স্টাফ রিপোর্টার, টঙ্গী :: গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীতে চাঞ্চল্যকর দুই সহোদর ভাই-বোনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় টঙ্গী পূর্ব থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় পুলিশ শিশুদের মাকে গ্রেফতার করেছে। মায়ের বাঁ হাতের আঙুল কাটা থাকায় সন্দেহজনকভাবে তাকে গ্রেফতার করেন বলে পুলিশ জানায়। এখনও প্রকৃত ঘটনার ক্লু উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। গতকাল শনিবার টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশ এসব তথ্য জানায়।
নিহত শিশু আব্দুল্লাহ (৩) ও মালিহা (৬) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর থানার তাতুয়াকান্দি গ্রামের আব্দুল বাতেনের সন্তান। তারা সপরিবারে পূর্ব আরিচপুর এলাকার জনৈক সানোয়ারের ৮ তলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছিলেন।
পুলিশ জানায়, শুক্রবার বিকেল পৌনে ৩টা থেকে পৌনে ৫টার মধ্যে অজ্ঞাতপরিচয় দুর্বৃত্তরা ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে শিশু দুটিকে হত্যা করে চলে যায়। এই ঘটনায় বাবার দায়েরকৃত হত্যা মামলায় মা ও অজ্ঞাতপরিচয় আসামি উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা হয়। এই মামলায় নিহত শিশুদের মাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তবে এই ঘটনা কে বা কারা কেন ঘটিয়েছে, তা এখনও জানা যায়নি।
ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহসহ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় এবং পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য-প্রমাণ, উপস্থিত স্থানীয় লোকজনের তথ্যের ভিত্তিতে বাদীর স্ত্রী আলেয়া বেগমকে (৩০) সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বাদীর স্ত্রী আলেয়া বেগম (৩০) এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছেন। তবে হত্যাকাণ্ডের কারণ উদঘাটনে আরো গভীর তদন্তের প্রয়োজন। এ ছাড়া আরো বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই অব্যাহত রয়েছে।
জানা যায়, মামলার বাদী তার স্ত্রী আলেয়া বেগম (৩০), বড় মেয়ে বর্ষা আক্তার ফাতেমা (৯), ছোট মেয়ে মালিহা আক্তার (৬) ও এক ছেলে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমরদের (৩) নিয়ে টঙ্গীতে ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছেন। গত শুক্রবার দুপুর আনুমানিক ২টা ৪০ মিনিটে বাদী গাড়ির কাজের জন্য বাসা থেকে বের হয়ে টঙ্গী পূর্ব থানাধীন সাহারা মার্কেট এলাকায় চলে যান। বাদী বাইরে যাওয়ার পরপরই তার বড় মেয়ে বর্ষা আক্তার ফাতেমা (৯) বাসা থেকে বের হয়ে বড় চাচার বাসায় যায়। তখন বাদীর স্ত্রী আলেয়া বেগম ও ছোট মেয়ে মালিহা আক্তার ও ছেলে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর বাসায় ছিল।
মামলার বাদী আব্দুল বাতেন বলেন, আমার স্ত্রীর একটু সমস্যা ছিল। তার চিকিৎসাও চলছিল। আমার স্ত্রী খারাপ না। কারা আমার দুই সন্তানকে হত্যা করল, আমি তাদের বিচার চাই।
শিশুদের নানা আরফান মিয়া ও নানি শিল্পী বেগম বলেন, তাদের মেয়ের জামাই আব্দুল বাতেন দুই বছর পূর্বে বিদেশ থেকে দেশে আসে। তার আগ থেকেই মেয়ের মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। পরে তার স্বামী বিদেশ থেকে এসে চিকিৎসা করালে ভালো হয়ে যায়। আলেয়ার সমস্যা দেখা দিলে সে কখনো ভাঙচুর কিংবা উগ্র আচরণ করত না। তবে স্বামীর ঘরে থাকলে বাবার বাড়ি চলে আসত আর বাবার বাড়ি থাকলে স্বামীর বাড়ি চলে যেত।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ জিএমপির অপরাধ দক্ষিণ বিভাগের উপকমিশনার এন এম নাসিরুদ্দিন বলেন, শিশুটির মায়ের বাঁ হাতের আঙুল কাটা। সন্দেহজনকভাবে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তবে কে বা কারা কী কারণে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তা জানতে আরো সময় লাগবে।
Discussion about this post