শেখ মামুনুর রশীদ মামুন:- ময়মনসিংহ নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত জয়নাল আবেদীন পার্ক—যেখানে প্রতিদিন হাজারো মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসে, সেখানে যদি প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি চলে, তাও আবার পুলিশের নাম ভাঙিয়ে—তবে সেটি নিঃসন্দেহে আমাদের আইনশৃঙ্খলার চরম ব্যর্থতার প্রমাণ। সাম্প্রতিক সময়ে কোতোয়ালি মডেল থানাধীন ২নং ফাঁড়ির ইনচার্জ সাজেদ কামালের নামে প্রতিদিন পার্কের অস্থায়ী দোকানদারদের কাছ থেকে অর্থ তোলার যে অভিযোগ উঠেছে, তা সত্যি হলে বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং লজ্জাজনক। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট দিনের পর দিন চলে আসছে এবং এর ফলে পার্কের পরিবেশ যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়েছে। প্রশ্ন জাগে—এই অপকর্মে কারা জড়িত? কে বা কারা এতটা সাহস পাচ্ছে যে, পুলিশের নাম ব্যবহার করে খোদ পর্যটন এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করতে পারে? যদি সত্যি কোনো পুলিশ কর্মকর্তা এতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকে, তবে সেটা শুধু অনৈতিকই নয়, রাষ্ট্রবিরোধীও বটে। সচেতন মহল rightly প্রশ্ন তুলেছেন—এমন স্পর্শকাতর জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি চলতে পারলো কীভাবে? স্থানীয় প্রশাসন, পর্যটন কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ বিভাগ—সবাই নীরব দর্শক কেন? ফেসবুক সহ সামাজিক মাধ্যমে ইতোমধ্যে এই অভিযোগ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। মানুষ জানতে চায়, কেন এই অন্যায়ের বিচার হচ্ছে না? কেন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? এই মুহূর্তে প্রয়োজন একটি নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও নির্ভীক তদন্ত। যদি সত্যিই পুলিশের কেউ এতে জড়িত থাকে, তবে তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। কারণ অপরাধী, সে যে পরিচয়েরই হোক না কেন—শাস্তি তার প্রাপ্য। বরং যদি আইন রক্ষাকারী কোনো সদস্য অপরাধ করে, তাহলে তার শাস্তি হওয়া উচিত দ্বিগুণ। আমরা, সাংবাদিক সমাজ, দেশপ্রেমিক নাগরিক ও সমাজের সকল সচেতন মানুষ প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাই: ১. জয়নাল আবেদীন পার্কে চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত সকল ব্যক্তিকে অবিলম্বে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হোক। ২. পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করে অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। ৩. পর্যটন এলাকা হিসেবে এই পার্কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিসি ক্যামেরা ও কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা করা হোক। ৪. প্রশাসনের নীরবতা বন্ধ হোক এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হোক। এমন অপরাধ আর দায়িত্বহীনতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে এখনই। আমাদের কণ্ঠস্বরই হোক পরিবর্তনের হাতিয়ার। সচেতনতার এখনই সময়। প্রতিবাদের এখনই মুহূর্ত। নাহলে চাঁদাবাজি, দুর্নীতি আর অনৈতিকতার কাছে হেরে যাবে দেশের ভবিষ্যৎ।
Discussion about this post