মো. মেহেদী হাসান, গাজীপুর: দেশের প্রচলিত ‘বেসরকারি বিদ্যালয় নিবন্ধন অধ্যাদেশ ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিবন্ধন বিধিমালা’ উপেক্ষা করে এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও বিভাগীয় উপ-পরিচালক তথা মহাপরিচালকের ক্ষমতাকে খর্ব করে গাজীপুরে চার প্রতিষ্ঠানকে স্থাপন ও চালুর অনুমতি প্রদান করেছেন সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার।
গাজীপুর সদরের আবাবীল একাডেমী, ইভিন্স মডেল স্কুল, তোফাজ্জল আপডেট স্কুল ও বানিয়ারচালা মডেল একাডেমীকে গত ০৬ ও ০৯ ফেব্রুয়ায়ীর যথাক্রমে ১৭৩, ১৭৪, ১৭৭, ১৮৩ নং স্মারকে জারিকৃত অফিস আদেশের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত স্থাপন ও চালুর অনুমতি প্রদান করেছেন গাজীপুর সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালাম।
বেসরকারি বিদ্যালয় নিবন্ধন অধ্যাদেশ, ১৯৬২’র ধারা ৩ এ বলা রয়েছে ‘এই অধ্যাদেশের বিধান ব্যতীত কোনো বেসরকারি স্কুল প্রতিষ্ঠিত বা পরিচালিত হবে না।’ অধ্যাদেশে আরও বলা রয়েছে, কোনো ব্যক্তি বেসরকারি স্কুল প্রতিষ্ঠা বা চালাতে চাইলে তাকে নির্ধারিত নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের কাছে থেকে নিবন্ধন গ্রহণ করতে হবে এবং একই সাথে অধ্যাদেশে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ হিসেবে নির্ধারণ করা রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অথবা মহাপরিচালক কর্তৃক অনুমোদিত বিভাগীয় উপ-পরিচালক।
বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিবন্ধন বিধিমালা, ২০২৩’র বিধি ৪ এ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর পাঠদান অনুমতি ও বিধি ৫ এ নিবন্ধন সংক্রান্ত বিস্তারিত বলা রয়েছে। বিধিতে প্রথম দফায় বিদ্যালয়গুলোকে পাঠদান অনুমতি এবং পরবর্তী দফায় নিবন্ধন গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। উভয় কার্যক্রমে উপজেলা বা থানা শিক্ষা অফিসারের সংশ্লিষ্টতা হলো তিনি শুধুমাত্র শিক্ষকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে যাচাই-বাছাই করে পাঠদান সংক্রান্ত ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিসারের বরাবরে এবং নিবন্ধন সংক্রান্ত ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষ অফিসারের মাধ্যমে বিভাগীয় উপ-পরিচালকের বরাবরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রেরণের ব্যবস্থা করবেন। বিধি মোতাবেক পাঠদান অনুমোদনের দায়িত্ব জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও নিবন্ধনের দায়িত্ব বিভাগীয় উপ-পরিচালকের এখতিয়ারে রয়েছে।
ক্ষমতা না থাকা স্বত্তেও আপনি কিভাবে এবং কোন স্বার্থে ঐ চার স্কুলকে স্থাপন ও চালুর অনুমতি দিয়েছেন জানতে চাইলে গাজীপুর সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালাম বলেন, ২০২৩ সালের বিধিমালায় উপজেলা শিক্ষা অফিসার কর্তৃক
বেসরকারি স্কুলকে স্থাপন ও চালুর অনুমতি দেয়ার বিষয়টি লুকায়িত আছে-পূর্বের বিধিমালা অনুযায়ী; আর সে অনুযায়ী আমি দিছি।
সম্প্রতি গাজীপুরের বেসরকারি বিদ্যালয়গুলো নিবন্ধনের আওতায় আনতে উচ্চ আদালতে রিটকারী মো. মেহেদী হাসান বলেন, কেজি স্কুল স্থাপন ও চালুর অনুমতি দেয়ার এখতিয়ার কোনো বিধিমালাতেই উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে দেয়া হয়নি, সেটা হোক ২৩ অথবা ১১’র। অধ্যাদেশে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চালুর কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করা রয়েছে মহাপরিচালককে; তবে সে চাইলে বিভাগীয় উপ-পরিচালককে দায়িত্ব দিতে পারেন। সালামের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগটি সত্য হলে, হয় তিনি এই দায়িত্ব পালনে অযোগ্য না হলে সে অতি উৎসাহী। যা অন্তত গাজীপুরের জন্য এই মুহূর্তে কাম্য নয় কারণ এখানকার বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোর বিষয়ে মহামান্য উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ রয়েছে।
গাজীপুর কিন্ডারগার্টেন এসোসিশেনের সভাপতি মো: মোছাদ্দিকুর রহমান বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালাম গুটিকয়েক দুষ্ট প্রকৃতির স্কুল মালিকদের সাথে নিয়ে গাজীপুর শিক্ষা খাতে একটি ত্রাস সৃষ্টি করছেন। তার নিবন্ধন বাণিজ্যর বিষয়ে ইতিপূর্বে আমরা অধিদপ্তরকে কয়েক দফায় জানিয়েছি; আশা করি অধিদপ্তর তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিবে।
গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো: মাসুদ ভূঁইয়া বলেন, সরকারি নির্দেশনার বাহিরে কোন সরকারি কর্মকর্তারই কিছু করার সুযোগ নেই তবে গাজীপুর সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আপনি এনেছেন তা বিস্তারিত না দেখে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারবনা।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় উপ পরিচালক মোহাম্মদ আলী রেজা বলেন, কোনো ভাবেই উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্কুল চালুর অনুমতি দিতে পারে না। আপনি অনুমতির কপিটা দ্রুত আমায় পাঠান, আমি সালামের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিব।
এ ব্যাপারে কথা বলতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আবু নূর মোঃ শামসুজ্জামানকে মুঠোফোনে কল করলে তাকে পাওয়া যায়নি।
Discussion about this post