ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর গতকাল সোমবার ছাত্রলীগ হামলা চালায়। এতে অন্তত দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ছাত্রলীগের এ হামলার বিচার চেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রফেসর ড. আসিফ নজরুল।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) প্রফেসর ড. আসিফ নজরুল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তার ভ্যারিফাইড পেজে বিচার দাবি করেন।
তিনি বলেন, গতকাল আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের উপর যখন হামলা হচ্ছিল, আমি দৌড়ে বের হতে নিয়েছিলাম। আমার স্ত্রী চিৎকার করে বলল, মাথা খারাপ তোমার! আমি বললাম, না যেতে হবে। তারপর মনে হলো, এই বিশ্ববিদ্যালয়, এই সরকার তো চিনি আমি। বের হয়ে কলাভবনে যাওয়ার আগেই আমাকে মেরে শুইয়ে ফেলা হবে। তারপর প্রচারণা চলবে কোটার এই আন্দোলনের পেছনে আসলে আমিই ছিলাম। কেউ কেউ প্রশ্ন করবে, আসলে কি উদ্দেশ্যে সেখানে গেলাম আমি! এসব ভেবে ভেবে অস্থির হয়েছি, আবার নিজেকে ধিক্কারও দিয়েছি। উপাচার্য স্যারকে বারবার ফোন করেছি, প্রক্টরকে খুঁজেছি, সাংবাদিকদের বলেছি। আর কিছুই করিনি, তবু একটু পর অনলাইনে দেখি ছাত্রলীগের এক নেতা ইতোমধ্যে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দিতে আমাকে দায়ী করেছেন! আমাকে!
তিনি আরও বলেন, ভাবলাম ছাত্রদের বাঁচাতে তাহলে অন্তত কয়েকজন মিলে যাই। প্রগতিশীল তিনজন অধ্যাপককে ফোন করলাম। একজন ধরলেন না, একজন বললেন তিনি নেই ক্যাম্পাসে, আরেকজন বলল, এখন যাওয়া ঠিক হবে না। আমার অস্থিরতা বাড়তে থাকে। পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিলাম, ফেসবুকে লিখলাম। রাতে আর না পেরে ঢাবি মেডিকেলে আহত ছাত্র-ছাত্রীদের দেখতে গেলাম। অপরাধবোধ কিছুটা কমলে ঘুমাতে পারলাম অনেক রাতে।
আসিফ নজরুল বলেন, সকালে উঠে মনে হচ্ছে, ধীরে ধীরে আমিও কাপুরুষে পরিণত হচ্ছি সম্ভবত। আগে কতোবার ছাত্রদের পাশে দাঁড়ালাম, কখনো একদম একাই দাঁড়িয়েছিলাম। কাল কেন পারলাম না? আমাদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. শহীদ শামসুজ্জোহার উদাহরণ দেন কেউ কেউ। উনার মতো আমরা হতে পারিনি। তবে কেউ কেউ কিছুটা হলেও প্রতিবাদ করেছি আগে বহুবার। কিন্তু পাশে থাকা মানুষ কম পেয়েছি, এখন আরও কমছেন তারা। বহু বছর ধরে একসঙ্গে কাজ করেছি, এমন কেউ কেউ এখন সামান্য বিবৃতি দিতেও ভয় পান।
আসিফ নজরুল হামলার বিচার চেয়ে বলেন, ফেসবুকে তো অনেকে লেখেন। আসেন না নিজেরা সবাই মিলে দাঁড়াই একদিন রাস্তায়। কোনো সংঘাত না, কোনো উসকানি না, দাঁড়িয়ে জাস্ট বলি : আমাদের সন্তানদের উপর হামলার বিচার চাই। এটাও যদি না পারি একটা অন্তত বিবৃতি দেই।
Discussion about this post