নিজস্ব প্রতিবেদক:: একুশে ফেব্রুয়ারি ঘিরে নিরাপত্তার ঝুঁকি নেই, কয়েক স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। তিনি বলেন, ‘সবকিছু মিলিয়ে ঢাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো। দুই-একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বড় কোনো ঘটনা নেই।’ আজ বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংক্রান্ত এক সংবাদ সন্মেলনে তিনি এসব কথা জানান।
শেখ সাজ্জাত আলী বলেন, ‘আমি ভিভিআইপি, ভিআইপিদের বিদায়ের পরে ঢাকাবাসীকে আসার অনুরোধ করছি। তার জন্য আমি সময় নির্ধারণ করে দিয়েছি। আমরা মনে করছি, ১২টা ৪০ থেকে ১২টা ৪৫- এই সময়ের ভেতরে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টাসসহ অন্যান্য ভিআইপিদের কার্যক্রম শেষ হয়ে যাবে। তারপর সকলের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘এ জন্য আমি সকলকে অনুরোধ করছি, এ সময়টা যেন একটু মেনে আসেন। তাহলে ওনাদেরও একটু কষ্ট কম হবে। গেদারিংটাও কম হবে। সবদিক দিয়ে আমরা এই ইভেন্টের নিরাপত্তা দিতে সক্ষম হবো।’
এর আগে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত হবে এবং শহীদ মিনারে ‘কয়েক স্তরে একই ধরনের’ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে বলে জানান তিনি।
কমিশনার বলেন, ‘প্রতিবারের ন্যায় এবারও প্রথমে ভিভিআইপি, ভিআইপি এবং তারপর জনসাধারণ পুস্পমাল্য অর্পন করবেন। রাত ১২টা ৪০ মিনিটে জনসাধারণের জন্য পলাশী প্রান্ত অর্থাৎ পশ্চিম পাশ থেকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘সকলকে অনুরোধ করবো, যারা রাতে আসবেন, ওনারা যেন আমাদের অনুরোধে সাড়া দিয়ে ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে আসেন। আমি সকলকে অনুরোধ করব, সবাই যেন বেদিতে পুস্পমাল্য দেওয়ার সময় যথাযথ শৃঙ্খলা মেনে চলেন।’
ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘কোনো এক সময়ে সাধারণ মানুষের সমাগম এবং প্রবেশ অনেক ভিড় হয়। এই ভিড়ের মধ্যে যেন কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে, আমরা তার জন্য সচেতন থাকব। কিন্তু পাশাপাশি যারা আসবেন তাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ, ওনারা যেন ওনাদের নিজের নিরাপত্তা, মোবাইল, মানিব্যাগের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখেন।’
তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা ব্যবস্থা তিন-চার স্তরে নেওয়া হয়েছে। আজকে সন্ধ্যায় প্রথমে ৫টায়, পরে রাত ৮টা থেকে ডিএমপির অফিসার ফোর্স নিয়োজিত থাকবে। আগামীকাল বেলা ২টা পর্যন্ত আমাদের ফোর্স এবং অফিসাররা পুরো এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন।’
এখন পর্যন্ত নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনো ‘আশঙ্কা’ দেখছেন না জানিয়ে কমিশনার বলেন, ‘মেটাল ডিটেক্টর, আর্চওয়ে চেকিং এবং ম্যানুয়ালি দেহ তল্লাশির ব্যবস্থা থাকবে। কোনোরূপ দাহ্য পদার্থ বা বিস্ফোরক নিয়ে কেউ যাতে প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য ব্যবস্থা থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রচুর লোক সমাগম হয়, সে জন্য সবাইকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। সাথে সাথে শহীদ মিনারের চতুর্পাশে এক কিলোমিটারের ভেতরে বিভিন্ন মোবাইল টিম সতর্ক অবস্থায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।’
প্রোগ্রামটি মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং পুলিশ তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করবে। এখানে র্রাবের যথেষ্ট ডেপ্লয়মেন্ট থাকবে, যাদের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলবৎ রাখার কথা জানিয়েছেন শেখ মো. সাজ্জাত আলী।
রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ল অ্যান্ড অর্ডার ভেরি গুড ইনশাআল্লাহ। একটা-দুইটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বড় কোনো ঘটনা বলতে পারবেন না। আমি মনে করি বিচ্ছিন্ন এক-দুইটি, মেইনলি মোবাইল ছিনতাই ব্যতিত কোনো অপরাধ নেই। ল অ্যান্ড অর্ডারে কোনো সমস্যা নেই, এভরিথিং ইজ নরমাল ইনশাআল্লাহ।’
উত্তরার ঘটনার বিষয় উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘একটি ঘটনা সিগনিফিক্যান্ট দুই দিন আগে হয়েছে উত্তরাতে, যেটা ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সে ঘটনার পাঁচজনকেই অ্যারেস্ট করা হয়েছে। আমরা সাকসেসফুলি ওইটা হ্যান্ডেল করছি। আমার অফিসার, ফোর্স সবাই আমরা মনোবল ফিরে পেয়েছি এবং চমৎকারভাবে কাজ করছি।’
জামিনে থাকা ‘শীর্ষ’ সন্ত্রাসীদের কারণে একুশে ফেব্রুয়ারির নিরাপত্তায় কোনো শঙ্কা রয়েছে কিনা- এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যে সমস্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিনে আছে, তাদের এরিয়া অব ক্রাইম বা এরিয়া অব অপারেশন এক জিনিস। আর শহীদ মিনার পুস্পমাল্য অর্পণ ভিন্ন জিনিস। এখানে তো তাদের কোনো ইন্টারেস্ট নেই।’
তিনি বলেন, ‘শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ইন্টারেস্ট ভিন্ন ক্ষেত্রে, তারা চাঁদা আদায় বা এটা সেটায় তাদের ইন্টারেস্ট। আর তারা যারা বাইরে আছে আমরা জানি, তাদেরকে আমরা ট্রেস করছি, তারা কোণঠাসার মধ্যেই আছে। একেবারে তারা যে ফ্রি অপারেশন করতে পারছে, এমন কিছু নয়।’
শহীদ মিনারকেন্দ্রিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার বলেন, ‘আমাদের চারপাশে প্রায় এক কিলোমিটার রেডি আছে, যাতে সেখানে গাড়ি প্রবেশ করতে না পারে। যেহেতু এখানে ব্যাপক জনসমাগম হবে। সেজন্য মূলত সাতটা স্থানে রোড বন্ধ করে দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘শাহবাগ, নীলক্ষেত, শহীদুল্লাহ হল, হাইকোর্ট, চানখাঁরপুল, পলাশী ও বকশিবাজার ক্রসিং দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে। এখান দিয়ে মানুষ আসতে পারবে না একটা ছাড়া। শুধু পলাশী থেকে জগন্নাথ হল হয়ে শহীদ মিনারে যেতে পারবেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দোয়েল চত্বর হয়ে বের হতে পারবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘নরমালি সন্ধ্যা ৬টায় সড়কগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এবার সেটাকে পিছিয়ে সর্বশেষ ৯টা বা ৮টায় বন্ধ করা হবে। সেটা নির্ভর করে শাহবাগ এলাকায় কোনো আন্দোলন বা অবরোধ থাকবে কিনা, সেটা হলে ক্লিয়ার করে আমরা বন্ধ করব সর্বশেষ ৯টায়।’
Discussion about this post