আল আমিন, নাটোর প্রতিনিধি :- ছোটবেলা থেকে কৃষি উদ্যোক্তা হবার সখ ছিল মাফিজুল ইসলামের। কিন্তু নিজস্ব জমি ও আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকায় তা সম্ভব হয়নি। তবুও হাল ছাড়েননি তিনি। মাত্র ৫ কাটা জমি লিজ নিয়ে বারি-৪ জাতেন বীচিবিহীন পেঁয়ারা চাষ করে বানিজ্যিক ভাবে সফলতা পেয়েছেন মাফিজুল। বর্তমানে ৪ বিঘা জমিতে এ পেঁয়ারা চাষ করেছেন। বারি-৪ জাতের পেঁয়ারা চাষ করে বেশ সুনাম অর্জন করেছেন। মো. মাফিজুল ইসলাম নাটোর সদর উপজেলার সুগার মিলস লিংগুড়িয়া (তালপট্টি) এলাকার মো.আখতার হামিদের ছেলে। তরুণ এই উদ্যোক্তা জানান, ২০২০ সালে রাঙামাটি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে উত্তরবঙ্গের প্রতিনিধি হিসেবে ১০০টি বারি-৪ জাতের পেঁয়ারা চারা সংগ্রহ করে সিংগাদহ এলাকায় পরীক্ষামূলক ভাবে ৫ কাটা জমিতে এ চারা রোপন করেন তিনি। রোপনের পর সঠিক পরিচর্চায় ৬ মাসের মাথায় ফলন আসতে শুরু করে। এ জাতের পেঁয়ারার গড় ওজন ৪০০ গ্রাম হলেও তার বাগানে ৬০০/৭০০ গ্রাম পর্যন্ত ফলন হয়েছে। তিনি বাজারে প্রতিমণ পেঁয়ারা ২৬০০-২৮০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। ফুল ছাড়াই ৬০% ফল হয়ে থাকে এ জাতের গাছে। ১২ মাস এই পেঁয়ারা ফলন হয়ে থাকে। গাছের গড় আয়ু ১৫/২০ বছর। গাছ থেকে ফল সংগ্রহের ১০-১৫ দিন নরমাল অবস্থায় থাকে। ফলে সহজে পচে যায় না ও নস্টও হয় না। এ জাতের পেঁয়ারা খেতে মিষ্টি ও মচমচে সুস্বাদু হওয়ায় সারা দেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে দেশে এখনো পর্যাপ্ত পরিমাণে বানিজ্যিক ভাবে চাষ শুরু হয়নি। ভালো ফলন, বাজার মূল্য ও চাহিদা থাকায় নিজেই কলমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন শুরু করেন। ৪ বিঘা জমি লিজ নিয়ে ১০০০টি পেঁয়ারা চারা রোপন করেন। বর্তমানে তার বাগানে প্রায় ৩ হাজারের উপরে চারা রয়েছে। এ বাগান থেকে ৩ মাসে ২ লাখ টাকার চারা বিক্রি করেছেন তিনি। প্রতি পিচ চারা ১০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। সারাদেশ থেকে তার এ চারা নিতে অসংখ্যক কৃষক ও নতুন নতুন উদ্যোক্তারা আসছেন। উদ্যোক্তা মো. মাফিজুল ইসলাম বলেন, এ পেঁয়ারা গাছের চারা সংগ্রহ করতে রাঙামাটি গিয়েছি। দেশে প্রথম বানিজ্যিক ভাবে এ পেঁয়ারা চাষ শুরু করি এবং সফল হয়েছি। প্রথমে অনেকের কটুকথা শুনতে হয়েছে। অনেকের ধারণা ছিল, এ ফল চাষ নাটোরে সম্ভব নয়। এটা মিথ্যা প্রচারণা। তবে আমি সেই ভুল ধারণা ভেঙ্গে দিয়েছি। যখন ফলন শুরু হলো, তখন মানুষ বাগানে এসে দেখে মুগ্ধ হয়েছে। বিচি ছাড়া পেঁয়ারা দেখে। এখন প্রতিদিন প্রচুর চারার অর্ডার আসছে। আপেল, নাশপাতি এবং পেঁয়ারার তিনটি জিনতন্ত্রকে একত্র করে এ জাতটি উদ্ভাবন করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, নতুন উদ্যোক্তা মাফিজুলের বাগানে প্রথম বিচি ছাড়া পেঁয়ারা দেখলাম। আকার অনেক বড় বড়, খেতেও অন্য পেঁয়ারার চেয়ে বেশি মিষ্টি ও স্বাদ। আমি মাফিজুল ইসলামের কাছ থেকে ৪ টি এ জাতের চারা ক্রয় করেছি। এবং বাড়ির ছাদে রোপন করেছি। ফলও এসেছে চারা গাছে। নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, এ পেঁয়ারাটি ভোক্তার কাছে খুবই জনপ্রিয়। অন্য পেঁয়ারার চেয়ে বাজারে বেশি দামে চাষী বিক্রি করতে পারে। এর বেশ চাহিদা রয়েছে আমাদের দেশে। এ জাতের পেঁয়ারার ফলন সারা বছর হয়েছে। নাটোরে একজন চাষি বানিজ্যিক ভাবে চাষ করে সফল হয়েছেন। কৃষি বিভাগ থেকে এ পেঁয়ারা চাষ বৃদ্ধির জন্য চাষী ও নতুন উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করা হবে।
Discussion about this post