শেখ মামুনুর রশীদ মামুন, নেত্রকোণা :- সরকারের ‘৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন’ প্রকল্পে ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কোটি কোটি টাকার এই প্রকল্পে আল্লাহর ঘর—পবিত্র মসজিদ—নির্মাণেও চলছে নির্লজ্জ লুটপাট ও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলায় বাস্তবায়িত একটি মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পের চিত্রই যেন এই দুর্নীতির প্রতীক। নির্মাণাধীন ভবনের দেয়ালে ফাটল, কাঠামোয় দুর্বলতা, কাজের মানে চরম গাফিলতি—সব মিলিয়ে আল্লাহর ঘর পরিণত হয়েছে দুর্নীতির ঘরে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জন্য ‘টাইপ-বি’ ক্যাটাগরির আওতায় নির্মিত এই মসজিদের নির্মাণকাজে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের সামগ্রী, যা নির্মাণ শেষ হবার আগেই ফাটল ও ভাঙনের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। শুধু ভবনের মূল কাঠামো নয়—সিভিল, স্যানিটারি ও ইলেকট্রিক কাজ, বাউন্ডারি ওয়াল, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, কম্পাউন্ড ড্রেন, গভীর নলকূপ, ভূগর্ভস্থ পানির রিজার্ভার (UGWR) ও পাম্প হাউজ—সব কিছুতেই রয়েছে চরম অনিয়ম। কারিগরি গাফিলতিতে ভবনের প্রাণ গেল,স্থানীয়দের অভিযোগ,নির্মাণ কাজে একের পর এক কারিগরি দুর্নীতি ধরা পড়েছে। যেখানে ২৪ ইঞ্চি লিফট থাকার কথা,সেখানে দেওয়া হয়েছে মাত্র ১০ ইঞ্চি। সন্ধ্যার পর বাইন্ডিং তার (বাইবেটার) ছাড়াই কলম ঢালাই হয়েছে, যা নির্মাণ নিরাপত্তার চরম লঙ্ঘন।পুরো রেলিং বাইবেটার ছাড়া নির্মাণ করা হয়েছে, ফলে ফাঁকা জায়গা গুলোতে শুধু বালু দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। পুরো ব্লকে টেম্পার ছাড়া ঢালাই হয়েছে, যার ফলে দেয়ালের প্লাস্টার হাতেই খসে পড়ছে। সবচেয়ে উদ্বেগ জনক তথ্য হলো—এই কাজ চলাকালীন সময়ে গণপূর্ত বিভাগের কোনো প্রকৌশলী সাইট পরিদর্শনে যাননি! এমনকি ফোনে খোঁজ নেওয়ারও সময় পাননি। প্রশ্ন উঠে—তবে কাদের দায়িত্বে এই কোটি টাকার কাজ? ১৩ কোটি টাকার প্রকল্পে ১২ কোটির কাজ—বাকি অর্থ গেল কোথায়? প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ১৩ কোটি ৮৮ লাখ ২৪ হাজার ৬৯৭ টাকা হলেও কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে ১২ কোটি ৮৮ লাখ ৬৬ হাজার ৭৮৩ টাকায়। প্রায় ১ কোটি টাকার পার্থক্য নিয়ে স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলেছেন—এই টাকা গেল কোথায়? তাদের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাসেত প্রকৌশলী লিমিটেড এবং গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ আঁতাতের কারণেই এমন অনিয়ম সম্ভব হয়েছে। কথিত এক প্রকৌশলী মদদ দিয়েছেন এই পুরো দুর্নীতির ছককে।
স্থানীয়রা আরও জানান, ভবনের একাধিক স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। এমনকি কিছু অংশে এতটাই দুর্বল নির্মাণ হয়েছে যে হাতের সামান্য চাপেই প্লাস্টার খুলে পড়ছে। ব্যবহৃত টাইলস ও ইলেকট্রিক সামগ্রীর মানও অত্যন্ত নিচু। সিন্ডিকেটের রাজত্ব—দুর্নীতির আগুন ছড়িয়ে পড়েছে জেলা জুড়ে। এই ঘটনা শুধু পূর্বধলার নয়। জেলার অন্যান্য উপজেলা কলমাকান্দা, আটপাড়া সহ সব গুলো উপজেলার মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পে একই ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা বলছেন, গণপূর্ত বিভাগ ও ঠিকাদারদের মাঝে এক অঘোষিত সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, যারা আল্লাহর ঘর নিয়েও ব্যবসা করছে। ধর্মীয় স্থাপনার মতো পবিত্র প্রকল্পেও যে লুটপাট চলে, তা ভেবে শিউরে উঠছেন সচেতন মহল। “আর নয়—এবার হিসাব চাই!” সচেতন মহল বলছে—“ধর্ম ও জাতির শত্রুরা যারা ধর্মীয় স্থাপনার নামে অর্থ আত্মসাৎ করছে, তাদের কোনো ভাবে ছাড় দেওয়া যাবে না। এদের দ্রুত আইনের আওতায় না আনা হলে আন্দোলনের মাধ্যমে জবাবদিহি আদায় করে নিতে হবে।” এ বিষয়ে নেত্রকোণা গণপূর্ত বিভাগের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের কাছ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
Discussion about this post