সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে চলমান ছাত্র আন্দোলন ঘিরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গতকালও ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে হামলা-পাল্টা হামলা ও এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। দিনভর এসব সংঘর্ষে পুলিশবক্সে আগুন, আওয়ামী লীগ অফিসে অগ্নিসংযোগ, আবাসিক হলে হামলা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে ছয়জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় দুজন, চট্টগ্রামে তিনজন ও রংপুরে একজন রয়েছেন। সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দুটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় পরপর সাতটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। দুপুরের পর ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে আরও কয়েক শ মানুষ আহত হয়েছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের এসব সংঘর্ষ ঘটে। সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০৫ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পাঁচ জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
ঢাকার প্রবেশপথগুলোর সড়ক অবরোধ করে রাখেন কোটা আন্দোলনকারীরা। মহাসড়কগুলোকে ব্যারিকেড দিলে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিমানযাত্রীরা এদিন সময়মতো বিমানবন্দরে পৌঁছাতে পারেননি। যে কারণে বেশ কিছু ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, সায়েন্সল্যাব, চানখাঁরপুল, মহাখালী ও মিরপুরে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ ছাড়া নাবিস্কো মোড়, ফার্মগেট, উত্তরার জসীমউদ্দীন মোড়, জমজম টাওয়ার মোড়, কুড়িল বিশ্বরোড, ভাটারার যমুনা ফিউচার পার্কের সামনের রোড, নতুন বাজার মোড়, মেরুল বাড্ডা, বনানী, গাবতলী, মিরপুর-১০, মিরপুর-১৪, মাটিকাটা মোড়, ধানমন্ডি ২৭ নম্বর, মোহাম্মদপুর, শান্তিনগর, মতিঝিল, শনিরআখড়াসহ বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। কলকাতা থেকে ছেড়ে আসা মৈত্রী এক্সপ্রেস গাজীপুরে আটকে দেওয়া হয়। এ ছাড়া মহাখালীতেও আরেকটি ট্রেন আটকে দেওয়া হয়।
বিকালে ঢাকা কলেজের সামনে একদল লোক এক যুবককে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। রক্তাক্ত অবস্থায় বিকাল সোয়া ৫টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সিআইডি ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে জানা গেছে, ২৫ বছর বয়সি ওই যুবকের নাম সবুজ আলী। তিনি নীলফামারী সদর উপজেলার বাদশা মিয়া ও সূর্যবানু দম্পতির ছেলে।
সন্ধ্যায় একজনের লাশ সিটি কলেজের সামনে থেকে উদ্ধার করা হয়। তার নাম মো. শাহজাহান (২৫)। কামরাঙ্গীর চর চান মসজিদ এলাকায় তার বাসা। তিনি নিউমার্কেট এলাকায় পাপোশ বিক্রি করতেন। দুপুর ১টা ৪৫ মিনিট থেকে সায়েন্সল্যাব এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালসূত্র জানান, বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত হাসপাতালটিতে অন্তত ১০০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। সেখানে কমপক্ষে ১০টি ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে। সন্ধ্যায় সিটি কলেজের সামনে শাহজাহান রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলেন। স্থানীয় কয়েকজন তাকে উদ্ধার করে পপুলার মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে নেন। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া বলেন, ঢাকা সিটি কলেজের সামনে থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে যাকে আনা হয়েছে, কর্তব্যরত চিকিৎসক সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জানান, চাকরিতে সব গ্রেডে কোটা সংস্কার এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। গতকাল সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ছিল নিস্তব্ধ। দুপুর ১টার দিকে ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে অবস্থান নেওয়া শুরু করে। তাদের সবার মাথায় হেলমেট, হাতে রড, বাঁশ, হকিস্টিক, বেসবল স্টিক দেখা যায়। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী এদিন ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ এবং হাতে রড, লাঠিসোঁটা নিয়ে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বাস নিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে বহিরাগতদের ছাত্রলীগের সঙ্গে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হতে দেখা যায়। তাদের সবার হাতেই ছিল লাঠিসোঁটা, রড। বিকাল ৩টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরাও হল এবং অন্যান্য স্থান থেকে জড়ো হতে শুরু করেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। তবে এদিন শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের হওয়ার সময় ছাত্রলীগের নেতাদের দ্বারা বাধা প্রদান করা নিয়ে কোনো সংঘর্ষ দেখা যায়নি। তবে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে কয়েক দফায় ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় ছাত্রলীগের কর্মীদের ককটেল বোমা বিস্ফোরণ করতে দেখা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও অধিভুক্ত সাত কলেজ এবং আশপাশের একাধিক পাবলিক ও প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা দলে দলে যোগ দেন কোট সংস্কারের পক্ষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরাও লাঠিসোঁটা, বাঁশ হাতে শহীদ মিনার এলাকায় দখল নেন। শহীদ মিনার এলাকায় শিক্ষার্থীদের অবস্থান এবং রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের অবস্থানে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সংঘর্ষ এড়াতে পৌনে ৭টার দিকে টিএসসি থেকে শহীদ মিনারে যাওয়ার পথে পরমাণু শক্তি কেন্দ্রের সামনে অবস্থান নেয় পুলিশ বাহিনী। আন্দোলনকারীরা বলেন, সোমবার যখন আমাদের ওপর হামলা হয়েছিল তখন কোথায় ছিল পুলিশ! এবার ছাত্রলীগের হয়ে আমাদের বাধা দিতে পুলিশ এসেছে। এদিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে চানখাঁরপুলে শেখ বোরহান উদ্দিন গ্র্যাজুয়েট কলেজের সামনে ছাত্রলীগের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে আন্দোলনকারীদের। দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক মাত্রায় ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি হয়। বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ হয়। আন্দোলনকারীরা রাস্তায় এবং ছাত্রলীগ বোরহান উদ্দিন কলেজের গলির ভিতরে অবস্হান নেয়। এখানেই তিনজন আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হন। পরে আহতদের ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। ৭টার দিকে চানখাঁরপুল ও ঢাকা মেডিকেল এলাকায় পুলিশ অবস্থান নেয়।
কোটা আন্দোলনে অংশ নিয়ে সারা দেশে মৃত্যুবরণকারী শিক্ষার্থীদের জন্য আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল দিবাগত রাত সোয়া ১২টার পরে আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা এ তথ্য জানান। সমন্বয়কারীরা আরও জানান, মঙ্গলবার হামলায় নিহত শহীদ ভাইদের জন্য বুধবার দুপুর ২টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জেলায় জেলায় গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল পালন করার আহ্বান জানানো হয়। ঢাকা অবস্থানরতদের শিক্ষার্থীদের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সময়মতো চলে আসার আহ্বান জানানো হয়।
রাতে রোকেয়া হলে ছাত্রলীগ নেত্রীরা অবরুদ্ধ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে ছাত্রলীগের নেত্রীদের কক্ষ অবরুদ্ধ করে রাখেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। গতকাল রাত ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। হলের এক শিক্ষার্থী জানান, ছাত্রলীগের নেত্রীদের অবরুদ্ধ করে নাজেহাল করা হয়। পরে তারা প্রভোস্টের বাংলোতে আশ্রয় নিতে যান। প্রক্টরিয়াল টিম নয়জনকে উদ্ধার করেন।
চট্টগ্রাম : সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে চট্টগ্রাম নগরীতে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০০ জন। নিহতরা হলেন চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক ওয়াসিম আকরাম, এমইএস কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ শান্ত এবং পথচারী মো. ফারুক। মঙ্গলবার রাত ৮টা পর্যন্ত নগরীর মুরাদপুর, ষোলশহর এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে।
বিজিবি-৮ অধিনায়ক লে. কর্নেল শাহেদ মিনহাজ সিদ্দিকী বলেন, ‘চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিন প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে বিজিবি।’ গতকাল রাতে সিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার কাজী তারেক আজিজ বলেন, ‘সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত তিনজন নিহত হয়েছেন। বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। সংঘাতপূর্ণ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দীন বলেন, চট্টগ্রামে কোটা আন্দোলনের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪০ জন। আহতরা ২৮ ও ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নিহতদের মধ্যে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। আহতদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন আরও দুজন।
জানা যায়, সোমবার দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলার প্রতিবাদে গতকাল ষোলশহর স্টেশন এলাকায় কর্মসূচি দিয়েছিলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগেই দুপুর থেকে চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহর রেলস্টেশন এলাকায় অবস্থান নিতে থাকেন ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। বিকাল ৩টার আগে শিক্ষার্থীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে যোগ দিতে শুরু করেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ষোলশহর রেলস্টেশন, ২ নম্বর গেট এলাকা। পরে এ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে আশপাশ এলাকায় ও অলিগলিতে। শুরুতে লাঠিসোঁটা নিয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। একপর্যায়ে গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ শুরু হয়। সংঘর্ষে কয়েকজনকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন। পরে তারা জড়ো হয়ে ইটপাটকেল মারতে শুরু করেন। এভাবে কয়েক ঘণ্টা চলতে থাকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত চলা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০০ জন।
রংপুর : রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ-ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষের সময় পুলিশের রাবার বুলেটে বিশ্ববিদালয়ের কোটা আন্দোলনকারীদের অন্যতম সমন্বয়ক ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহত হয়েছেন। তিনি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বামনপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে। মঙ্গলবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ, সাংবাদিক, শিক্ষার্থীসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।
এ ঘটনার পরপরই উত্তাল হয়ে ওঠে বেরোবি ক্যাম্পাসসহ পুরো নগরী। বিকালে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনে হামলা চালায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ভিসির বাসভবনের নিচতলায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে এবং প্রোভিসির একটি গাড়িতে অগ্নি সংযোগ এবং ৬-৭টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। রাত ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভিসিসহ সংশ্লিষ্টরা অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী। এদিকে বিকালে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা নিহতের লাশ নিয়ে মিছিল করতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেন। নগরীর পুলিশ লাইন্স মোড় থেকে মেডিকেল পর্যন্ত কড়া নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। বেরোবি ক্যাম্পাসসহ পুরো নগরীতে থমথমে ভাব বিরাজ করছে।
এদিকে সন্ধ্যার পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান। তিনি বলেন, ৪ প্লাটুন বিজিবি বিশ্ববিদ্যায় এলাকায় রয়েছে। নগরীতে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থায় আছে।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন বলেন, কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যোগ দেন। তারা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। অনেক পুলিশ সদস্য এতে আহত হয়েছেন। একজন মারা গেছে বলে শুনেছি তিনি কীভাবে মারা গেছেন তা বলতে পারছি না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশপাশি বিজিবি কাজ করছেন।
জবির চার শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে চার শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এই খবরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়। গতকাল বিকালে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে’ পুরান ঢাকার বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিলটি রায়সাহেব বাজার মোড়ে গেলে এ ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থীরা হলেন- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের নাছিম, মার্কেটিং বিভাগের অনিক, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অন্তু ও ইতিহাস বিভাগের ফেরদৌস।
গুলিবিদ্ধ চার শিক্ষার্থীকে প্রাথমিকভাবে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, স্থানীয় যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আমাদের ওপর অতর্কিতভাবে গুলি করে। তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের চার শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। আমরা তাদের ওপরে কোনো আক্রমণ করি নাই, তারাই আমাদের ওপর আগে আক্রমণ করেছে।
বিক্ষোভ মিছিলে কবি নজরুল কলেজ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরাও যোগ দেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে লাঠিসোঁটা, স্ট্যাম্প, রড, ইটপাটকেল ও স্টিলের পাইপ নিয়ে স্লোগান দিতে দেখা যায়।
সংঘর্ষের পর উত্তপ্ত জাহাঙ্গীরনগর : চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গতকাল সারাদিন জাবি শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি গণ বিশ্ববিদ্যালয়, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি, বিপিএটিসি স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ সাভারের বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের লাঠিসোঁটা হাতে ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে দেখা গেছে। এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ধাওয়া খেয়ে গত সোমবার রাত থেকে শাখা ছাত্রলীগের নেতারা ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করছেন। তবে সাভার, পল্লী বিদ্যুৎ, আমবাগান, জামসিং এলাকায় স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের অবস্থান করতে দেখা গেছে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী সবাই আতঙ্কে রয়েছেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার, কোটা সংস্কারের দাবি এবং ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। এর আগে, বেলা ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রধান ফটকে অবস্থান নেয় তারা। অবরোধে প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে।
আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনায় ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়েছে। দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমানকে সভাপতি করে গঠিত এ কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক মো. শাহেদুর রশিদ ও উম্মে সায়কা, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. আনোয়ার খসরু পারভেজ। কমিটিতে সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (সাধারণ প্রশাসন) মাহতাব-উজ-জাহিদ। এর আগে, সিন্ডিকেট সভাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। এ সময় শিক্ষকরা ১৫ জুলাই রাতে ছাত্রলীগের হামলাকে জাবির ইতিহাসে ‘কালোরাত’ আখ্যায়িত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি জানান।
এ ছাড়া ছাত্রলীগ নেতারা ক্যাম্পাস ছাড়া হওয়ার পর নেতা-কর্মীদের মধ্যে সাংগঠনিক পদ থেকে পদত্যাগের হিড়িক শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত পদধারী নেতাসহ অর্ধ-শতাধিক কর্মী তাদের ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। স্ট্যাটাসে নেতা-কর্মীরা কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর হওয়া হামলার প্রতিবাদও জানিয়েছেন।
রাবিতে অগ্নি-সংযোগ, ভাঙচুর : রাবি প্রতিনিধি জানান, কোটা সংস্কার ও আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে উত্তাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। হলের তালা ভেঙে আন্দোলন নামেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে বঙ্গবন্ধু হলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, বেলা ৩টার দিকে কোটা সংস্কারের দাবি ও ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। প্রধান ফটক দিয়ে বিক্ষোভ নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেন আন্দোলনকারীরা। পরে প্যারিস রোডে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। মাথায় হেলমেট ও মুখে কাপড় বাধা কিছু লোক বঙ্গবন্ধু হল গেটের তালা ভেঙে ঢুকে ৮-১০টি বাইকে আগুন দেয়। এ সময় ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কক্ষ ভাঙচুর করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কক্ষে পিস্তলসহ দেশি অস্ত্র পাওয়ার পর এসব অগ্নিসংযোগ করেন বিক্ষুব্ধ একাংশ।
হলের ছাদে ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানসহ বেশকিছু নেতা-কর্মীকে অবস্থান নিতে দেখা যায়। বিক্ষোভ নিয়ে প্যারিসে অবস্থান করছেন শিক্ষকরা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নৃশংস হামলার প্রতিবাদ করছি। ঢাকায়, কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ সারা দেশে আমার ভাইবোনকে কেন রক্তাক্ত করা জবাব চাই। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলাম। তাহলে বাধা কেন? রক্ত কেন? এর আগে, দুপুর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ। ক্যাম্পাসে বাইক নিয়ে শোডাউনও দেন নেতা-কর্মীরা। এদিকে বেশ কিছু হলে তালা দিয়ে আন্দোলনে আসতে শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ তোলেন শিক্ষার্থীরা। পরে তালা ভেঙে আন্দোলনে নামে আন্দোলনকারীরা।
উত্তাল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : তিন দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় ক্যাম্পাসের বটতলা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’ ম্যুরালের পাদদেশে সমাবেশে মিলিত হয়।
সমাবেশে অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফারহা তানজীম তিতিল শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একাত্মপোষণ করেন। তিনি বলেন, কোটার যৌক্তিক সংস্কার হওয়া দরকার। আমি তোমাদের দাবির সঙ্গে একাত্মপোষণ করছি। গতদিন যে ছাত্রদের ওপর হামলা করা হয়েছে তার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সকল প্রকারের দ্বিধা ছেড়ে সবাইকে একসঙ্গে দাবি আদায়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
এদিকে প্রতিবাদ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। কোটা আন্দোলনকারীরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে তা প্রতিহত করবে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
সংঘর্ষ এড়াতে চবিতে শাটল বন্ধ : সংঘর্ষ এড়াতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের একমাত্র বাহন শাটল ট্রেন বন্ধ রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন। গতকাল সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. অহিদুল আলম। সকাল থেকে চট্টগ্রাম শহর থেকে কোনো শাটল আসেনি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
প্রক্টর জানান, আমরা বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে জানতে পেরেছি শাটল চলাচল করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হতে পারে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সংঘর্ষ এড়াতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেন বন্ধ রাখা হয়েছে। আজকের কর্মসূচির বিষয়ে আমরা আগে থেকে অবগত ছিলাম না। পরে জেনেছি আজকে ষোলশহরে কর্মসূচি আছে। সে জন্য আমরা আজকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য শাটল বন্ধ রেখেছি। স্বাভাবিক মনে হলে আগামীকাল শাটল চলাচল করতে পারে।
সিরাজগঞ্জে সংঘর্ষে আহত ২০, গুলিবিদ্ধ ২ : সিরাজগঞ্জে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ২০ জন আহত হয়েছে। গতকাল শহরের গোসালা, হাসপাতাল রোড, রেলগেট ও ইসলামিয়া কলেজ রোড এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে রাবার বুলেট ও টিয়ার শেলের আঘাতে আন্দোলনকারী ও ইটপাটকেলের আঘাতে ৫ পুলিশ সদস্য অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় জিসান ও সিয়ামকে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ফরিদপুরে ছাত্রলীগের হামলা, আহত ২ : ফরিদপুরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় দুজন আহত হয়েছে। গতকাল শহরের সিভিল সার্জন অফিসের সামনের সড়কে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় দুই শিক্ষার্থীকে বেদমভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করা হয়। আহতরা হলেন- কাজী নিশাত ও নাদিম ইতু।
নরসিংদীতে মহাসড়ক অবরোধ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া : নরসিংদীতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেছেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। মহাসড়কে অগ্নিসংযোগ ও ব্যারিকেড দিয়ে যানচলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টায় মহাসড়কের জেলখানার মোড়ে অবস্থান নিয়ে ঢাকার সঙ্গে সিলেটের যানচলাচল বন্ধ করে দেন।
এর আগে দুপুর সাড়ে ৩টায় আন্দোলনকারীরা শহরের জেলখানার মোড়ে জড়ো হতে শুরু করলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেন। এ সময় তাদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ করে ছাত্রলীগ।
হবিগঞ্জে সড়ক অবরোধ, ছাত্রলীগের হামলা : হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকাল ৩টার দিকে মহাসড়কের নতুন ব্রিজ পয়েন্ট অবরোধ করে তারা। ফলে মহাসড়কের উভয় পাশে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা কোটার বিপক্ষে নানা ধরনের স্লোগান দেয়।
বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ছাত্রদের আন্দোলনে লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এতে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় শিক্ষার্থীরা। পরে সেখানে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের নেতারা গিয়ে বিক্ষোভ করেন।
দিনাজপুরে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষে আহত ১৫ : দিনাজপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। গতকাল বিকাল ৪টায় রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত থেমে থেমে চলে এ সংঘর্ষ। এর আগে বিকাল ৩টার দিকে দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছাত্রলীগের বাধা : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্রতিবাদ সভায় বাধা দিয়েছে জেলা ছাত্রলীগ। এতে আন্দোলনকারীরা সংক্ষিপ্তভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করেন। গতকাল দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
কিশোরগঞ্জে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, আহত ৫ : কিশোরগঞ্জে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা হয়েছে। এতে অন্তত ৫ জন আহত হয়েছেন। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে গুরুদয়াল সরকারি কলেজে এ ঘটনা ঘটে।
পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের ওপর হামলা করেন। পরে উভয় পক্ষে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
ঝিনাইদহে ছাত্রলীগের হামলায় আহত ৫ : ঝিনাইদহে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় অন্তত ৫ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। গতকাল সকালে শহরের উজির আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল থেকে শহরের উজির আলী স্কুল মাঠে জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা। সে সময় শহরের পায়রা চত্বর এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। লাঠি, রড দিয়ে শিক্ষার্থীদের মারধর করে ব্যানার কেড়ে নেয় তারা।
জয়পুরহাটে সড়ক অবরোধ : শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও কোটার যৌক্তিক সমাধানের দাবিতে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছেন জয়পুরহাটের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকালে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনের জয়পুরহাট-বগুড়া সড়ক অবরোধ করেন তারা।
রাজশাহীতে বিজিবি মোতায়েন : কোটাবিরোধী আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজশাহীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট। গতকাল বেলা ৩টা থেকে অবস্থান নিয়ে কোটা সংস্কার ও ঢাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। সকালে রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কের খড়খড়িতে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। নাশকতার আশঙ্কায় রাজশাহীতে ৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন আশপাশের এলাকায় বিজিবি সদস্যরা টহল শুরু করেন। বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, নাশকতার আশঙ্কায় শহরজুড়ে বিজিবি সদস্যরা টহল দেবে। অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি তারা মাঠে কাজ করবেন।
কুষ্টিয়ায় মহাসড়ক অবরোধ : কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর গেটে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এতে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী জাতীয় মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে মিছিল নিয়ে মজমপুর গেটে জড়ো হয়।
আন্দোলনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যোগ দেয়।
অবরোধে অচল খুলনা : শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন খুলনার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। গতকাল খুলনার দৌলতপুর নতুন রাস্তা মোড়, শিববাড়ি মোড়, জিরোপয়েন্ট ও রূপসা ব্রিজ এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। ফলে খুলনা-যশোর, খুলনা-সাতক্ষীরা, খুলনা-বাগেরহাট, খুলনা-ঢাকাসহ বিভিন্ন রুটে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অবরোধে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নর্দান ইউনিভার্সিটি, বিএল কলেজ, হাজী মুহসীন কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। এ সময় তারা কোটা সংস্কারের দাবিতে ‘চেয়েছিলাম অধিকার হয়ে গেলাম রাজাকার’ ‘মেধা না কোটা- কোটা কোটা’ ‘দালালি না রাজপথ-রাজপথ রাজপথ’সহ নানা স্লোগান দিতে থাকেন। এদিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে খুলনা বিশবিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষকরা। গতকাল দুপুরে ক্যাম্পাসের হাদি চত্বরে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। পরে শিক্ষকরা জিরোপয়েন্টে শিক্ষার্থীদের অবরোধ কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন।
বগুড়ায় আওয়ামী লীগ অফিসে আগুন : রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গতকাল বেলা ৩টায় শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে সাতমাথায় এলে ছাত্রলীগের সঙ্গে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় ব্যাপক ভাঙচুর, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ককটেল বিস্ফোরণে সাতমাথা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ অফিস, বগুড়া টাউন ক্লাবে ভাঙচুর, পুলিশ বক্সে ও ৪টি মোটরসাইকেলে আগুন, জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান রনির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খান এন্টারপ্রাইজে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। জানা যায়, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সাতমাথায় সমবেত হলে এ ঘটনার সূত্রপাত।
এ সময় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা শিক্ষার্থীদের ধাওয়ার মুখে পিছু হটে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের সময় অন্তত চারটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে।
এ সময় ইটপাটকেলের আঘাতে এক সাংবাদিক এবং এক শিক্ষার্থী আহত হয়। একপর্যায়ে পুরো সাতমাথা এলাকা শিক্ষার্থীরা দখলে নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। অধিকাংশ আন্দোলনকারীর হাতে লাঠিসোঁটা ছিল। ধাওয়া খেয়ে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের দিকে গেলে আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। সেখান থেকে মুজিব মঞ্চের সামনে এসে তারা তাদের দাবি আদায়ের জন্য বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
পুরো সাতমাথায় লাঠিসোঁটা নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। তাদের অবস্থানের কারণে সাতমাথা এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। সাতমাথাকেন্দ্রিক সব রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয় আশেপাশের দোকানপাট ও মার্কেট। পাশাপাশি সড়কে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। এমনকি রাস্তা বিভাজনে ব্যবহৃত লোহার শিটও তারা ভেঙে ফেলেন। ক্রমেই আন্দোলনকারীদের সহিংসতা বেড়ে যায়।
একই দিন সকালে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। কলেজের মেইন গেটের সামনে সড়ক অবরোধের পর এ ঘটনা ঘটে। এতে চারজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহত শিক্ষার্থীরা হলেন- সরকারি আজিজুল হক কলেজের ফিন্যান্স বিভাগের তাফসির, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সুমন রানা, অর্থনীতি বিভাগের মামুন ও মিলন। পরে আহত চারজনকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ : শাবিপ্রবি প্রতিনিধি জানান, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে সিলেটের বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরাও যোগ দেন।
গতকাল বিকাল ৪টায় সারা দেশে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় পরিস্থিতি সামাল দিতে মূল ফটক আটকে দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা ফটক ভেঙে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করেন। এসময় শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, আমার ভাইকে হত্যা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে।
ঠাকুরগাঁওয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, আহত শতাধিক : ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় শিক্ষার্থী, পুলিশ, সংবাদকর্মীসহ শতাধিক আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৪০ রাউন্ড টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ। গতকাল দুপুরে ঠাকুরগাঁও জেলা স্কুল বড় মাঠ থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে।
শহরের জেলা স্কুল বড় মাঠ থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি শহর চৌরাস্তায় পৌঁছালে ছাত্রলীগের তোপের মুখে পড়ে। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের লাঠির আঘাতে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় বিক্ষোভটি। এ সময় শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
কুমিল্লায় শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর : কুমিল্লার কোটবাড়ীতে শিক্ষার্থীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করলে পুলিশ রাবার বুলেট ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এতে কুমিল্লা জিলা স্কুলের এক শিক্ষার্থী আহত হন। এসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা পুলিশের গাড়ি ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। গতকাল বিকালে কুমিল্লা কোটবাড়ীতে এ ঘটনা ঘটে।
বান্দরবানেও ছাত্রলীগের ধাওয়া : বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, পার্বত্য জেলা বান্দরবানেও মানববন্ধন করেছেন কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী স্থানীয় শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকালে জেলা সদরের প্রেস ক্লাব চত্বরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্লেকার্ড হাতে নিয়ে কোটা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করেন। তবে শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়ে ধাওয়া শুরু করে জেলা ছাত্রলীগের সদস্যরা। পুলিশি বাধায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পিছু হটলেও বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এর পরপরই জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় চত্বরের সামনে সমাবেশ করে জেলা ছাত্রলীগের সদস্যরা।
শেকৃবিতে মুখোমুখি ছাত্রলীগ-আন্দোলনকারী : শেকৃবি প্রতিনিধি জানান, রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল দিনভর মুখোমুখি অবস্থান করছে ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারীরা। সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীদের মিছিলের পর থেকেই মারমুখী হয়ে পড়েন শেকৃবি ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতা-কর্মীরা। মাথায় হেলমেট ও রড হাতে শোডাউন দিতে থাকেন তারা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সময়ের সাবেক নেতা-কর্মী, ছাত্রলীগ থেকে হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা এবং কেআইবির বিভিন্ন নেতা-কর্মীকেও দেখা যায়। একই সময়ে প্রস্তুত ছিলেন আন্দোলনকারীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের লুৎফর হলে লাঠি ইট নিয়ে প্রতিরোধে প্রস্তুত ছিলেন তারা।
রাসিক মেয়রের গাড়িতে যুবকের হামলা, আটক : রাজশাহী থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের গাড়িতে হামলার সময় কোটা আন্দোলনের কর্মীকে আটক করেছে তার নিরাপত্তাকর্মীরা। পরে ওই যুবককে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। সন্ধ্যা ৬টার দিকে নগরীর নাইস হোটেলের সামনের রাস্তায় এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই পথ দিয়ে দলীয় কার্যালয়ের দিকে আসছিলেন মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। হঠাৎ করেই চাইনিজ কুড়াল নিয়ে তার গাড়িতে হামলা চালান ওই যুবক।
হামলার প্রতিবাদে গোপালগঞ্জে বিক্ষোভ : গতকাল বিকালে গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করছে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এবং অন্য গেটে গোপালগঞ্জ সদর থানার পুলিশ সদস্যদের অবস্থান নিতে দেখা যায়। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সামনে দিয়ে তারা গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া সড়কের অবস্থান নেয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের অনুরোধে তারা সড়ক ছেড়ে ক্যাম্পাসের মধ্যে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করতে থাকে।
খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ : কোটাবিরোধীদের আন্দোলনে হামলার ঘটনার প্রতিবাদে ও কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ হয়েছে। গতকাল শহরের চেঙ্গী স্কোয়ার থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মুক্তমঞ্চে প্রতিবাদ সমাবেশ করে।
Discussion about this post