শেখ মামুনুর রশীদ মামুনঃ ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার তারাটি ইউনিয়নের নায়েব হুমায়ূনের বিরুদ্ধে ভয়াবহ দুর্নীতি, অনিয়ম, ঘুষ বাণিজ্য ও সাধারণ জনগণকে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে ভূমি অফিসে দুর্নীতির অভয়ারণ্য গড়ে তুলেছেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে—তিনি নিয়মিত অফিস করেন না, দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা করেন এবং উপকারভোগীদের নানা অজুহাতে হয়রানি করে দালালদের দ্বারস্থ হতে বাধ্য করেন। দালাল সিন্ডিকেটের নেপথ্যে নায়েব! গোপন সূত্রে জানা গেছে, নায়েব হুমায়ূন নিজেই দালালদের নেতৃত্ব দিয়ে কাজ পরিচালনা করেন। কৌশলে ও গোপনে তিনি একটি দালাল সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন, যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে আর্থিক সুবিধা আদায় করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, জমি বা নামজারির মতো মৌলিক সেবা নিতে গেলেও তাকে চাহিদামতো ঘুষ না দিলে দিনের পর দিন ঘুরতে হয় ভুক্তভোগীদের। তারাটি ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই নায়েব হুমায়ূনের কোন হদিস পাচ্ছেন না। তিনি অফিসে অনুপস্থিত থাকেন এবং কোনো ধরনের জবাবদিহিতা মানেন না, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমি অফিসের কার্যক্রমকে চরমভাবে ব্যাহত করছে। আগেও ছিল বিতর্কের কেন্দ্রেঃ নায়েব হুমায়ূন এর আগে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চর ঈশ্বরদিয়া ইউনিয়নে কর্মরত ছিলেন। সেই সময়ও তার বিরুদ্ধে ব্যাপক ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছিল। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, যাদের থেকে ঘুষ নিতেন, তাদের জমি সংক্রান্ত কাজ দ্রুত সমাধান হয়ে যেত। আর যারা ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানাতেন, তাদের হয়রানি করে দিনের পর দিন চুলচেরা জিজ্ঞাসা আর অজুহাতের জালে ফেলে রাখা হতো। ঈশ্বরদিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কয়েকজন কর্মচারী জানিয়েছেন, “নায়েব হুমায়ূন টাকা ছাড়া কোনো কাজ করতেন না। টাকা দিলেই অসম্ভব কাজও সম্ভব করে দিতেন। না দিলে, কাগজপত্র ঠিক থাকলেও দিনের পর দিন ঘুরতে হতো।” তারা আরও বলেন, “তার ক্ষমতা ও প্রভাব ব্যবহার করে ঘুষের সিন্ডিকেট চালাতেন।” ক্ষমতার দাপটে কোটি টাকার মালিকঃ স্থানীয়দের অভিযোগ, নায়েব হুমায়ূন তৎকালীন আওয়ামী সরকার বা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থেকে দাপটের সঙ্গে ঘুষ বাণিজ্য ও অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকারি সুবিধা ও খাস জমি পাইয়ে দেওয়ার নামে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ ও সম্পদ অর্জন করেছেন। তাদের ভাষ্য মতে, হুমায়ূন বর্তমানে কোটি কোটি টাকার মালিক এবং নিজ এলাকায় প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তদন্ত ও শাস্তির দাবিঃ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, “ভূমি অফিসে যদি এমন অনিয়ম ও দুর্নীতি চলে, তাহলে সাধারণ মানুষের জমি সংক্রান্ত সেবা পাওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে।” তিনি আরও বলেন, “তারাটি ইউনিয়নের ভূমি অফিসে দীর্ঘদিন ধরেই অঘোষিত ঘুষ বাণিজ্য চলছে, যা রোধ করা এখন সময়ের দাবি। এমতাবস্থায়, স্থানীয় বাসিন্দারা এই দুর্নীতিগ্রস্ত নায়েবের বিরুদ্ধে দ্রুত বিভাগীয় তদন্ত ও কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, প্রশাসনের শক্ত পদক্ষেপ ছাড়া এই সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব নয়।
Discussion about this post