নিজস্ব প্রতিবেদক :: গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘেরবাজার এলাকার পুষ্পদাম রিসোর্টে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে অভিযান চালিয়ে ৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ। গত বুধবার (৯ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে জয়দেবপুর থানা পুলিশ এই অভিযান পরিচালনা করে। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ৪ জন যুবক ও ৫ জন যুবতী রয়েছেন। তবে এ সময় রিসোর্টের একটি কক্ষে হাতেনাতে ধরা পড়ে এক পুলিশ সদস্য। স্থানীয় সূত্রের দাবি, ওই পুলিশ সদস্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশে কর্মরত এবং তার নাম ইসমাইল। অভিযানের সময় তাকে ঘটনাস্থল থেকেই ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। রিসোর্টটি গাজীপুর সদর উপজেলার শিরিরচালা গ্রামে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। এটি ১৯৮৮ সালে নির্মিত হয়। স্থানীয়দের ভাষ্য, রিসোর্টটির মালিক শামসুল আলম চৌধুরী (বাবুল) দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে রিসোর্ট পরিচালনা করে আসছেন। তার বিরুদ্ধে পরিচালিত অন্তত ১২টি অভিযানে প্রতিবারই অসামাজিক কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পেয়েছে প্রশাসন। তবে অভিযানের পর কিছুদিন বন্ধ থাকলেও পরে পুনরায় দেহব্যবসা শুরু হয় বলে অভিযোগ। রিসোর্টটির এক কর্মচারী ও নিরাপত্তাকর্মী বলেন, “প্রশাসনের কিছু লোককে ম্যানেজ করেই রিসোর্টটি বছরের পর বছর ধরে চালানো হচ্ছে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জয়দেবপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হাদিউল ইসলাম বলেন, “আমার নেতৃত্বে অভিযান পরিচালিত হয়েছে। আমি এমন কোনো পুলিশ সদস্যকে ছাড়িনি, তেমন তথ্যও জানি না।” অভিযানের বিষয়ে জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হালিম বলেন, “অভিযান সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়েছে। যদি কারও বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে, আমরা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।” স্থানীয়রা জানান, রিসোর্টে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও তরুণ-তরুণীদের টার্গেট করে ভয়াবহ ফাঁদ পাতছে একটি চক্র। একাধিকবার অভিযান চালানো হলেও স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে রিসোর্টটি বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছি। এখানে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সমাজে ভয়াবহ অবক্ষয় তৈরি হচ্ছে। ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর রিসোর্টটির একজন কর্মচারী আলীর সঙ্গে পরিচয় গোপন করে কথা বলেন কয়েকজন সাংবাদিক। আলী তখন বলেন, “প্রতি রাতে রুম ভাড়া ৫ হাজার টাকা। মেয়ে চাইলে বাড়তি ৪ হাজার টাকা দিতে হয়। দিনে কম সময় থাকলে ৭ হাজার টাকায় প্যাকেজ দেওয়া হয়। প্রেমিকা নিয়ে আসলে প্রতি ঘণ্টায় নেয় ২ হাজার টাকা।” ২০২৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারিতেও সেখানে অভিযান চালানো হয়েছিল। তখনও অনৈতিক কার্যকলাপের প্রমাণ মেলে। তবে অভিযানের পরদিন থেকেই পেছনের একটি টিনশেড গেট দিয়ে যুবক-যুবতীদের প্রবেশ করাতে শুরু করে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ। সন্দেহ হলে মূল ফটক বন্ধ করে পেছনের গেট দিয়ে যৌনকর্মী ও খদ্দেরদের বের করে দেওয়া হয়। রিসোর্ট মালিক শামসুল আলম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। স্থানীয়রা রিসোর্টটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার পাশাপাশি মালিক শামসুল আলম চৌধুরী ও পরিচালক নজরুল ইসলামকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।
Discussion about this post