নিজস্ব প্রতিবেদক :: ময়মনসিংহ নগরীর জয়নুল আবেদীন উদ্যানে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে অবৈধভাবে পরিচালিত একটি মিনি চিড়িয়াখানা অবশেষে সিলগালা করেছে বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। অভিযানে জব্দ করা হয়েছে বিপন্ন ও সুরক্ষিত বিভিন্ন প্রজাতির ২৩টি বন্যপ্রাণী। তবে এই অবৈধ কর্মকাণ্ডের পেছনে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, শুরুতে এই চিড়িয়াখানাটি পরিচালিত হতো তৎকালীন মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকরামুল হক টিটুর ঘনিষ্ঠজনদের মাধ্যমে। নামমাত্র মূল্যে ইজারা নিয়ে ৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা ও কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান দুলাল দীর্ঘদিন এই বাণিজ্যিক পশুশালাটি পরিচালনা করেন। সেখানে খাঁচায় বন্দি করে চিড়িয়াখানার নাম করে অবৈধভাবে প্রাণী প্রদর্শনের পাশাপাশি রেস্টুরেন্ট ও বিভিন্ন রাইড বসিয়ে জমজমাট ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন তারা।
আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দিকে ক্ষমতার পালাবদল হলে, দৃশ্যপট পাল্টায়। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নগরীর ৪ নং ওয়ার্ডের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মামুন চিড়িয়াখানার দায়িত্ব নেন। প্রশাসনের নাকের ডগায় দুই দলের পালাক্রমে ছত্রছায়ায় চলে চিড়িয়াখানার অবৈধ ব্যবসা যেখানে প্রাণীদের সুরক্ষা, স্বাস্থ্য কিংবা আইন নিয়ে কেউ ভাবেনি।
অবশেষে, চিড়িয়াখানার একটি ভাল্লুকের পায়ে পচন ধরে দুর্গন্ধ ছড়ালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা ভাইরাল হয়। জনমতের চাপে নড়েচড়ে বসে বন বিভাগের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। অভিযান চালিয়ে জব্দ করা হয় ১টি অজগর, ২টি ময়ুর, ৫টি হরিণ, ২টি মদনটাক, ১টি কুমির, ২টি ভাল্লুক, ১টি সজারু, ৫টি বানরসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। পরে পুরো চিড়িয়াখানাটিকেই সিলগালা করে দেওয়া হয়।
বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কর্মকর্তা রথীন্দ্র কুমার বিশ্বাস বলেন, ব্যক্তির প্রভাব খাটিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে এই চিড়িয়াখানাটি গড়ে তোলা হয়েছিল, যা আইন অনুযায়ী গুরুতর অপরাধ। অপরদিকে বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক নার্গিস সুলতানা বলেন, বন্যপ্রাণী সংগ্রহ, প্রদর্শন ও সংরক্ষণ আইন বহির্ভূত।
অভিযোগ অস্বীকার করে বর্তমান পরিচালক ও বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মামুন বলেন, মানুষের বিনোদনের কথা ভেবে নামমাত্র টিকিটে প্রাণীগুলো দেখানোর ব্যবস্থা করেছি। তবে ভাল্লুকটি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে।
Discussion about this post