আল আমিন, নাটোর প্রতিনিধি :- ভোর থেকেই শুরু হয় শ্রম হাটে মানুষের আনাগোনা। দূর- দূরান্ত থেকে কাজের সন্ধানে আসা শ্রমজীবী নারী-পুরুষের আনাগোনায় মুখর হয়ে উঠে নাটোরের গুরুদাসপুরের শ্রম হাট। প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের বনপাড়া হাটিকুমরুল মহাসড়ক সংলগ্ন নয়াবাজার এলাকায় এ হাট বসে। পণ্যের মতো এ হাটে দর বেচাকেনা হয় মানুষের শ্রম। ভোরের আলো ফুটতেই শ্রম বিক্রেতা ও ক্রেতার উপচে পড়া ভিড়ে জমে উঠে হাট। ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এ হাটে আসেন নানা বয়সের শ্রমজীবী নারী-পুরুষ। এদিকে হাটে শ্রমিক খুঁজতে আসা কৃষকরা পেয়ে যান তাদের কাজের জন্য শ্রমিক। সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নে নয়াবাজার বনপাড়া হাটিকুমরুল মহাসড়কের দুপাশে শ্রমজীবী নানা বয়সের মানুষের উপচে পড়া ভিড়। তাদের হাতে ব্যাগ, কাস্তে ও ভার। কেউ কেউ আছেন খালি হাতেই। শ্রমজীবী মানুষগুলো কেউ স্থানীয় নন। ট্রাক ও অন্য কোনো যানবাহনে সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও নিজ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসেন এ শ্রমজীবী মানুষ। হাটে চলছে কৃষকদের সঙ্গে শ্রমজীবীদের দর কষাকষি। জনপ্রতি পুরুষ শ্রমিক বিক্রি মূল্য ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। আর নারী শ্রমিক বিক্রি মূল্য ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। এতে শ্রমজীবীরা যেমন পাচ্ছেন কাজ, তেমনি কৃষকরা পাচ্ছেন উপযুক্ত শ্রমিক। হাটে আসা বেশ কয়েকজন পুরুষ শ্রমিক বলেন, আগের তুলনায় শ্রমের মূল্য বেড়েছে। এদিকে বেড়েছে যানবাহন খরচ, বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। এ মূল্যতেও সংসার ঠিকমতো চলে না। হাটে শ্রমিক বেড়েছে, কাজ বাড়েনি। তাই অনেক সময় কাজ না পেয়ে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরতে হয়। এদিকে নারী শ্রমিক নাসুমা, নাজমা আক্ষেপ করে বলেন, মাঠে পুরুষ ও নারী শ্রমিক সমপরিমাণ কাজ করেন। কিন্তু শ্রম মূল্য পুরুষের চেয়ে আমাদের কম। হাটে শ্রমিক কিনতে আসা সেলিম, রনি জানান, গত বছর জনপ্রতি শ্রমিক বেড়ে হয়েছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত। এদিকে বাজারে বীজ, সার, কীটনাশকসহ যাবতীয় জিনিসের দাম বেড়েছে। এতে ফসল উৎপাদন খরচ আগের তুলনায় অনেক বাড়বে। ফসলের ন্যায্যমূল্য না পেলে আমাদের লোকসানে পড়তে হবে। স্থানীয় এলাকাবাসী রফিকুল ইসলাম বলেন, এ শ্রমিক হাট উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের নয়া বাজার এলাকার এক ঐতিহ্যবাহী হাট। গত ২০ বছর ধরে বসছে এ হাট। বছরজুড়ে প্রতিদিন ভোরে বসে এ হাট। শীত মৌসুমে ধানকাটা, রসুন লাগানো মৌসুম হওয়ায় শ্রমিক সমাগম কয়েক গুন বাড়ে। হাটকে ঘিরে চা-স্টল, হোটেল ও নানা দোকানপাট বসে। আশপাশের অনেক মানুষের হয়েছে কর্মসংস্থান। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশিদ বলেন, শ্রমিক হাট বসায় কৃষকরা সহজেই পাচ্ছেন শ্রমিক। এতে অনেকাংশে সহজতর হয়েছে এখানকার কৃষিকাজ।
Discussion about this post