মেহেন্দিগঞ্জ প্রতিনিধি: বরিশালের (মেহেন্দিগঞ্জ -হিজলা) দুই উপজেলার মাঝখানে মেঘনার বুকে জেগে উঠা প্রায় সাড়ে ৩ হাজার একর জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। জনগণের আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠার জনপদে পরিণত হয়েছে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর চর। প্রায় ৫ হাজার মানুষের বসতী এ চরে। এদের অধিকাংশই কৃষক এবং জেলে। পাশ্চবর্তী উপজেলার আব্দুল গাফফার তালুকদার ও তার বাহিনীর অন্যতম বোবা রত্তন এর হুমকি ধামকিতে শান্তিতে বসবাস করতে পারছেন না চরের মানুষ। একের পর এক চাঁদাবাজি, গরু-মহিষ লুটসহ নির্যাতনের ভয়ে চর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন কেউ কেউ। দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী ৪টি মৌজার জমি দাবী করে তা দখলে নিতেই মূলত এমনটাই করে যাচ্ছেন অভিযুক্তরা।
বিরোধপূর্ণ ৪টি মৌজা বর্তমানে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের সাথে সংযুক্ত থাকলেও তা মানতে নারাজ হিজলা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আব্দুল গাফফার তালুকদার। গত ৫/৬ দিন আগে ওই ৪টি মৌজা নিজ উপজেলা হিজলা গৌরব্দি ইউনিয়নের দাবী করে তা উদ্ধার করতে দলবল নিয়ে চরে যান আব্দুল গাফফার তালুকদার। সংবাদ পেয়ে মেহেন্দিগঞ্জের গোবিন্দপুর ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি লুৎফর রহমান তালুকদার এর নেতৃত্বে ভুক্তভোগী পরিবার এবং এলাকাবাসী সেখানে গেলে চরম উত্তেজনা বিরাজ করে। এক পর্যায় মেহেন্দিগঞ্জের গোবিন্দপুর ইউনিয়নের মানুষের প্রতিরোধের মুখে পড়ে প্রশাসনের পাহারায় ফিরে যেতে বাধ্য হন আব্দুল গাফফার তালুকদার এর বাহিনী।
এ নিয়ে দুই উপজেলার দুই ইউনিয়নের মানুষ পাল্টা পাল্টি মানববন্ধন এবং বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন। এর ফলে সেখানে বসবাসরত প্রায় ৫ হাজার পরিবার উচ্ছেদ আতংকে ভুগছেন। জোয়ার-ভাটায় তাল মিলিয়ে চলা এখানকার মানুষের জীবন বিপন্ন হওয়ার পথে। ধান, সবজি, হাঁস-মুরগি, মাছ ও গরু -মহিষে সমৃদ্ধ এই চরের বর্তমান অবস্থা। ধান আর দুলট মৌসুমে কৃষক আর চাষারা ভূমি দস্যু আর চোর ডাকাতের আতংকে থাকেন
। স্বরেজমিনে গত বুধবার (২৭ নভেম্বর) ২০২৪ ইং সকালে মেহেন্দিগঞ্জের গোবিন্দপুর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, বিরোধী ৪টি মৌজা নিজেদের ভূখন্ডের দাবী করে তা যেকোন মূল্য রক্ষার দাবীতে ভূক্তভোগী পরিবার এবং এলাকাবাসী দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল এবং সমাবেশ করেন। এসকল কর্মসূচীতে হিজলা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আব্দুল গাফফার তালুকদারকে ভূমি দস্যু হিসাবে আখ্যা দিয়ে তার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে শান্তিমূলক বিচার দাবি করেন এবং কঠোর হুশিয়ারী দেন। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শাহাব উদ্দিন বলেন, উল্লেখিত ৪টি মৌজা আমাদের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের সাথে সংযুক্ত করে ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়। ওই মৌজা এবং জমির মালিক গোবিন্দপুর ইউনিয়ন। জমির মালিকগন তাদের সম্পত্তি এবং ভিটেমাটি রক্ষায় দখলবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। যেকোনো মূল্যে তাদের জমি তারা রক্ষা করবে।
ওই চরের আবু বক্কর হাওলাদার, মোঃ বাকের খান, জয়নাল মাঝি, নুরুল ইসলাম শাহ্, মাহামুদ রাঢ়ী ও আলমগীর জমাদার বলেন, আমাদের বাপ-দাদার মালিকানা ভোগদখলীয় জমি জোড়পুর্বক দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে হিজলার গাফফার তালুকদারের নেতৃত্বে বোবা রত্তনসহ ৩শতাধিক লাঠিয়াল। বিরোধি মৌজাগুলো হলো, চরভোলা, জোয়ারখালী, চর মেঘা ও মেঘা। এসব মৌজাগুলো মেহেন্দিগঞ্জের গোবিন্দপুর ইউনিয়নের সাথে ২০১৬ সালে সংযুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। ২৩/০৪/ ২০১৯ সালে বরিশাল রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর কর্তৃক ৩১১০০৬০০১০৮ নং স্মারকে ২৩ এপ্রিল ২০২৩ ইং
মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের ৪টি নথিপত্র ফেরত দেওয়ার জন্য হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সহকারী কমিশনার ভূমিকে পত্র পাঠান বলেও জানা যায়। এ সময় চর রক্ষায় তারা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন। এ বিষয়ে হিজলার আব্দুল গাফফার তালুকদার বলেন, ওই ৪টি মৌজা হিজলা গৌরব্দি ইউনিয়নের, গোবিন্দপুর ইউনিয়নের সাথে সংযুক্ত করে যে গেজেট করা হয়েছে, সেই গেজেট এর বিরুদ্ধে আমরা মামলা করেছি, ওই জমি আমাদের হিজলা উপজেলার নামেই রয়ে গেছে, আমরা আমাদের উপজেলার জমি উদ্ধার করবোই। এ বিষয়ে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মোঃ মশিউর রহমান বলেন, ওই ৪টি মৌজা নিয়ে বিরোধের কথা শুনেছি, এগুলো মেহেন্দিগঞ্জের গোবিন্দপুর ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হলেও এর নথিপত্র মেহেন্দিগঞ্জে আসেনি। আমরা দুই উপজেলার এসিল্যান্ড মিলে চরের জমি প্রকৃত মালিকদের বুঝিয়ে দেওয়ার উদ্যােগ নিবো।
Discussion about this post