স্টাফ রিপোর্টার: বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে গাজীপুর ভূমি সেক্টরে বিতর্কিত ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা বেশ কিছু ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা পদোন্নতি নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। কথিত পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ইতোমধ্যে ৪০ জনের ডিসি ফিটলিস্ট তালিকা করে সুপারিশ করা হয়েছে। এসব কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধেই শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে বিভাগীয় মামলা রয়েছে। তাদের পদোন্নতির ফিটলিস্টে রাখলে অন্তবর্তীকালীন সরকারের সদিচ্ছা প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে মন্তব্য করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা। ওয়াকিবহাল সূত্রে জানা গেছে, পদোন্নতির ফিটলিস্টে রয়েছে দুর্নীতিবাজ ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম। তাদের মধ্যে অন্যতম দুর্নীতিবাজ ভূমি উপ সহকারী কর্মকর্তা বেগম শেফালী আক্তার। বিগত দিনে তার বিরুদ্ধে খারিজের নামে ঘুষ আদায়, গ্রাহক হয়রানী, দালাল লালন-পালন, ঘুষ নিয়েও খারিজ না করে দেওয়াসহ দুর্নীতির প্রবল অভিযোগ থাকা সত্বেও গুরুত্বপূর্ণ পদ ভূমি সহকারী পদে তার পক্ষে উঠে পদোন্নতির সুপারিশ। এভাবে বিতর্কিতরাও পদোন্নতির সুপারিশ পাওয়ায় প্রশাসনে চলছে নানান সমালোচনা। জানা গেছে, এই কর্মকর্তা ২০০১ সালের ২১ মার্চ এম.এল.এস.এস পদে গাজীপুর পৌর ভূমি অফিসে চাকরিজীবন শুরু। চাকরি জীবনের শুরুতেই তিনি জড়িয়ে পড়েন ঘুষ-দুর্নীতিতে। ভূমি-সংক্রান্ত সেবার নামে দালালদের সঙ্গে পরস্পর যোগসাজশে দুর্নীতি করতেন তিনি। এরপর তারই অধিনস্ত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে তৈরি হয় দহরম-মহরম সম্পর্ক। সেই সুবাদে উপ-সহকারি পদ বাগিয়ে নেন শেফালী আক্তার। পরবর্তী বাড়িয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস, টঙ্গী, বাসন, সালনা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে উপ-সহকারি পদে দায়িত্ব পালন করেন বেগম শেফালী আক্তার। সর্বশেষ সালনা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে থাকাকালীন বেপরোয়া ঘুষ-দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন শেফালী আক্তার। নানা অনিয়মের বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয়। তৎকালীন সালনা ভূমি অফিসে থাকাকালীন খারিজের নামে বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। যদিও তাকে অন্যত্র বদলি করার কিছু দিন পর তিনি ওই টাকা চাপে পরে ফেরত দেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা যায়, অন্তবর্তীকালীন সরকার আসার পর দুর্নীতিবাজ ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা বেগম শেফালী আক্তার সুযোগ বুঝে নিজেকে পদ-বঞ্চিত দাবি করে পদোন্নতি পেতে মড়িয়া হয়ে উঠেছেন। এ ঘটনায় সৎ, চৌকস ও সত্যিকারের পদ-বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ফিটলিস্টে থাকা ৪০ জন উপ-সহকারী কর্মকর্তার মধ্যে ক্রমিক নং ৩৫- বেগম শেফালী আক্তারের বিরুদ্ধে রয়েছে খারিজের নামে ঘুষ আদায়, গ্রাহক হয়রানীসহ নানা অভিযোগ। এছাড়াও পদোন্নতির ফিটলিস্টে থাকা কাশিমপুর ইউনিয়ন ভূমি উপ সহকারী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে রয়েছে বিভাগীয় মামলা, বনের জমির ব্যক্তি নামে খারিজের অভিযোগে ভূমি উপ সহকারী কর্মকর্তা মুহাম্মদ নূরে এ আলমের বিরুদ্ধে রয়েছে দুদক মামলা, মোঃ হারুনর রশীদ বিরুদ্ধে রয়েছে দুদক মামলা, গোসিংগা ইউনিয়ন ভূমি উপ সহকারী কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পতিত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে প্রশাসনে এক ধরনের সুবিধাভোগী আমলাচক্র গড়ে উঠেছিল। বর্তমানে অন্তবর্তীকালীন সরকারের সংস্কারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হলে সরকারের সুশাসন নিশ্চিত হবে না। বরং দুর্নীতি-অনিয়মের ধারাবাহিকতাই অব্যাহত থাকবে। দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, গাজীপুর জেলা প্রশাসনের অধীনে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম হয় উপজেলা-ইউনিয়ন ভূমি অফিস গুলোতে। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে অর্থ আদায়ের অভিযোগও উঠেছে এই দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। পদোন্নতির বিষয়ে জানতে চাইলে বিষয়ে জানতে চাইলে, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব শাখা) মোহাম্মদ কায়সার থসরু এ প্রতিবেদককে বলেন, কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা থাকে তাহলে ১ বছরের মধ্যে উক্ত মামলা নিস্পত্তি করতে হবে। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা পদোন্নতির সুপারিশের যোগ্য কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যদি কারও বিরুদ্ধে কোন সুনির্দিষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ থাকে তাহলে আপনারা আমাকে জানাবেন। দুর্নীতিবাজদের পদোন্নতির কোন সুযোগ নেই।
Discussion about this post