কাঁচামরিচের দাম নিয়ে এক প্রকার স্বেচ্ছাচারিতা চলছে। সরবরাহ ঠিক থাকলেও বন্যার অজুহাতে হুহু করে বাড়ানো হয়েছে দাম। ঢাকার খুচরা বাজারে একদিন আগে প্রতিকেজি সর্বোচ্চ ৪০০ টাকায় বিক্রি হলেও রোববার বাজারভেদে বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকায়। তবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই একই পণ্য সর্বোচ্চ ৬০০ টাকায় বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। এতে কাঁচামরিচের ঝালে দিশেহারা সাধারণ ভোক্তা।
রোববার রাজধানীর কাওরান বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি কাঁচামরিচ ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই একই পণ্য রামপুরা কাঁচাবাজারে প্রতিকেজি ২৮০-৩০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। পাশাপাশি নয়াবাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৫০-২৮০ টাকায়। যা একদিন আগেও ৩৬০-৪০০ টাকায় বিক্রি হয়।
কাওরান বাজারের সবজি বিক্রেতা আলী হোসেন বলেন, চলতি বছর এপ্রিল, মে ও জুন মাসে প্রচণ্ড খরা ও গরমে মরিচগাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এতে ফলনও কমেছে। অন্যদিকে ভারি বর্ষণে বিভিন্ন জেলা থেকে কাঁচা পণ্যের সরবরাহ কমেছে। ভারত থেকে যে কাঁচামরিচ আমদানি হচ্ছে, তার দাম অনেক বেশি। এসব কারণে বাজারে মরিচের দাম ক্রমে বাড়ছে। তবে রোববার সরবরাহ বাড়ায় দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। সরবরাহ আরও বাড়লে দাম আরও কমবে।
তবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন চিত্র। বরিশাল ব্যুরো জানায়, বরিশালের খুচরা বাজারে একদিনের ব্যবধানে প্রতিকেজি কাঁচামরিচের দাম বেড়েছে ৩০০ টাকা। রোববার খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায়। খুচরা বাজারে শুক্রবার এই মরিচ ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ফলে সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে কাঁচামরিচ।
বরিশাল নগরীর কাঁচা পণ্যের একমাত্র বৃহৎ পাইকারি বাজার বহুমুখী সিটি মার্কেটে বৃহস্পতিবার প্রতিকেজি মরিচের দাম ছিল ১৫০-১৮০ টাকা। শনিবার পাইকারি দাম ছিল ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা এবং রোববার পাইকারিতে বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। কিন্তু একইদিন খুচরা বাজারে একই মরিচ ৬০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
নগরীর বটতলা বাজারের ক্রেতা রাজিব আহমেদ বলেন, রোববার সকালে বাজারে গিয়ে দেখি কাঁচামরিচের কেজি ৬০০ টাকা। যা শুক্রবারও অর্ধেক দামে বিক্রি হয়। একদিনের ব্যবধানে কীভাবে এমন দাম বাড়ল বুঝতে পারছি না। তাই বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী পদক্ষেপের দাবি করেন তিনি।
সিটি মার্কেটের পাইকারি সবজি বিক্রেতা হেমায়েত উদ্দিন খান বাবুল বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে স্থানীয় চাষিদের মরিচ নষ্ট হয়েছে। এতে বাজারে চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। এছাড়া শুক্র ও শনিবার ভারত থেকে আমদানি বন্ধ থাকায় এই সংকট আরও বেড়েছে। তবে দু-একদিনের মধ্যে দাম কমে যেতে পারে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক অপূর্ব অধিকারী বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর অভিযান শুরু হবে।
আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি জানান, আগৈলঝাড়ায় প্রতিকেজি কাঁচামরিচ খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা। এ কারণে অনেকে কাঁচামরিচ কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন। উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিকেজি কাঁচামরিচ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাশাইল বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী শহিদ শিকদার বলেন, এখন প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়ছে। যে কাঁচামরিচ দুদিন আগে কেজি ছিল ১৮০ টাকা, তা বর্তমানে ৩৫০-৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মেহেরপুর প্রতিনিধি জানান, কৃষিনির্ভর মেহেরপুরে কাঁচামরিচের পর্যাপ্ত ফলন হলেও দাম কমছে না। ক্রেতারা বলছেন, চাহিদার তুলনায় আমদানি কম হওয়ার কারণ জানিয়ে মুনাফালোভীরা কাঁচামরিচের দাম বাড়াচ্ছে। কৃষককে ২০ কেজি ধান বিক্রি করে এক কেজি কাঁচামরিচ কিনতে হচ্ছে। রোববার দুপুরে জেলা শহরের পাইকারি কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকায়। স্থানীয় জাতের মরিচ ৪০০ টাকা ও জিয়া মরিচ ৫০০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বিক্রেতারা জানান, আড়তে প্রতিকেজি ৩৬০ টাকায় বিক্রি হলেও খুচরা বিক্রেতারা ৫০০ টাকায় বিক্রি করছেন।
Discussion about this post