মাহমুদ হাসান রনি, চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গার দর্শনা পৌরসভা দ্বিতীয় শ্রেণীতে রুপান্তিত হলেও সেবার মান থেকে পিছিয়ে রয়েছে। দামুড়হুদার উপজেলার দর্শনা পৌরসভাটি ১৯৯২ বিএনপি সরকারের আমলে দর্শনা ইউনিয়নকে বিভক্তি করে প্রতিষ্টিত লাভ করে দর্শনা পৌরসভা। ২০ টি গ্রাম নিয়ে গঠিত হয় দর্শনা পৌরসভাটি। ২য় শ্রেণীর এ পৌরসভা হলেও সেবার মানের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে। গ্রামে গ্রামে রাস্তার পাশের ড্রেন গুলো পরিস্কার না করায় সেগুলোয় ময়লার স্থুপে বন্ধ হয়ে আছে। কিছু কিছু রাস্তারও রেহাল দশা।ফলে ন্যায্য সুবিধা থেকে পৌরবাসি বঞ্চিত হচ্ছে।পৌর এলাকার তেমন উন্নয়ন না হলেও দ্বিতল পৌর ভবনটির সীমানা বাড়িয়ে চকচকে করা করা হয়েছে। চকচকে। চুয়াডাঙ্গা জেলার সীমান্ত ঘেষা দর্শনার মাথাভাঙ্গা নদীর তীরের একমাত্র শিল্প শহর দর্শনা। এ শহরের রয়েছে এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম কেরুজ চিনিকল ও ডিস্টিলারী কমপ্লেক্স।এছাড়া একটি আন্তর্জাতিক সহ ৩ টি রেল স্টেশন, স্থল বন্দর ইয়ার্ড, কাস্টসম্ সার্কেল কার্যালয়, চেকপোষ্ট, সরকারি কলেজ, উপজেলা পশু হাসপাতাল,সরকারী খাদ্য গুডাম, পৌর মার্কেট, দুটি বাজার,পুলিশ থানা,সরকারি বে-সরকারি অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। ঐতিহাসিক নিদর্শনের মধ্যে ছিলো দর্শনা মেমনগরে জমিদার নফর পাল চৌধরীরর বাড়ি, নিল কুঠির, মেমনগর বিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ইত্যাদি। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের ক্ষেত্রেও দর্শনার গুরুত্ব রয়েছে অপরিসিহীম। দর্শনায় সবকটি রাজনৈতিক দলের জেলার শীর্ষ নেতাদের অবস্থান। সবমিলিয়ে জেলার মধ্যে দর্শনার গুরুত্বের কোন কমতি নেই। এ গুরুত্বের কথা ভেবেই তৎকালীন সমাজ সেবকরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দর্শনাকে পৌরসভায় উন্নিতি করণে কাজ করেছিলেন। ১৯৯১ সালের ২৭ নভেম্বর দর্শনাকে পৌরসভায় রূপ দেয়া হয়। পৌরসভার কার্যক্রম শুরু করা হয় পরের বছর অর্থাৎ ১৯৯২ সালে ১ ফেব্রুয়ারী থেকে। প্রতিষ্ঠাকালীন পৌর প্রসাশকের দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন দামুড়হুদা থানা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসলেহ উদ্দিন। পরে ১৭ দিনের দায়িত্ব পালন করেন ততকালীন নির্বাহী ম্যাজিস্টেড ফেরদৌস আলম। ১৯৯২ সালে অনুষ্ঠিত হয় পৌরসভার প্রথম নির্বাচন। এ নির্বাচনে প্রথম পৌর চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন প্রয়াত বিএনপি নেতা আক্তারুল ইসলাম আক্তার। ১৯৯৭ সালে পৌরসভার ২য় নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন আওয়ামীলীগ নেতা মতিয়ার রহমান। পরে পৌর নির্বাচনে বিএনপির পক্ষে ভোটে কেউ দলীয় ভাবে অংশ গ্রহন না করার কারনে পরপর ৪ বারের চেয়ারম্যান/মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন প্রায়ত মেয়র মতিয়ার রহমান। পরে১ গত ২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচিত হন মহিদুল ইসলাম। ততকালীন দর্শনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবেই দায়িত্ব পালন করেছিলেন মহিদুল ইসলাম। পৌরসভা প্রতিষ্ঠার প্রায় ১৯ বছর পর ২০১১ সালের ২২ সেপ্টেম্বরে দর্শনা পৌরসভাকে ৩য় শ্রেনী থেকে ২য় শ্রেনীতে উন্নিত করা হয়। শুরু থেকে ভালই চলছিলো পৌরসভার কার্যক্রম। সে সময়কার ৪র্থ শ্রেনীর পৌরসভায় যেমন হয়েছিলো উন্নয়ন, তেমনিভাবে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন/ভাতা সঠিক ভাবে মাসে মাসেই পরিশোধ করা হতো। সমস্যা সৃস্টি হয় ২ হাজার সালের শুরুতে। পৌর সেবার মান সেভাবে না বাড়লেও স্টাফ সংখ্যা বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। আজ থেকে বছর পাঁচেক আগেও পৌরসভার স্টাফ সংখ্যা ছিলো ৬৪ জন। বর্তমান সে সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে ৭৩ জনে। এদের মধ্যে নিয়মিত ২২, চুক্তিভিত্তিক ২৯ ও পরিচ্ছন্নকর্মি সংখ্যা ২২ জন। দর্শনা পৌরসভার আয়ের উৎস্যের মধ্যে রয়েছে হোল্ডিং কর, হাট-বাজার ইজারা, মার্কেট ভাড়া, শৈচাগার ইজারা, নাগরিকদের বিভিন্ন ধরণের সনদপত্র, সার্ভে, টোল আদায়, রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইকের লাইসেন্স ও ট্রেড লাইসেন্স থেকে। যা পৌর তহবিলে জমা হতে বছরে প্রায় ২ কোটি টাকা। ব্যায়ের খাতের মধ্যে অন্যতম ছিলো মেয়র/কাউন্সিলরদের সম্মানিভাতা ও স্টাফদের বেতন/ভাতা। প্রতি মাসে ১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা হিসাব অনুযায়ি বছরে ১৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। এ দিকে স্টাফদের বেতন ভাতা হিসেবে মাসে গুনতে হচ্ছে প্রায় ১৬ লাখ টাকা। বছরে যার হিসাব দাড়ায় ১ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ফলে মেয়র. কাউন্সিলর ও স্টাফদের বেতন/ভাতা বাবদ বাৎসরিক ব্যায় ছিলো ২ কোটিরও বেশী টাকা। যে কারণে আয়ের থেকে ব্যায়ের পরিমান বেশী হওয়াতে প্রতি বছরই স্টাফদের বেতনে পরতো ঘাটতি। ২০০০ সাল থেকে স্টাফদের বেতন/ভাতায় ঘাটতি কম বেশী হলেও তা অতিরিক্ততে পরিণত হয় ২০১৬ সালে। সে সময়কার হিসাব রক্ষক রুমি আলম পলাশের লাগামহীন দূর্নীতিতে যেমন মুখ থুবড়ে পরে পৌর উন্নয়ন, তেমনি মাসের পর মাস বেতন বাকী হতে থাকে স্টাফদের বেতন। রূমি আলম পলাশের বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতি,ঠিকাদারের নামে টাকা উত্তোলন,ভূয়া বিজ্ঞাপন বিল উত্তোলন নিয়ে দূর্নীতি দমন কমিশনে মামলা সহ রয়েছে বহু অভিযোগ। ফলে সাময়িক বহিস্কারের পর তাকে ডিমোশন দিয়ে ক্যাশিয়ার করা হয়। এক পর্যায়ে তাকে আরো নিচে নামিয়ে অপরেটরের দায়িত্ব দেয়া হয়। তবে তিনি ওই দায়িত্ব পালন ঠিকমতো করেন না শারীরিক সমস্যা দেখিয়ে। এ দিকে ৫ আগস্টের পর দায়িত্ব গ্রহন করেছে অর্ন্তবর্তিকালীন সরকার। এ সরকার পর্যায়ক্রমে দেশের সবকটি সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভার মেয়রদের অপসারণ করে। সরকার দর্শনা পৌর মেয়রকে অপসারণ করে গত ১৮ আগষ্ট ও কাউন্সিলরদের করা হয় ২৬ সেপ্টেম্বর। ১৯ আগষ্ট থেকে পৌর প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহন করেন দামুড়হুদা উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) কে এইচ তাসফিকুর রহমান। তিনি দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকে পৌরসভার গতি বাড়িয়েছেন। পৌর তহবিল বৃদ্ধি গ্রহন করেছেন নানামুখি কার্যক্রম। সু-কৌশল ও কর্মদক্ষতার মাধ্যমে তিনি কার্যক্রম পরিচালিত করছেন। এতে চলতি অর্থ বছরেই পৌর তহবিলে জমা হতে পারে আড়াই কোটি টাকারো বেশী। যা বিগত বছরগুলোর তুলনা অনেক বেশী। স্টাফদের বেতন/ভাতা পরিশোধ করেও পৌর তহফিলে জমা থাকতে পারে ৫০/৬০ লাখ টাকারো বেশী। এ দিকে কেএইচ তাসফিকুর রহমান দায়িত্ব গ্রহনের পর পৌর স্টাফদের ২ যুগ থেকে থাকা বকেয়া বেতন/ভাতা পরিশোধের উদ্যোগ নিয়েছেন। ইতিমধ্যে ১০ মাসের বকেয়া বেতন/ভাতার মধ্যে ২ দফায় ৫ মাসের টাকা পরিশোধ করছেন। চলতি সপ্তাতেই বাকী ৫ মাসের টাকা পরিশোধ করতে পারেন বলেও জানা গেছে। সঠিক সময়ে স্টাফরা বেতন/ভাতা পেলে কর্ম চঞ্চলতা বৃদ্ধি পাবে, বাড়বে পৌরবাসির সেবার মান, উন্নতি হবে পৌরসভার এমনটাই মনে করে তাসফিকুর রহমান নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। পৌরবাসি নাগরিক সনদ সহ বিভিন্ন সনদপত্র পেতে হয়রানি বন্ধ ও রাস্তাঘাট নির্মান সহ মেরামতের প্রয়োজন মনে করছে এমন প্রশ্নের জবাবে পৌর প্রশাসক কেএইচ তাসফিকুর রহমান বলেন, পৌরসভার বিভিন্ন উন্নয়নে ইতিমধ্যেই কাজ শুরু হয়েছে। তাছাড়া সনদপত্রের ব্যাপারে যতটা সহজকরণ সম্ভব দ্রুত তা করা হবে।
Discussion about this post