আল আমিন, নাটোর প্রতিনিধি:- নাটোর সদর উপজেলার বঙ্গবন্ধু কলেজের যুক্তিবিদ্যা বিষয়ের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ও স্থানীয় দৈনিক প্রান্তজন পত্রিকার সম্পাদক সাজেদুর রহমান সেলিমের ওপর সন্ত্রাসী হামলায় তার দুই হাত ভেঙ্গে দেওয়ার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত বিএনপির দুই নেতা কর্মীকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আজ সোমবার বিকালে নাটোরে আদালতে তাদের নিয়ে আসা হলে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল আমীন এ নির্দেশ দেন। এর আগে তার উপর গতকাল রোববার (৬ এপ্রিল) দুপুরে কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে কলেজের অদূরে চন্দ্রকলা বাজারে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
আহত সাজেদুর রহমান সেলিম সদর উপজেলার শিবপুর আমহাটি গ্রামের তসলিম উদ্দিন মন্ডলের ছেলে। তিনি নাটোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক প্রান্তজন পত্রিকার সম্পাদক এবং তিনি সদর উপজেলার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কলেজর চন্দ্রকলার যুক্তিবিদ্যা বিষয়ের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক।
এ ঘটনায় গতাকল রাতেই ভুক্তভোগী প্রভাষক সেলিম বাদী হয়ে তেবাড়িয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি আক্কাস আলী সরকার এবং বিএনপির কর্মী আব্দুর রউফ ওরফে ওহাব এবং কলেজের সহকারী অধ্যাপক গোলাম মোস্তফাসহ ৭জনকে নামীয় এবং অজ্ঞাত আরও ১০-১৫ মোট ২২জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। এই ঘটনায় রাতেই অভিযান চালিয়ে চন্দ্রকলা এলাকা থেকেএবং আব্দুর রউফ ওহাব এবং আক্কাস আলী সরকারকে গ্রেফতার করে যৌথবাহিনী ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত রোববার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে প্রভাষক সাজেদুর রহমান সেলিম শারীরিক ভাবে অসুস্থতা বোধ করায় কলেজ অধ্যক্ষের মৌখিক ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরছেলেন। বাড়ি ফেরার পথে চন্দ্রকলা বাজারে স্থানীয় বিএনপি কর্মী আব্দুল ওহাবের নেতৃত্বে ১০-১৫ জন বিএনপির কর্মী সাজেদুর রহমান সেলিমের পথরোধ করে পাশের একটি চায়ের দোকানে নিয়ে যায়। এ সময় তার মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে হকিস্টিক বাটাম ও লোহার রড দিয়ে অতর্কিতভাবে বেধড়ক মারপিট করে ফেলে রেখে যায় । এবং কলেজেনা আসার জন্য শাসিয়ে যায় তারা। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় সেলিমকে নাটোর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
এ বিষয়ে সাজেদুর রহমান সেলিম বলেন, কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও রাজশাহী পুঠিয়া উপজেলার ভাল্লুকগাছী গ্রামের মৃত. মোকছেদ আলীর ছেলে গোলাম মোস্তফা এ মামলার প্রধান আসামী তার হুকুমে পুঠিয়া ও বালিয়াডাঙ্গার কিছু সন্ত্রাসী এবং স্থানীয় বিএনপির নেতা আক্কাস আলী এবং বিএনপির কর্মী আব্দুর রউফ ওহাবসহ অন্যরা কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়।
তিনি বলেন, কলেজে কমিটি নিয়ে বিএনপির দু-পক্ষের ঝামেলা চলছিল। এতে আমাকে জড়ানোর চেষ্টা করছিল তারা। অথচ কমিটির বিষয়ে আমার কিছু করার নেই। আমাকে নির্মমভাবে মেরে যারা দুই হাত ভেঙ্গে দিছে আমি তাদের বিচার চাই।
অপরদিকে ওই ঘটনার পরেই পুলিশ ও সেনাবাহিনী যৌথ অভিযান চালিয়ে ওই রাতেই অভিযান চালিয়ে বিএনপি নেতা আক্কাস আলী সরকার ও কর্মী আব্দুর রউফকে গ্রেফতার করে। আজ সোমবার দুপুরের দিকে তাদের নাটোর চিফ জুডিশিয়াল আদালতে হাজির করা হয়। আদালতের বিচারক আল আমীন তাদের জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ এবং আগামী বৃহস্প্রতিবার শুনানির জন্য দিন ধার্য্য করেন।
নাটোর সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক পলাশ কুমার সাহা বলেন, গুরুতর আহত সেলিমের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে এবং মারপিটে তার দুই হাত ভেঙ্গে গেছে। আপাতত ব্যান্ডেস করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার দুই হাতেই অপারেশন করতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, জেলা বিএনপির সব কমিটি বিলুপ্ত করে সম্প্রতি ৩৭ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও দোষীদের বিচারের দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, অপরাধ যেই করুক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এমনকি অপরাধ প্রমান হলে দলের প্রাথমিক পদও বাতিল করা হবে। কোনো মারধরকেই আমরা সমর্থন করি না।
এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ মোছাঃ মৌসুমি পারভীন বলেন,পট পরবর্তনের পর কলেজের সহকারী অধ্যাপক গোলাম মোস্তাফার নেতৃত্বে মামলার আসামী আব্দুর রউফ ওহাব, আক্কাস আলী সরকার, আজাদুল মোল্লাসহ অনেকেই কলেজে এসে আমাকে কলেজে না আসার জন্য হুমকি দেয়। চেয়ার ফাঁকা করতে বলে।তারা বলে উপরের নির্দেশ আছে তুমি আর এই চেয়ারে বসতে পারবে না।এই চেয়ার ফাঁকা থাকবে।আমরা লোক নিয়োগ দিবো।সব জায়গায় পরিবর্তন হচ্ছে এখানেও হবে।উক্ত ঘটনার কথাপোকথনের অডিও রেকর্ড আমার কাছে সংরক্ষণ আছে। এদিকে ঘটনার তীব্র নিন্দা ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেস নাটোরের কতব্যরত গণমাধ্যমকর্মীরা।
এব্যাপারে নাটোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহাবুর রহমান জানান, এ ঘটনায় ভিকটিম নিজে বাদী হয়ে রোববার রাতে কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও রাজশাহী পুঠিয়া উপজেলার ভাল্লুকগাছী গ্রামের মৃত্য মোকছেদ আলীর ছেলে গোলাম মোস্তফাকে প্রধান আসামী করে ৭জন নামীয়ও অজ্ঞাত আরও ১০-১৫ জনকে আসামী করা হয়েছে। এমামলায় দুজনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠনো হয়েছে। অন্য আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান চলমান রয়েছে।
উল্লেখ্য মামলার আসামী আক্কাস আলী সরকার এবং গোলাম মোস্তফা সম্পর্কে চাচা ভাতিজা। এর আগে ২০০০ সালে ধরমপুর ডির্গী কলেজ দুর্গাপুর,পুঠিয়া রাজশাহীতে চাকুরির জন্য কলেজের রশিদের মাধ্যমে একলক্ষ টাকা অনুদান হিসাবে দেয় গোলাম মোস্তফা।পরে চাকুরি না করে সেই টাকা ফেরত নেবার জন্য কলেজের সভাপতি তৎকালীন এমপি নাদিম মোস্তাফার বিরুদ্ধে মামলা করে জেল খাটায়।পরবর্তীতে নাটোর সদর উপজেলার চন্দ্রকলা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কলেজে পৌরনীতির প্রভাষক হিসাবে চাকুরী নেন তিনি।সব সময় বিএনপি বিরোধী থাকলেও ৫ আগষ্টের পর পট পরিবর্তন হলে জেলা বিএনপির তৎকালীন সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজের ছত্র ছায়ায় এসে নতুন করে বিএনপিতে যোগ দিয়ে সুবিধা আদায় করতে মরিয়া হয়ে উঠে। কলেজের প্রভাষককে মারধরের ঘটনায় কলেজ এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। অন্যান্য শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা কলেজে আসতে ভয় পাচ্ছে। তারা এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
Discussion about this post