নিজস্ব প্রতিবেদক : চাঁদার ২০ লাখ টাকা দিতে রাজি না হওয়াতে এক প্রবাসী এবং ৪ বিএনপি নেতাকে হত্যার উদ্দেশ্য নির্মমভাবে কুপিয়েছেন সাবেক যুবলীগ নেতা ও সদ্য বিএনপিতে অনুপ্রবেশকারী মো. সবুজ (৩০) (ওরফে পাল্টি সবুজ)।
থানা পুলিশ ও স্থানীয়দের দেওয়া তথ্য মতে অভিযোগ উঠে- মহাখালী এলাকায় অবস্থিত টিএন্ডটির আমতলা বস্তিতে মো. সবুজ এক সময় কিশোর গ্যাং এর সদস্য থাকলেও আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময় থেকে তিনি কিশোর গ্যাং এর মাস্টার মাইন্ড হিসেবে কাজ করছেন। আওয়ামী যুবলীগ এই নেতা ৫ আগস্টের পর বনে গেছেন বিএনপির যুবদলের নেতা। পদ পাল্টে আগের থেকে ভয়াবহভাবে চাঁদাবাজি দখলবাজি চালাচ্ছে আমতলা এলাকাজুড়ে। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে প্রবাসীকে হত্যার অভিযোগে একটি মার্ডার মামলা করা হয়।
সম্প্রতি সবুজ গ্যাং মালায়েশিয়া প্রবাসী মো. টিপু মিয়া (৩২) এর হামলা করে। প্রবাসী টিপু অভিযোগ করে বলেন, সবুজ অবৈধভাবে চাঁদা দাবি করে আমার কাছে। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় এবং এলাকায় যেন কোন চাঁদাবাজি না করতে পারে সেজন্য মানুষকে সচেতন করি। এই ক্ষোভ থেকে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্য পাল্টি সবুজের সরাসরি নেতৃত্বে মো. কানন (২৮), পারভেজ (২৬), বাবু (২৫). নাসির (৩২), মোমিন (৩৬), রব (২৬), জোনায়েদ (২৫) ডন মুন্না (২২) সহ প্রায় ৮ থেকে ১০ জন মিলে আমাকে সহ এলাকার বিএনপির নেতাসহ আরো ৫-৬ জনকে নৃশংসভাবে কোপাতে থাকে। আমার মৃত্যু নিশ্চিত করতে মাথায় কোপানো হয়।
তিনি বলেন, যে দল যখন ক্ষমতায় যায় সে দলে যুক্ত হয় বলে তাকে সকলেই পাল্টি সবুজ বলে। এলাকার মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় হুমকি-ধামকি দিয়ে যে চাঁদাবাজী করে। তার একটা কমিশন দিয়ে মুলত ক্ষমতাসীন দলের সাথে যুক্ত হয়ে অপকর্ম চালিয়ে যায়।
হামলাকারী ও একাধিক স্থানীয়রা জানান, সবুজ গ্যাং এর অপরাধীরা এ সময় একটি বাসায় লুটপাট ও ভাঙচুর করে। এবং নগদ টাকা ও একটি মোটরসাইকেল চুরি করে নিয়ে যায়। যা একাধিক মানুষ দেখেছে। দিন দুপুরে এমন শীর্ষ সন্ত্রাসী হামলা দেখতে চায় না সাধারণ মানুষ। তাদের দাবি- ২০২৪ এর রাজনীতিতে কোন সন্ত্রাসী অথবা সিন্ডিকেট চায় না।
মহাখালী আমতলী ও স্থানীয় বিএনপির কয়েকজন নেতা অভিযোগ করে (নাম না প্রকাশ শর্তে) জানান, তিনি বিএনপিতে অনুপ্রবেশকারী তার মত লোকজন দলের জন্য হুমকিসরুপ। তার এই অপকর্মে প্রতিবাদ করায় টিপু মিয়ার সাথে বিএনপির ৪ নেতাকে কুপিয়েছে পাল্টি সবুজ। এলাকায় কেউ তার ভয়ে মুখ খোলে না। এই অপরাধী কয়েকজনকে নৃশংসভাবে কোপানোর পরও সে এলাকায় সো-ডাউন দিয়ে বেড়াচ্ছে এবং নিরীহ মানুষকে বিভিন্ন হুমকি দিচ্ছে। আহতদের কাছে উল্টো চাঁদা দাবি করে এবং প্রাণ নাশের হুমকি দিয়েই যাচ্ছে। আমরা দলের ত্যাগী নেতা হয়েও তাদের জন্য মুখ দেখাতে পারছি না। যদি দল থেকে তাদের বিরুদ্ধে যথযত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয়, তাহলে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হতে থাকবেই।
সবুজ গ্রুপের হাতে নির্যাতিত আরো এক ভুক্তোভোগী মো. সোহেল রানা অভিযোগ করে বলেন, আমি একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। ব্যবসা করে কষ্ট করেই বস্তি এলাকায় বসবাস করি। আমাকে কোন কারণ ছাড়ায় হামলার সময় টিপু ভাইকে বাচাতে গেলে তারা আমাকে কোপায়। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চায়। ঘটনার পর থেকে আমরা প্রতিনিয়ত একটি ভয়াবহ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। যদিও থানা পুলিশ এসব বিষয়ে এখনো নীরব রয়েছে। আমরা তো মানুষ পাল্টি সবুজের শাস্তিও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিচারের দাবি জানান এই ভুক্তভোগ।
সন্ত্রাসী পাল্টি সবুজ গ্যাং এর অত্যাচারে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ এমন প্রশ্নের জবাবে বনানী থানার ভারপ্রপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাসেল সারোয়ার সাংবাদিকদের জানান, পাল্টি সবুজ গ্যাং হোক আর যেই হোক অপরাধ করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। অবশ্যই অপরাধীদের আইনের আওতায় আসতে হবে। তাছাড়া আমরা সকল অপরাধী ও অপরাধ নির্মূলের বিষয়ে সর্বদা সচেষ্ট অবস্থানে রয়েছি। এ বিষয়ে একটি মামলা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তারের অভিযান চলমান রেখেছে থানা পুলিশ।
তিনি বলেন, এই বিষয়ে আমাদের পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা নিয়ে আমরা কাজ করছি।
Discussion about this post