বিশেষ প্রতিনিধি:- ধর্মের নাম ব্যবহার করে সরকারি জলাশয় দখল, নিরীহ জেলেদের তাড়িয়ে দেওয়া, সাংবাদিককে মারধর, আর প্রশাসনের নিরবতা—এ যেন নেত্রকোনার গন্ডাবেড় এলাকায় এক নিষ্ঠুর বাস্তবতা। দূর্গাপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী এই জনপদে আজ আইন নেই, মানবতা নেই, নেই রাষ্ট্রের উপস্থিতিও। এখানে আছে শুধু এক প্রভাবশালী চক্রের দম্ভ, ধর্মের অপব্যবহার, আর প্রশাসনের চরম নিষ্ক্রিয়তা। প্রাপ্ত অভিযোগ ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, “ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান” নামের আড়ালে স্থানীয় কয়েকজন নেতৃত্ব দিচ্ছেন একটি সংঘবদ্ধ চক্রকে। সরকারি কোনো বৈধ লিজ না থাকা সত্ত্বেও তারা নদী দখল করে বসেছেন। তাদের লোকজন সরকারি কার্ডধারী জেলেদের নদীতে মাছ ধরতে দিচ্ছেন না। বাধা দিলে মারধর, হুমকি এবং গায়ের জোরেই উচ্ছেদ করে দেওয়া হচ্ছে। একজন সাংবাদিক এই চিত্র তুলে ধরতে গেলে হামলার শিকার হন তাঁর পরিবার। অথচ পুলিশ তাদেরই সরিয়ে দেয় রাতারাতি—অভিযুক্তদের নয়। থানা, ইউএনও অফিস, এমনকি উপজেলা মৎস্য অফিস—সবই জানে, কিন্তু কেউ কিছুই করেনি। ‘প্রশাসন যেন চক্রের পেছনে’: জেলেদের আকুতি ভুক্তভোগী জেলেরা বলেন, “আমরা সরকারের কার্ডধারী। নদী আমাদের জীবিকা। এখন এই চক্র আমাদের নদী দখল করে বলছে, এটা নাকি ধর্মীয় জায়গা! ধর্ম কি মানুষকে রুটি কেড়ে নিতে শেখায়? স্থানীয়দের মতে, চক্রটি ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নিজেদের অপরাধকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছে। এর পেছনে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাবও রয়েছে বলে অনেকের সন্দেহ। ‘প্রতিবাদ মানেই শত্রুতা’: সাংবাদিক নির্যাতনের ভয়াবহতা,যে সাংবাদিক ঘটনার সত্যতা তুলে ধরতে চেয়েছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে শুরু হয় ভয়ংকর আক্রমণ। তাঁর পরিবারের ওপর চলে সন্ত্রাসী হামলা। তিনি বলেন, “একটা কণ্ঠ তুলে ধরা মানেই আজ শত্রু হয়ে যাওয়া। প্রশাসন তো দেখেও না দেখার ভান করে!” মানবাধিকার, আইনের শাসন—সব মুখ থুবড়ে পড়েছে। গন্ডাবেড় যেন রাষ্ট্রের অচেনা ভূখণ্ড। এখানে প্রশাসনের ব্যর্থতা স্পষ্ট। নেই কোনো তদন্ত, নেই বিচার। বরং, অপরাধীরা বুক ফুলিয়ে ঘুরছে, আর ভুক্তভোগীরা বাঁচার পথ খুঁজছে। সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ চাই’: নাগরিকদের শেষ ভরসা। চরম অসহায়তায় ভুক্তভোগীরা এখন সেনাবাহিনীর দিকে চেয়ে আছেন। তাঁরা দাবি করেছেন— ১. নদী ফিরিয়ে দেওয়া হোক জেলেদের হাতে। ২. কথিত ধর্মীয় চক্র ও তাদের নেতার বিরুদ্ধে সামরিক তত্ত্বাবধানে তদন্ত হোক। ৩. প্রশাসনের নিষ্ক্রিয় কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হোক। ৪. সাংবাদিক নির্যাতনের বিচার হোক। ৫. এলাকায় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে আইনের শাসন ফিরিয়ে আনা হোক। নেত্রকোনার গন্ডাবেড় যেন আজ এক শোষণের প্রতীক। এ যেন এক অঘোষিত শাসনের রাজত্ব, যেখানে রাষ্ট্রের চোখ বন্ধ, আর জনগণ নিঃস্ব। এই অমানবিক অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য, এখন প্রয়োজন, কেন্দ্রীয় শক্তির দ্রুত কার্যকর হস্তক্ষেপ।
Discussion about this post