স্টাফ রিপোর্টার :: ইতালীয় নাগরিক ফাদার পিয়েল লুপি বাংলাদেশের সুবিধা বঞ্চিত অসহায় পথশিশুদের নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি এইসব পথশিশুদের ভবিষ্যত নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন এবং তার নিজ উদ্যোগে সমাজের ছিন্নমূল অসহায় পথশিশুদের যাবতীয় খরচ বহন করছেন। এদিকে ইতালীয় নাগরিক ফাদার পিয়েল লুপি পথশিশুদের কাছে দাদু নামে পরিচিত। এইসব শিশুদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন তিনি। শিশুরা তাকে টোকাইদের রাজা (দাদু ভাই) বলে তার হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। ঈদসহ যে কোন উৎসব আসলে দাদু ভাই তাদের পাশে থেকে সকল সহযোগিতা করেন। ফাদার পিয়েল লুপিও তাদেরকে ছাড়া অন্যকিছু ভাবেন না। পথশিশুদের লেখাপড়া, জামা-কাপড়, খাওয়া-দাওয়াসহ যাবতীয় কার্যক্রম তিনি পরিচালনা করছেন। পথশিশুদের নিয়ে কাজ করতে তার ভালো লাগে। এইসব পথশিশুরা তাদের বাবা-মায়ের সেবা যত্ন থেকে বঞ্চিত। তারা সমাজের সকলের সাথে মিলেমিশে থাকতে চায়।
তাদের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে খুলনায় গঠন করা হয়েছে “পুষ্প কানন (আশ্রয়) আর্তমানবতার সেবায় আমরা” সংগঠন। এই সংগঠনে পরিচালক হচ্ছেন মো: ওলিউল ইসলাম। তিনি ইতালীয় নাগরিক ফাদার পিয়েল লুপির সার্বিক সহযোগিতায় এইসব পথশিশুদের নিয়ে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। এইসব পথশিশুদের প্রতিদিন সাংস্কৃতিক, মানবিক জ্ঞান, ক্রীড়া প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে নিরক্ষরতার অভিশাপ দূর করে প্রতিটি শিশুকে দক্ষ মানব সম্পদে পরিণত করা।
সমাজে তাদেরও ভালোভাবে বেঁচে থাকা এবং নিরাপত্তার অধিকার রয়েছে। শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ। তাদের স্বাভাবিক বিকাশ নিশ্চিত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। তাই বিত্তবানশ্রেণি, সামাজিক সেবামূলক সংগঠন ও সরকারের পক্ষ থেকে অসহায় শিশুদের দুঃখ-দুর্দশা দূরীকরণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে পথশিশুদের ভাগ্য বদলানো সম্ভব।
পথশিশুরা চরম দারিদ্র্য, পারিবারিক অস্থিতিশীলতা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে অনেক কষ্টে দিনযাপন করছে। পেটের ক্ষুদায় মিটানোর জন্য এইসব পথশিশুরা বাধ্য হচ্ছে কাজ করতে। ছিন্নমূল পথশিশুদের বাসস্থান, স্বাস্থ্য, পুষ্টিকর খাবার ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থাকতে হচ্ছে। পথশিশুরা বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত হতে বাধ্য হচ্ছে। ছেলে পথশিশুদের চেয়ে মেয়ে পথশিশুদের জীবন অনেক কঠিন। তাদের রয়েছে পদে পদে নিরাপত্তাহীনতার ফাঁদ। পথশিশুরা কাজ করতে গিয়ে নানা ধরনের আঘাত ও দুর্ঘটনার শিকার হয়। একদিকে অপরাধী চক্র তাদের প্রতি সহিংস আচরণ, যৌন নিপীড়ন, চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধে পুলিশ প্রকৃত অপরাধীকে গ্রেপ্তার না করে শিশুদের ধরে নিয়ে মারধর করে।
এসব শিশুরা সারাবছরই খাদ্যসংকটে ভোগে। রমজান মাসে অনেক হোটেল রেস্তোরাঁ দিনের বেলায় বন্ধ থাকায় সেই সংকট তীব্র হয়ে ওঠে। জ্বর, হাঁচি, কাশি, ডায়রিয়াসহ নানা রোগের সময় ন্যূনতম চিকিৎসা সেবাও পায় না। অভিভাবকহীন স্বাধীন জীবনযাপনের কারণে পথশিশুরা বিপথে পা বাড়ায়। তারা ধূমপান, মাদকে আসক্ত হওয়ার পাশাপাশি মাদকের বাহক ও ছিনতাইকারীদের সহায়তাকারী হচ্ছে। অনেকে আর কখনো পরিবারের কাছে ফিরতেও ইচ্ছুক নয়।
Discussion about this post