নিজস্ব প্রতিবেদক : শিশুদেরকে অন্যের সঙ্গে তুলনা না করে তাদের নিজ নিজ প্রতিভা বিকশিত করার সুযোগ দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যায়ের (সিভাসু) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান।
শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় নগরীর নাসিরাবাদ সরকারি (বালক) উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মাইজভাণ্ডারী একাডেমির উদ্যোগে সপ্তদশ শিশু-কিশোর সমাবেশের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার উদ্বোধনকালে তিনি একথা বলেন।
উপমহাদেশের প্রখ্যাত সূফি দরবার, মাইজভাণ্ডার শরিফের প্রতিষ্ঠাতা আধ্যাত্ম পুরুষ ও বিশ্বময় সমাদৃত ত্বরিকা-ই- মাইজভাণ্ডারীয়ার প্রবর্তক গাউসুল আযম হযরত মাওলানা শাহ্ সুফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ্ মাইজভাণ্ডারী (ক.)র ১১৯তম বার্ষিক ওরস শরিফ উপলক্ষে শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.) ট্রাস্টের উদ্যোগে ১০ দিন ব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসাবে মাইজভাণ্ডারী একাডেমি এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন।
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান বলেন, যেকোন জাতি যদি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চায় এবং বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায় তবে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। একটি জাতির মেরুদন্ড হচ্ছে শিক্ষা। নলেজ ইজ পাওয়ার।
মানুষ যেমন মেরুদন্ড ছাড়া দাঁড়াতে পারে না একইভাবে শিক্ষা ছাড়াও কোনো জাতি এগিয়ে যেতে পারবে না। শিক্ষা তখনই পরিপূর্ণ হবে যখন শিক্ষার সঙ্গে অন্যান্য উপকরণগুলো যুক্ত থাকবে।
যেমন শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, এক্সট্রা কারিকুলামে যুক্ত থাকতে হবে। সে হিসেবে মাইজভাণ্ডারী একাডেমির এই আয়োজন জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার আয়োজন। এই প্রতিযোগিতায় যারা অংশগ্রহণ করেছে তাদের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতার মনোভাব সৃষ্টি হবে। ফলে শিশু-কিশোরদের মধ্যে যে সুপ্ত প্রতিভা রয়েছে তা বিকশিত হবে। তাদের মধ্যে নেতৃত্বগুণ সৃষ্টি হবে। তাদের মনের বিকাশ হবে।
এই প্রতিযোগিতায় অনেকে সফলতা লাভ করবে অনেকে পারবে না। এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কথায় আছে একবার না পারলে দেখো শতবার। হয়তো এমনকিছু তোমাকে দিয়ে হবে যা পুরো জাতিকে গর্বিত করবে।
অভিভাবকদের উদ্দ্যেশে সিভাসু ভিসি বলেন, অভিভাবকদের একটা সমস্যা আছে। যেমন আমরা এখন আমাদের ছেলে মেয়েদেরকে কোনো প্রতিযোগিতার জন্য তৈরি করি তখন তাদেরকে বলি এই ছেলে এমন, তুমি এমন কেন নয়? সে এটি পারছে তুমি কেন পারছো না পাশের বাড়ি এই ছেলে মেয়ে এভাবে চলে, তুমি কেন ওভাবে চলতে পারো না? এটা একটা বড় ভুল। এ রকম ভুল করা যাবে না। কারণ সৃষ্টিকর্তা একেক জনকে একেক গুণে সৃষ্টি করেছে। একজন শিশু কোনো একটা বিষয়ে পারদর্শী হবে, অন্যজন অন্য বিষয়ে পারদর্শী হবে। তাই তাদেরকে সুস্থ প্রতিযোগিতার কথা বলবেন কিন্তু এর কারণে যেন তার মনবল নষ্ট হয়ে না যায়। তাদের নিজ নিজ দক্ষতায় এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। তাহলে একটি উন্নত জাতি গড়ে উঠবে।
সপ্তদশ শিশু-কিশোর সমাবেশের প্রধান সমন্বয়ক এইচ এম রাশেদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.) ট্রাস্টের অধ্যাপক এ ওয়াই এমডি জাফর।
অতিথি ছিলেন শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.) ট্রাস্টের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. জসীম উদ্দিন, একাডেমির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন।
সপ্তদশ শিশু- কিশোর সমাবেশের সমন্বয়ক আরেফিন রিয়াদের সঞ্চালনায় এই সময় উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা মাকসুদুর রহমান হাসনু, নুরুল করিম নুরু, সমন্বয়ক এইচ আর মেহবুব জিকো, আবুল মনছুর, আশরাফুজ্জামন, রামগড় থানার ওসি মোহাম্মদ মঈন উদ্দীন, আশরাফ উদ্দিন সিদ্দিকী, বিপ্লব দে, মেজবাহ উদ্দিন, শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.) ট্রাস্টের প্রশাসনিক কর্মকর্তা তানভীর হোসাইন, তাজকিয়ার সভাপতি ডা. কৌসিক সাইমন শুভ প্রমুখ।
সপ্তদশ শিশু-কিশোর সমাবেশ উপলক্ষে ক্বিরাত, হামদ্/না’ত, মাইজভাণ্ডারী সংগীত, নজরুল সংগীত, রবীন্দ্র সংগীত, কবিতা আবৃতি, দেশাত্মবোধক গান, উপস্থিত বক্তৃতা, ফটোগ্রাফি, রচনা, চিত্রাংকন, Spelling Bee, আইডিয়াহান্ট, সূফি অলম্পিয়াড ও সীমিত চলচ্চিত্রসহ ১৯টি বিষয়ে চার সহস্রারাধিক শিশু-কিশোর অংশগ্রহণ করেন।
বিজয়ীদের আগামী ১০ জানুয়ারি শুক্রবার সকাল ৯টায় নগরীর নাসিরাবাদ সরকারী (বালক) উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, চট্টগ্রাম-এ অনুষ্ঠিতব্য সপ্তদশ শিশু-কিশোর সমাবেশে পুরস্কার বিতরণ করা হবে।
Discussion about this post