আল আমিন,নাটোর প্রতিনিধি :- নাটোরের বাগাতিপাড়ায় গত ৫ বছরে এক ছটাক ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি উপজেলা খাদ্য বিভাগ। প্রতি বছরই বোরো ও আমন ধান সংগ্রহের নির্দেশনা দিলেও তা সংগ্রহ করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। ফলে বছরের পর বছর ধান সংগ্রহ না করেই চলছে উপজেলা খাদ্য বিভাগের কার্যক্রম। স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, গুদামে ধান দিতে গেলে আর্দ্রতা যাচাই, পরিবহন খরচ, অনলাইনে নিবন্ধন, ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনসহ নানা ঝামেলা থাকে। তাছাড়াও সরকারের বেঁধে দেওয়া মূল্যের চেয়ে বাজারে ধানের দাম বেশি পাওয়া যায়। তাই তারা গুদামে ধান না দিয়ে বাজারে বেশি দামে বিক্রি করেন। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত উপজেলা খাদ্য বিভাগে কোনো ধান সংগ্রহ হয়নি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে আমন ধান সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছিল। যা ২০২৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলছিল। আমন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২৩৬ টন। প্রতি কেজি ধানের দাম ধরা হয়েছিল ৩০ টাকা। কিন্তু কোনো ধান সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ। এর আগে গত বোরো মৌসুমেও কোনো ধান সংগ্রহ করতে পারেনি তারা। এদিকে ২০২৪- ২০২৫ অর্থবছরের জন্য গত ১১ নভেম্বর থেকে ধান সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যা ২০২৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে। এবার ধানের দাম সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাজারে বেশি। সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে ৪৬১ টন। প্রতি কেজি ধানের মূল্য ধরা হয়েছে ৩৩ টাকা। কিন্তু দেড় মাস অতিবাহিত হলেও কোনো ধান সংগ্রহ করতে পারছে না কতৃপক্ষ । এ নিয়ে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত কোনো ধান সংগ্রহ করতে পারেনি উপজেলা খাদ্য বিভাগ। তবে লক্ষ্যমাত্রা পুরণের চেষ্টা চলছে বলে জানায কতৃপক্ষ। এদিকে স্থানীয় বাজারে দাম বেশি থাকায় সময় পেরিয়ে গেলেও কোনো কৃষকই অনলাইনে আবেদন করেননি। উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে ২০ হাজার ৮৪১ টন, ২০২৩-২০ অর্থবছরে ৬ হাজার ২৪০ হেক্টর জমিতে ২২ হাজার ৭৬ টন এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ও হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে ৩৪ হাজার ৫৬ টন ধান উৎপাদন হয়েছে। উপজেলার ঘোরলাজ মহল্লার মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, গুদামের চেয়ে বাজারে ধানের দাম বেশি। এ কারণে কৃষকরা গুলামে ধান দেন না। আবার বাজারে ধান বিক্রি করতে কোনো ঝামেলা নেই, নিয়ে গেলেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু গুদামে ধান দিতে গেলে ভালো করে রোদে শুকাতে হয়। পরিবহন খরচ, অনলাইনে নিবন্ধন, ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনসহ নানা ঝামেলা পোহাতে হয়। এ কারণে মানুষ গুদামে ধান দিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। উপজেলার সদর ইউনিয়নের যুগিপাড়া এলাকার আলাল উদ্দিন (৫৮) জানান, অম্লতা বা বিভিন্ন অজুহাতের কারণে তারা গুদমে যেতে পারেন না। আর ফড়িয়ারা গুদামের চেয়ে বেশি দামে বাড়ি থেকেই ধান নিয়ে যায়। তাই তারা ফড়িয়াদের কাছেই ধান বিক্রি করছেন। উপজেলার মালফি বাজারে ধান ব্যবসায়ী মজনু (৫৫) বলেন, গুদামের চেয়ে বাজারে ধানের দাম বেশি হওয়ায় কৃষকদের গুদামে ধান বিক্রির কোন আগ্রহ নেই। কৃষকরা যেখানে ধানের দাম বেশি পাচ্ছেন, তারা সেখানেই ধান বিক্রি করছেন। উপজেলা ধান-চাল সংগ্রহ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার হা-মীম তাবাসসূস প্রভা বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। বিষয়টি নিয়ে খাদ্য কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলবেন। এ বিষয়ে উপজেলা অতিরিক্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রক ডালিম কাজী জানান, ২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ধানই সংগ্রহ করতে পারেনি উপজেলা খাদ্য অধিদপ্তর। ধান সংগ্রহের জন্য তার দপ্তরের পক্ষ থেকে লিফলেট, মাইকিংসহ যাবতীয় প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছে। বাজারমূল্যের চেয়ে সরকার নির্ধারিত দাম কম হওয়ায় তাদের কাছে ধান দিচ্ছেন না কৃষকরা। সরকার নির্ধারিত দাম যদি বাজারের চেয়ে বেশি হতো, কৃষকরা অবশ্যই গুদামে ধান দিতেন বলে জানান তিনি।
Discussion about this post