কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি :- গাজীপুরের কাপাসিয়ার তরগাঁও ইউনিয়নের বাঘিয়া গ্রামে এক পুলিশ সদস্য প্রতিবেশি সাবেক সেনা সদস্যের জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। কাপাসিয়া থানায় এ বিষয়ে অভিযোগ করতে গেলে তার অভিযোগ নেয় নি বলে দাবি করে এ বিষয়ে সুবিচার চেয়ে ওই সেনা সদস্য গত ২৮ মার্চ পুলিশ মহা পরিদর্শক বরাবরে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। পে তিনি গত মঙ্গলবার গাজীপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ নং আদালতে একটি মামলা করলে ডিবি পুলিশকে এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। লিখিত অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার তরগাঁও ইউনিয়নের বাঘিয়া গ্রামের মৃত হাছেন আলীর ছেলে পুলিশের নায়েক মোঃ মনির হোসেন (৪০) বর্তমানে প্রেষণে পুলিশ হেডকোয়াটার ঢাকায় ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি তার কর্মস্থলের দাপট খাটিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল ও সন্ত্রাসীদের সহযোগিতায় গত মার্চ মাসের ২৫ তারিখে তার বাড়ির পাশে অবসরপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর সার্জেন মোঃ মতিউর রহমানের ৩৫ শতাংশ জমির প্রায় তিন লাখ টাকা মূল্যের গাছপালা কেটে দখল করে নিয়েছেন। খবর পেয়ে তিনি ও তার স্বজনরা বাধা দিতে গেলে মনির হোসেন বলেন, বর্তমানে তিনি পুলিশ হেডকোয়াটার ঢাকায় ডিআইজির ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত। তাই বাংলাদেশের কোন থানা পুলিশ বা কোন ব্যক্তি তার বিচার করতে পারবে না। তিনি এই জমি জোর পূর্বক দখল করলে কোন ব্যক্তি দখলকৃত জমি রক্ষা করতে পারবে না। ডিআইজির ১টি মোবাইল ফোনই যথেষ্ট। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মনিরের লোকজন তাদেরকে দেশিয় অস্ত্রসস্ত্রসহ হামলা করলে তারা দৌড়ে চলে আসেন। পরে তিনি এ বিষয়ে কাপাসিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে গেলে ওই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ নিতে অপারগতা প্রকাশ করে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। মতিউর রহমান আরো জানান, প্রায় ৫৪ বছর পূর্বে তার পিতা মৃত আবুল হোসেনের ক্রয়কৃত ৩৫ শতাংশ জমি তিনি এ যাবৎ ভোগদখল করে আসলেও প্রায় ছয় মাস আগে থেকে মনির হোসেন পুলিশ হেড কোয়ার্টারের দাপট খাটিয়ে ওই জমি দখলের পায়তারা করে আসছে। এ বিষয়ে স্থানীয়দের নিয়ে একাধিকবার শালিস বৈঠকে কোনো মীমাংসা না হলে তিনি আদালতে আবেদন জানালে গাজীপুরের ৩য় সহকারী জজ আদালত গত মার্চ মাসের ৯ তারিখে বিবাদীর বিরুদ্ধে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু আদালতের সেই নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে ক্ষমতার দাপটে মনির হোসেন দিনে দুপুরে তার মূল্যবান গাছপালা কেটে নিয়েছে এবং তার উপর নানা রকম অত্যাচার করে চলছে। বর্তমানে তিনি মনিরের ভয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে গাজীপুর সদরে ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন।
তাছাড়া মনির হোসেন প্রায় তিন বছর চাকরিচ্যুত হয়ে বাড়িতে অবস্থান কালে স্থানীয় মাদক কারবার ও জুয়ার আসর নিয়ন্ত্রণে মূখ্য ভূমিকা পালন করেছেন বলেও অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন। এ বিষয়ে মনির হোসেন জানান, তার বিরুদ্ধে দায়ের করা সকল অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তার বাপ—চাচাদের ওই জমি এখনো পুরোপুরি ভাগভাটোয়ারা হয় নি। তাই ৬টি শালিস দরবার শেষে সব গাছ কেটে জমি ভাগাভাগি করার সিদ্ধান্ত হলে তার চাচা ও চাচাতো ভাইয়েরা ওই গাছ কেটেছেন। গাছ কাটার দিন আদালতের নিষেধাজ্ঞার কোনো কাগজ পুলিশের কাছে মতিউর রহমান দেখাতে পারেন নি। তাছাড়া পুলিশ সদর দপ্তরে ড্রাইভার পদে নিয়োগের সময় ডোপ টেস্ট ও নানা তদন্ত করে নেওয়া হয়। মাদক কিংবা জুয়ার সাথে তার কোনো সম্পৃক্ততা থাকলে তিনি সেখানে নিয়োগ পেতেন না। এ বিষয়ে কাপাসিয়া থানার ওসি মুহম্মদ আব্দুল বারিক জানান, সেনা সদস্যের অভিযোগের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়টি যেহেতু আদালতের বিষয় এবং এ বিষয়ে আদালতে মামলা চলমান তাই থানা পুলিশের হস্তক্ষেপের তেমন কোনো সুযোগ নেই। তবে এ ঘটনায় আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সার্বিক সহযোগিতা করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। তাছাড়া পুলিশ সদস্যদের অপরাধ করে পার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
Discussion about this post