকে। চলবে বেলা ৩টা পর্যন্ত। এছাড়া ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম শুরু হয় সকাল ১০টার পরিবর্তে ৯টায়; বেলা ৩টা পর্যন্ত চলবে লেনদেন আর ব্যাংকের কর্মীরা কাজ করবেন বিকেল ৫টা পর্যন্ত।

এতদিন সরকারি কর্মীরা অফিস করতেন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। ব্যাংকের কর্মীদের জন্য কাজের সময় নির্ধারিত ছিল সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। অফিসের সূচি বদলের পাশাপাশি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও সপ্তাহে দুদিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
 
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের এমন পরিকল্পনায় অবশ্যই একটি পরিবর্তন আসবে। উন্নতি হবে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়সহ মানুষের জীবনধারায়ও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ, সকাল সকাল অফিস শুরু হলে আগেভাগে শেষ হবে। এখন ঘুমাতে আর বেশি রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করা সম্ভব হবে না। এতে  অবশ্যই বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। কর্মজীবীরা দিনে বেশি সময় পাবেন। তারা পরিবারের সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে পারবেন। ফলে পরিবারের বন্ধন আরো দৃঢ় হবে।

তারা আরো বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে দিন শুরু হয় খুব ভোরে আর শেষ হয় সন্ধ্যায়। অর্থাৎ, ঐসব দেশে ভোরে কাজ শুরু করে আগেভাগেই শেষ করা হয়। বাংলাদেশও উন্নত দেশের সিঁড়িতে। এজন্য এখানেও এমন জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়ার বিকল্প নেই। সূর্যের আলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারলে জ্বালানি খাতে পরিবর্তন আসবে-এটা নিশ্চিত।

এদিকে নতুন সূচিতে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বেশ প্রভাব পড়েছে। চাকরিজীবীদের সকাল সকাল উঠতে হচ্ছে। ৮টার মধ্যে পৌঁছতে হচ্ছে অফিসে। পরিবারে থাকা শিক্ষার্থীরাও সকাল সকাল উঠে স্কুলে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সড়কে চাপ বাড়লেও সার্বিকভাবে একটি শৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। 

রাজধানীর পার্কসহ বিভিন্ন জায়গায় যারা শরীর চর্চা করতে বের হন, তারা আগে শরীর চর্চা শেষে বাসায় ফিরে একটু ঘুম দিতেন। কিন্তু এখন তারা বাসায় ফিরে সোজা অফিসে চলে যাচ্ছেন। অফিস শেষ করে আবার আগেভাগে বাসায় ফিরছেন।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ম তামিম বলেন, বিশ্বের উন্নত প্রায় সব দেশেই এমন রীতি চালু আছে। নতুন এ সিদ্ধান্তে একদিনে এর সুফল না পাওয়া গেলেও দীর্ঘমেয়াদে এর সুফল আমরা পাব। বিশ্বের উন্নত যত দেশ রয়েছে, সব দেশেই সকালে অফিস শুরু হয়ে আগে আগে অফিস শেষ হয়। তারা দিনের আলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করে। রাত ৮টার মধ্যে খাবার-দাবার শেষ করে ১০টার মধ্যে শুয়ে পড়ে। আমাদের যেহেতু দীর্ঘদিনের একটি জীবনধারা রয়েছে, সেহেতু একদিনেই এর পরিবর্তন সম্ভব নয়। কিন্তু উন্নত দেশের অগ্রযাত্রায় আমাদের এটিতে মানিয়ে নেয়াই মঙ্গল। 

তিনি বলেন, লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে সরকার কিছুটা বিদ্যুত সাশ্রয় করছে। ৮টার মধ্যে দোকানপাট বন্ধেরও সুফল পেয়েছি। নতুন এ সিদ্ধান্ত যেহেতু দিনের আলোর সর্বোচ্চ ব্যবহারের লক্ষ্যে গৃহীত হয়েছে, সেহেতু এর ইতিবাচক ফলই আসবে। এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।

অপর জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, গ্যাস দিয়ে আমরা যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারি, তেল দিয়ে সে পরিমাণ সম্ভব হয় না। এজন্য সাশ্রয়ের বিকল্প নেই। সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে। সরকারকে নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

উল্লেখ্য, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ জ্বালানির আন্তর্জাতিক বাজারে যে অস্থিরতা তৈরি করেছে, তার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনে। ফলে লোড শেডিং ফিরে এসেছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত।

এ পরিস্থিতিতে লকডাউনের সময়ের মতো হোম অফিস চালু করা, অফিসের কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনা, এসি ব্যবহারে সংযমী হওয়াসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কাছে সুপারিশ করেছিল বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published.