স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর :: কালীগঞ্জ থানা থেকে বলছি, তোমার নামে বড় একটি মামলা হচ্ছে। নাম বাদ দিতে হলে আজ রাতের মধ্যেই ২ লাখ টাকা দিতে হবে। নইলে পুলিশ তোমাকে বাড়ি থেকে ধরে জেল হাজতে পাঠাবে। মোবাইল ফোনে এমন কথা শুনে ভয়ে রাতে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। পরদিনে ভোরে ধানক্ষেতের ড্রেনে পাওয়া গেছে আমিনুল ইসলাম (৫০) নামের এক ইউপি সদস্যের লাশ। সে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সিমলা রোকনপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার।
একইভাবে ওই ইউনিয়নের আরো ৬ মেম্বারের কাছে মামলার ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবি করেছে অজ্ঞাত প্রতারক চাঁদাবাজরা। এদিকে নিহতের ঘটনায় তার পরিবার গত ১৭ মার্চ কালীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দিয়েছে।
পুলিশ বলছে, অভিযোগটি দেয়ার পরেই আবার সেটি তুলে নিয়ে গেছে ভুক্তভোগীরা। একটি প্রতারক চক্র ঈদকে সামনে রেখে বিভিন্ন কৌশলে চাঁদা চেয়ে মানুষকে হয়রানি করছে।
নিহতের কন্যা আফরোজা খাতুন অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, ১৫ মার্চ রাত ১০টা ০২ মিনিটে আমার বাবা ইউপি সদস্য আমিনুল ইসলামের মোবাইলে (০১৭২৪ ০৮২১৩২) ০১৩১৪-৮৯২০২১ নম্বর থেকে একটি কল আসে। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে বলে, আমি থানার পুলিশ বলছি। আপনার নামে থানায় একটি মামলা হচ্ছে। এই মামলা থেকে নাম খারিজ করতে ২ লাখ টাকা দিতে হবে। এ কথা শুনে আমিনুল টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে অপর প্রান্তের অজ্ঞাত ব্যক্তি তাকে গালিগালাজ করে। একপর্যায়ে বাড়ি থেকে তুলে নেয়ার হুমকি দেয়। বিষয়টি পরিবারকে জানিয়ে তার পিতা রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। পরদিন ১৬ মার্চ ভোরে পুকুরিয়া গ্রামের মাঠের একটি ড্রেনে আমিনুলের মরদেহ পাওয়া যায়।
পরিবার ও গ্রামবাসীর ধারণা, চাঁদাবাজদের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালাতে গিয়ে স্ট্রোক করে হয়তো মারা যেতে পারেন তিনি। এ ঘটনায় ১৬ মার্চ রাতে নিহতের কন্যা কালীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ওই রাতেই একই পরিচয়ে সিমলা রোকনপুর ইউনিয়নের ইউনুচ আলী, টিটো, মুনছুর আলী, সিদ্দিক বিশ্বাস, রাকিব হোসেন, আকবর আলী ও আমিনুল ইসলাম মেম্বারের কাছে পুলিশ পরিচয়ে ফোন দেওয়া হয়। এ সময় মামলার ভয় দেখিয়ে মোবাইলে তাদের কাছে চাঁদা দাবি করে অজ্ঞাত প্রতারকরা।
ইউপি সদস্য ইউনুচ আলী বলেন, একইদিন রাত ৯টা ৫২ মিনিটে একই মোবাইল নম্বর থেকে থানার এএসআই মাসুদ বলছি পুলিশ পরিচয়ে তাকে কল দিয়েছিল। এ সময় তাকে বলে, তুই আওয়ামী লীগ করিস, তোর নামে মামলা হচ্ছে। মামলা থেকে নাম খারিজ করতে ২ লাখ টাকা দিবি। এ সময় মেম্বার ইউনুচ থানায় দেখা করতে চাইলে গালীগালাজ করে।
এসব বিষয়ে কালীগঞ্জ থানার ওসি শহিদুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, মৃত ব্যক্তির স্বজনরা থানায় এসে অভিযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু কিছু সময় পরই আবার অভিযোগটি তুলে নিয়ে গেছেন তারা।
তিনি বলেন, পুলিশ পরিচয়ে চাঁদা দাবিকৃত ব্যক্তির নাম ও মোবাইল নম্বর খতিয়ে দেখেছেন। ওই নাম্বারের কোনো মোবাইল ফোন এই থানায় নাই। বিষয়টি দ্রুত খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি।
Discussion about this post