আল আমিন, নাটোর প্রতিনিধি :- গ্রামের ভেতর দিয়ে রাস্তা। সে রাস্তার ছোট ছোট টিনের চালায় হলুদ সরষে রঙের কুমড়ো বাষ্ট্র। টুলে বসে মেয়েরা তৈরি করছেন এসব কুমড়ো বড়ি। রাতে ভেজানো ডাল মেশিনে ভাঙিয়ে সেই ডালে পানি, কালো জিরা ও অন্যান্য মসলা মিশিয়ে মাখিয়ে নিচ্ছেন। কেউ কেউ চালে গুটি গুটি করে কুমড়ো বড়ি দিচ্ছেন। মেয়েদের কুমড়ো বড়ি তৈরির এমন দৃশ্য নাটোরের সিংড়া উপজেলার কলম ইউনিয়নের পুন্ডরী গ্রামের। এ গ্রামের ৮ জন নারী উদ্যোক্তা বাণিজ্যিকভাবে কুমড়ো বড়ি তৈরি করছেন প্রায় ৫ থেকে ৬ বছর ধরে। শীতের ৪ থেকে ৫ মাস কুমড়ো বড়ি তৈরি করে সংসারের বাড়তি আয় করছেন তারা। নারী উদ্যোক্তারা বলছেন, সব খরচ বাদে মৌসুমে এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা আয় হয় তাদের। এতে অনেকের সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা। বদলে গেছে একসময়ের অভাব- অনাটনের সংসারের হালচিত্র। সাধারণত কার্তিক মাস থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত ছোট বড় সব বয়সি নারীরাই এ কাজে ব্যস্ত সময় পার করেন এখানে। পুণ্ডরী গ্রামের প্রথম নারী উদ্যোক্তা রাশেদা বেগম জানান, তার বাবার বাড়ি পাবনার চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল এলাকায়। সেখান থেকেই কুমড়ো বড়ি তৈরির কাজ শিখেছেন তিনি। বিয়ের পর স্বামীর সংসারের অভাব দেখা দিলে কুমড়ো বড়ি তৈরি করে বিক্রির কথা ভাবেন। প্রথমে অল্প পরিমাণ কুমড়ো বড়ি তৈরি করে বাজারে বিক্রি করা শুরু করেন তিনি। তাতে লাভবান হওয়ায় স্বামীর সহযোগিতায় বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেন দুই পাশে বড়ি তৈরির কাজ। রাশেদা বেগমের সফলতা দোলের মারো ে বেশ কয়েকজন নারী উদ্বুদ্ধ বদায়ী তোর করা শুরু করেন। রাশেদা বেগম ছাড়াও এই পুন্ডরী গ্রামের নুরজাহান বেগম, আলেয়া বেগম ও কাজলী বেগম সহ ৮ নারী উদ্যোক্তা এখন কুমড়োবড়ি তৈরি করে সংসারে বাড়তি আয় করছেন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২শ কেজি থেকে আড়াইশ কেজির কুমড়ো বড়ি তৈরি করছেন এ গ্রামের নারী উদ্যোক্তারা। এর মধ্যে রাশেদা বেগম একাই করেন ৫০ থেকে ৬০ কেজির কুমড়ো বড়ি তৈরির কাজ। টিনের নারী উদ্যোক্তারা জানান, ডালের সাথে কালো জিরা, সয়াবিনসহ নানা রকম উপকরণ মিশিয়ে কুমড়ো বড়ি তৈরি করা হয়। প্রতি কেজি কুমড়ো বড়ি তৈরি করতে তাদের খরচ হয় ১৫ থেকে ১০০ টাকা। বাজারে পাইকারী বিক্রি হয় ১৩০ থেকে ৩৫ টাকা আর খুচরা বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে। এতে খরচ বাদে প্রতি কেজিতে লাভ হয় ৩০ থেকে ৫০ টাকা। সিংড়া বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ি শফিকুল ইসলাম জানান, পুন্ডরী গ্রামের নারী উদ্যোক্তাদের হাতে তৈরি করা কুমড়ো বড়ি খেতে ভালো লাগে বলে বাজারে এ বড়ির চাহিদা বাড়ছে। সিংড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম বলেন, বাঙালির খাদ্য তালিকায় কুমড়ো বড়ি বেশ জনপ্রিয়। উন্নতবাজার ব্যবস্থা ও কারিগরি সহযোগিতা পেলে গ্রামের নারী উদ্যোক্তারা আরো বেশি উৎসাহী হয়ে এই কাজে আত্মনিয়োগ করবে।
Discussion about this post