আল আমিন, নাটোর প্রতিনিধি :- মেলার নাম বৌ মেলা। ৫২ বছরের পুরানো ঐতিহ্যবাহী মেলা এটি। মেলা বসেছিলো নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায় চাপিলা ইউনিয়নের মকিমপুর গ্রামে। বউমেলায় নারীদের সব ধরনের প্রসাধনী, তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন ধরনের দোকানের পসরা বসেছিলো। মেলায় প্রচুর নারী বিক্রেতা ও ক্রেতার সমাগম ঘটে। কোনও পুরুষের আগমণ না থাকায় আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা নারীরা নির্বিঘ্নে তাদের পছন্দের জিনিসপত্র কেনেন।গতকাল রবিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেচাকেনা চলে। মেলায় অংশ নিয়েছেন শ্বাশুড়ী, ননদী, জা-ঝিসহ শিশু-কিশোরীরা। মেলায় নারীদের পাশাপাশি বাহারি সব কাঁচের চুরি, রঙিন ফিতা, লিপষ্টিক, কানের দুল, ঝিনুকের মালার পসরা সাজিয়ে রেখেছেন পুরুষরাও। মেলায় এসে শ্বাশুড়ী, ননদী, জা-ঝিসহ নারীরা এসব অলঙ্কার কিনতে দামাদামি করছেন। দামে মিলে গেলে কিনছেন অলঙ্কারগুলো। তবে ‘বউ মেলা’য় পুরুষদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ থাকায় দৃষ্টির সীমানাজুড়ে শুধুই নারীদের চোখে পড়বে। সকাল থেকেই ত্রিপল ও শামিয়ানা টাঙিয়ে পসরা নিয়ে বসেছিল দোকানিরা। মেয়েদের প্রসাধনী সামগ্রীই মেলার প্রধান উপজীব্য হলেও তার সঙ্গে স্থান পায় ছোটদের খেলার সামগ্রী আর গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকান। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ভিড় জমতে শুরু করে নারী ও শিশুদের। সরেজমিনে দেখা যায়, মেলার দোকানে দোকানে নারী শিশুদের ভিড়। খেলনা ও রকমারি কসমেটিক ছিল তাদের কেনাকাটার তালিকায়। মেলায় বাহারি ডিজাইনের কসমেটিক সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে দোকানে বসেন নারী দোকানিরা। তবে সীমিতসংখ্যক দোকানে পুরুষ বিক্রেতাকেও দেখা যায়। মেলা কমিটির সভাপতি দুলাল হোসেন জানান, যুগ যুগান্তের পুড়নো এই মেলায় ঐতিহ্য রয়েছে। বাংলা বছরের পহেলা চৈত্রে এই মেলা বসে। দুইদিন ব্যাপি এই মেলার প্রথম দিনে উন্মুক্ত মেলায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। দ্বিতীয় দিনের শুরু থেকে ‘বউ মেলা’ শুরু হয়। মেলাকে কেন্দ্র করে জামাইদের দাওয়াত করে আনা হয় শ্বশুরবাড়িতে। এলাকার পুকুর থেকে আনা বড় বড় মাছও রান্না করা হয় জামাইদের জন্য। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ৫২ বছর আগে মৃত মুন্নাফ মন্ডল মেলাটি প্রথম শুরু করেছিলেন। তার পর থেকে প্রতিবছরের পহেলা চৈত্রে দুইদিন ব্যাপি মেলাটির আয়োজন চলে আসছে। দোকানিরা জানান, মেলায় নারীরাই যেহেতু ক্রেতা, তাই প্রসাধনী সামগ্রীই সেখানে বিক্রি হয় বেশি। মহিলাদের প্রসাধনীর পাশাপাশি শিশুদের খেলনার বিক্রিও ভালো। মেলায় আসা লিমা খাতুন বলেন, এই দিনটির জন্য তারা বছরজুড়ে অপেক্ষা করেন। মেলাটিতে শুধু নারীদের আগমণ থাকায় কেনা-কাটা, ঘোরাফেরাতে থাকে অবাদ বিচরণ। আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেন বলেন, গ্রামিণ ঐতিহ্য ধরে রাখতে তারা যুগ যুগ ধরে শান্তিপূর্ণভাবে মেলাটির আয়োজন করে আসছেন। দিনভর ‘বউ মেলা চলার পর বিকালে ঘোড়দৌড় শুরু হয়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ ছুটে আসেন এই মেলায়।
Discussion about this post