অনলাইন ডেস্ক:
গত সপ্তাহে মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএন আয়োজিত প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্কে হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর থেকেই জো বাইডেনকে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান উঠেছে। তবে নিজের এমন পারফরম্যান্সের কারণ জানিয়েছেন মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট।
বুধবার (৩ জুলাই) বিবিসির অনলাইন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাইডেন সাংবাদিকদের বলেছেন যে, বিতর্কের আগে বিশ্বজুড়ে কয়েকবার ভ্রমণ করা তার জন্য ঠিক ছিল না।
ডেমোক্রেট প্রার্থী বাইডেন বলেন, আমি স্টাফদের কথা শুনিনি…এবং বিতর্কের মঞ্চে প্রায় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
তবে বিবিসি বলছে, ৮১ বছর বয়সী বাইডেনের সর্বশেষ সফর ছিল ১৫ জুন, যা বিতর্ক শুরুর প্রায় দুই সপ্তাহ আগে। রিপাবলিকান প্রার্থী এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বাইডেনের নির্বাচনী বিতর্ক হয় গত ২৭ জুন।
এর আগে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিতর্কের দিনও প্রেসিডেন্ট বাইডেন ঠাণ্ডার সঙ্গে লড়াই করছিলেন। তবে গতকাল বাইডেন অসুস্থতার কথা উল্লেখ করেননি।
এদিকে বিতর্কে এমন বেহাল পারফরম্যান্সের পর থেকেই বাইডেনের সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জোরালো হচ্ছে। ডেমোক্রেটদের মধ্যেও আতংক ছড়িয়েছে।
তবে বাইডেনের পরিবারের পক্ষ থেকে এসেছে ভিন্ন বার্তা। প্রেসিডেন্টের পরিবার চান, বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াই থেকে সরে না আসুক। গত সোমবার ক্যাম্প ডেভিডে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগ দেন বাইডেন। সেখানে নানা আলোচনার মধ্যে বাইডেনের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়েও কথা উঠে।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের বরাত দিয়ে গার্ডিয়ান বলছে, বৈঠকে পরিবারের সদস্যরা বাইডেনকে বলেছেন, তিনি আরও চার বছর আমেরিকানদের সেবা দিতে পারবেন।
গত ২৭ জুনের বিতর্কে পররাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি, সীমান্ত ইস্যু, সামাজিক নিরাপত্তা, চাইল্ড কেয়ার, কংগ্রেস ভবনে হামলার ঘটনা এবং গর্ভপাতসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলার সময় বাইডেন ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একে অন্যের বিরুদ্ধে মিথ্যা বলার অভিযোগ আনেন এবং পরস্পরকে তীব্র বাক্যবাণে জর্জরিত করার চেষ্টা করেছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প অর্থনীতি সামলানো, পররাষ্ট্রনীতির রেকর্ড ও ব্যাপক সংখ্যক অভিবাসীর বিষয়ে বাইডেনের তীব্র সমালোচনা করেন। অন্যদিকে, আদালতে সম্প্রতি ট্রাম্পের সাজার প্রসঙ্গ তুলে তাকে ‘গণতন্ত্রের জন্য হুমকি’ বলে উল্লেখ করেন বাইডেন।
বিতর্কে ট্রাম্প শেষ করেছেন এই বলে যে, আমেরিকার মানুষ এখন জাহান্নামে বাস করছে। ট্রাম্প বলেন, সাড়ে তিন বছর ধরে আমরা জাহান্নামে বাস করছি।
অন্যদিকে, শেষ বক্তব্যে বাইডেন আমেরিকানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেন এবং বলেন, তিনি কর কমিয়ে আনতে চান। একই সঙ্গে দাবি করেন যে ট্রাম্প কর বাড়িয়ে দেবেন।
জো বাইডেন পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি তুলে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আক্রমণ করেন। এর আগে ট্রাম্প সম্প্রতি জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেনের বন্দুক আইনে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার বিষয়টি তুলেছিলেন।
সিএনএনের জরিপে বলা হয়েছে, অধিকাংশ দর্শক এই মত দিয়েছেন যে, জো বাইডেনের সঙ্গে বিতর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হয়েছেন। সিএনএনের তাৎক্ষণিক জরিপ অনুযায়ী, বিতর্ক দেখেছেন এমন নিবন্ধিত ভোটারদের মধ্যে ৬৭ শতাংশ বলেছেন, ট্রাম্প ভালো করেছেন। আর মাত্র ৩৩ শতাংশ বাইডেনের পক্ষে মত দিয়েছেন।
তবে সিএনএন বলছে, জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা দেশটির সব ভোটারদের মতামতের প্রতিনিধিত্ব করেন না। যারা বিতর্কটি দেখেছেন, আর এই জরিপে অংশ নিয়েছেন, শুধু তাদের মতামতই এই ফলাফলে প্রতিফলিত হয়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া ভোটারদের মধ্যে রিপাবলিকপন্থীদের সংখ্যা কিছুটা বেশি থাকতে পারে।
বিতর্কটি যারা দেখেছেন, জরিপে অংশ নেওয়া এমন ভোটারদের মধ্যে প্রায় ৫৭ শতাংশ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দেওয়ার সক্ষমতার প্রশ্নে বাইডেনের ওপর তাদের আস্থা নেই।
Discussion about this post