ঝিনাইদহ বিশেষ প্রতিনিধি-মোঃ ফজলুল কবির গামা ::ঝিনাইদহের শৈলকুপায় কলেজ শিক্ষক কাসেমের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। তিনি প্রতারণা করে কৃষকের ৬ লাখ টাকা আত্মসাত করাসহ নারী কেলেঙ্কারির সাথেও রয়েছে তার নাম। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযুক্ত এই কাশেম উপজেলার কাতলাগাড়ী কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ও কুষ্টিয়ার গবরা-পান্টি এলাকার মৃত জলিল সেখের ছেলে। বর্তমান তিনি শৈলকুপায় জমি কিনে বিলাস বহুল বাড়ি করে বসবাস করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতারণার স্বীকার এক ভুক্তভোগী জানান, আমার ছেলে আর্মিতে চাকরি করবে বলে সিদ্ধান্ত করলে, উপজেলার হাট ফাজিলপুর গ্রামের মোজাম্মেল হক রুকাব বিভিন্ন ভাবে তার সহযোগিতা করেন। রুকাব একজন সৎ ও পরোপকারী মানুষ। সে আর্মিতে কয়েকবার চাকরি পেলেও চাকরি না করে বারবারই পালিয়ে আসতেন। তিনি সৎ ও সাহসী লোক হওয়ায় আর্মির বড় বড় অফিসাররা তাকে প্রচন্ড ভালো বাসতো এবং চাকরিতে বহাল রাখার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তিনি কমপক্ষে দশ থেকে বারো বার সরকারি চাকরি পেলেও বার বারই পালিয়ে এসেছেন। বাড়ির মায়া ছাড়তে পারতেন না বলেই তিনি পালিয়ে আসতেন বলে সংবাদকর্মীদের জানিয়েছেন রুকাব।
তবে নিজে চাকরি না করলেও যোগ্যতা সম্পন্ন এলাকার অনেককেই চাকরি পেতে সহযোগিতা করেছেন তিনি। রুকাবের প্রতি অফিসারদের ভালোবাসার এটাই ছিল বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করেন অনেকে। তবে চাকরি পেতে সহযোগিতা করে কোন টাকা পয়সা তিনি নিতেন না। এমনকি কেউ খুশি হয়ে দিতে গেলেও না। তবে রুকাবের এই সফলতা আর সরলতাকে ব্যবহার করতে ভুল করেননি রুকাবের একান্ত কাছের লোকসহ সুযোগসন্ধানীরা। প্রতারণার শিকার ঐ ভুক্তভোগী জানান, রুকাবের স্ত্রীর ভাই কলেজ শিক্ষক কাশেমও সেই সুযোগ নিয়ে আমার কাছ থেকে প্রতারণা করে ৬ লক্ষ টাকা নিয়েছে। ছেলের চাকরি ঠেকাতে অবশেষে কৃষি জমি বিক্রি করে তাকে এই টাকা দিয়েছি।
রুকাব জানান, আমার পার্শ্ববর্তী গ্রামের অসহায় পরিবারের একটি ছেলের চাকরি পেতে আমি তাকে সহযোগিতা করি। পরে ছেলেটির যোগ্যতা অনুযায়ী আর্মিতে চাকরি হয়। ভুক্তভোগী জানান, রুকাব আমার ছেলের চাকরির জন্য সহযোগিতা করেছিলেন বিষয়টি রুকাবের কুটুম কাশেম টের পেয়ে যায়। আর রুকাব সহযোগিতা করলে চাকরি নিশ্চিত হবে কিন্তু বিনিময়ে কোন টাকা নিবেনা এটাও কাশেম জানতেন। এটা ভেবে রুকাবের কুটুম কাশেম আমার কাছ থেকে কিভাবে টাকা নেওয়া যায় সেজন্য কৌশল অবলম্বন করে। একপর্যায়
আমাকে, আমার ছেলে এবং রুকাবকে কৌশলে কাশেমের বাসায় ডেকে নিয়ে গোপনে একটি এগ্রিমেন্টে সই করে নেয়। অথচ ছেলের চাকরির বিষয়ে কাশেমের কোন ভুমিকাই ছিল না। যা কিছু সহযোগিতা করার রুকাব করেছে বলে জানান ঐ ভুক্তভোগী। ভুক্তভোগী আরো জানান, আমার ছেলে মাঠে দাঁড়ানোর পর রুকাবের সহযোগিতা এবং যোগ্যতা যাচাই বাছাই করেই তার চাকরি হয়ে যায়। এদিকে ছেলের চাকরি হয়েছে শুনে কাশেম আমার কাছে ৬ লক্ষ্য টাকা দাবি করে। কেন তাকে টাকা দিতে হবে জিজ্ঞেস করলে কাশেম বলেন, ছেলের চাকরি হলে ৬ লক্ষ টাকা দিতে হবে বলে আমি নাকি এগ্রিমেন্টে সই করেছি! ভুক্তভোগী জানান, আমার ছেলের চাকরির জন্য যা কিছু সহযোগিতা করার রুকাব করেছে আপনাকে কেন টাকা দিতে হবে। কিন্তু কোন কথাই শুনতে নারাজ কাশেম। পরে টাকা দিতে না চাইলে কাশেম আমার এবং আমার সদ্য চাকরি পাওয়া ছেলের নামে মিথ্যা মামলা করে কাশেম। এরপর ছেলের চাকরি চলে যাওয়ার ভয়ে বাধ্য হয়ে আমার সহায় সম্বল বিক্রি করে ঐ ৬ লক্ষ টাকা দিয়ে কাশেমের হাত থেকে মুক্তি পায়। তবে কোন অপরাধে কাশেম আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করলো আর কেনোইবা এই ৬ লক্ষ টাকা কাশেম কে দিতে হলো এ প্রশ্নের উত্তর আজও মেলেনি। তিনি বলেন, আমি এই প্রতারকের বিরুদ্ধে কার কাছে বিচার দেবো, আর কেই বা করে দিবে এর বিচার! আমিতো অসহায়!
এঘটনার বিষয়ে অভিযুক্ত কাশেমের কাছে ঐ ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধে কোন অপরাধে মামলা করেছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কারো নামে কোন মামলা করিনি। আর যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে তবে কোর্ট তার বিচার করেছে। তিনি বলেন, এবিষয়ে আমার কাছে জানতে আর কোন ফোন করবেন না।
এঘটনার অনুসন্ধান করতে যেয়ে দেখা গেছে, কৃষকের সাথে করা এই প্রতারণাসহ একের পর এক ছাত্রীকে প্রাইভেট পড়ানোর নামে শ্লীলতাহানি করাসহ বিভিন্ন নারী কেলেঙ্কারির সাথেও জড়িত রয়েছে এই কাশেমের নাম। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে শৈলকুপার পৌর এলাকায় তার প্রভাবশালী নানা-মামাদের বাড়ি হওয়ায় কাউকেই তিনি তোয়াক্কা করেন না।
Discussion about this post