স্টাফ রিপোর্টার, উত্তরা :: রাজধানীর উত্তরায় রাইদা পরিবহন বন্ধ ও মালিকের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন ও মহাসড়ক অবরোধ করেছেন বাসচাপায় নিহত গেনেদা খাতুনের স্বজন ও এলাকাবাসী। উত্তরার হাউস বিল্ডিং এলাকায় আজ বৃহস্পতিবার নাগরিক সমাজের ব্যানারের এ মানববন্ধন করা হয়। পরে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের হাউস বিল্ডিং এলাকার মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। এতে মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসে প্রায় দুই শতাধিক মানুষ মহাসড়ক ছেড়ে দেন।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া বক্তারা বলেন, রাইদা পরিবহনের চালকেরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালান। রাইদার বাসচাপায় ঢাকাতে এ পর্যন্ত ২০ জনের বেশি যাত্রী-পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া উত্তরা-যাত্রাবাড়ী রুটে রাইদা পরিবহন চালকদের ওভারটেকিং ও বেপরোয়া গতিতে চলাচল করায় চরম ঝুঁকিতে এই রুটের সাধারণ যাত্রীরা। গেনেদা খাতুনকে বাসচাপায় হত্যার সঙ্গে জড়িত বাসচালক, হেলপার ও মালিকের ফাঁসির দাবি জানাই আমরা।
উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টর ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সভাপতি মো. ফিরোজ জামান বলেন, ‘রাস্তায় রাইদা পরিবহন উত্তরাবাসীর জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা ১১ নম্বর সেক্টরের থানা গেটের সামনে মেইন রোডের ওপর কাউন্টার বসিয়ে দিনরাত যানজটের সৃষ্টি করছে। শুধু তা-ই নয়, খালপাড় থেকে হাউস বিল্ডিংয়ের পুরো রোডই তারা দখল করে নিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘রাইদার বাসচাপায় গেনেদা খাতুনের নির্মম মৃত্যু হয়েছে। আমরা চাই উত্তরার মতো আবাসিক এলাকায় যেন কোনো বাসস্ট্যান্ড না থাকে। এতে আমাদের বসবাসের পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে।’ মানববন্ধনে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ সম্পাদক আনোয়ার হোসাইন বলেন, ‘রাইদা বাসের বেপরোয়া গতিতে উত্তরায় যে নারী মারা গেছেন, তা খুবই বীভৎস ছিল। আমরা ঘটনাস্থল সেদিনই পরিদর্শন করেছি। অবশ্যই এর সঠিক বিচার হওয়া উচিত।’
গেনেদা খাতুনের স্বামী আবদুল গণি বলেন, ‘আমার স্ত্রী সকাল বেলা কাজে যাইতেছিল। চৌরাস্তার মোড়ে রাইদা পরিবহনের দুই বাস এসে আমার স্ত্রীর জীবন কাইড়া নিছে। এই ঘটনার সঙ্গে রাইদা পরিবহনের বাসমালিকও জড়িত। বাসমালিকেরাই তো ওগোর মতো আনাড়ি ড্রাইভারগোর কাছে বাস তুইল্যা দিছে। আমি ওই দুই বাস ড্রাইভার-হেলপার আর বাসমালিকগোর ফাঁসি চাই।
এ সময় আবদুল গণি স্ত্রীর মৃত্যুতে আকুতি করে বলেন, ‘সরকার যেন এই খুনি রাইদা বাস বন্ধ কইরা দেয়। নইলে ওরা আরও মানুষ মারব। আমার মাইয়াগো মতো আর কোনো মাইয়া যেন মা হারা না হয়।’
উল্লেখ্য, ১৮ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) সকাল ৯টার দিকে উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টর চৌরাস্তা এলাকায় রাইদা পরিবহনের দুই বাসের রেষারেষিতে গৃহকর্মী গেনেদা খাতুনের মৃত্যু হয়। তিনি রাস্তা পার হওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু, যাত্রী আগে নেওয়ার প্রতিযোগিতায় বেপরোয়া গতিতে রাইদা পরিবহনের দুটি বাসের প্রথমটি (ঢাকা মেট্রো-ব-১২-৩৪১৭) গেনেদা খাতুনকে ধাক্কা দেয়। এতে তিনি রাস্তায় পড়ে গেলে পেছনে থাকা অপর রাইদা বাসের (ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-১৫২২) চাকা গেনেদা খাতুনের মাথা পিষ্ট করে। ফলে মাথার খুলি ভেঙে মগজ বেরিয়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান গেনেদা বেগম। এ ঘটনায় সড়ক পরিবহন আইনে ঘাতক রাইদা বাস পরিবহনের কয়েকজনকে আসামি করে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করেছেন নিহতের স্বামী মো. আবদুল গণি।
Discussion about this post