শ্রীপুর প্রতিনিধি: শিশুদের প্রতি সহিংসতা সমাজের এক নির্মম চিত্র। আর যখন সেই সহিংসতার শিকার হয় একটি অবুঝ শিশু, তখন তা আরও মর্মান্তিক হয়ে ওঠে। এমনই একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে গাজীপুরের শ্রীপুরে, যেখানে সৎ বাবার নির্যাতনের শিকার হয়েছে মাত্র ৪ বছরের এক শিশু, মরিয়ম।গত শুক্রবার রাতে সৎ বাবা শামসুজ্জামান মান্নান (৩৫) এক অমানবিক নিষ্ঠুরতার পরিচয় দেন। তার সৎ মেয়ে মরিয়মকে গরম চাকুর ছ্যাঁকা দেন তিনি। শিশুটির আর্তচিৎকার শুনে মা ছুটে আসেন এবং দেখেন তার স্বামী নিষ্ঠুরভাবে মেয়েকে নির্যাতন করছে।শিশুটির মা জানান, ঘটনার পরপরই স্থানীয় ফার্মেসি থেকে মেয়েকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু দুই দিন পর ক্ষতস্থানে ইনফেকশন দেখা দেয়, যা আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের নজরে আসে। রোববার (৯ মার্চ) রাত ১১টায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযুক্ত শামসুজ্জামান মান্নানকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।এই মর্মান্তিক ঘটনার খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে,তা প্রবাসী শেখ সোহেল ও সোহেল ইফরানের হৃদয়ে গভীরভাবে নাড়া দেয়। তারা সিদ্ধান্ত নেন, যেকোনোভাবে শিশুটির পাশে দাঁড়াবেন। মঙ্গলবার ১১ মার্চ সাংবাদিক জাকির মোড়লের উপস্থিতিতে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আহত মরিয়মকে দেখতে যান তারা। সেখানে তারা শিশুটির জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ, জামাকাপড়, জুতা, পুষ্টিকর খাবার এবং খেলনা উপহার দেন।শেখ সোহেল বলেন,”কতটা পাষণ্ড হলে একজন মানুষ অবুঝ শিশুর গায়ে এভাবে হাত তুলতে পারে! আমরা সবাই মিলে যদি এসব ঘটনার বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়াই, তবে সমাজের শিশুরা নিরাপদ থাকবে না।”অন্যদিকে, সোহেল ইফরান বলেন,”আমরা এই ঘটনা দেখে মর্মাহত হয়েছি এবং আমাদের সাধ্যের মধ্যে শিশুটির পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। আপনারাও এগিয়ে আসুন, এই শিশুর পাশে দাঁড়ান।”শিশুটি এখন চিকিৎসাধীন রয়েছে। তবে তার শারীরিক ক্ষত হয়তো সেরে যাবে, কিন্তু মানসিক ক্ষত কতদিনে পূরণ হবে? সমাজের দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে আমাদের সবারই উচিত এই শিশুটির পাশে দাঁড়ানো এবং এমন নৃশংস ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা।এই নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছে সচেতন সমাজ। শিশুটির প্রতি এই অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক—এটাই এখন সকলের চাওয়া।
Discussion about this post