আল আমিন, নাটোর প্রতিনিধি :- নাটোর সদর উপজেলা পরিষদের সৌন্দর্য্য বর্ধন প্রকল্পে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই প্রকল্পের ৬০ লক্ষ টাকার বিল তুলে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। দেশের এমন পরিস্থিতিতে দূর্নীতির এমন ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন নাটোরের সচেতন নাগরিক ছাত্র জনতা। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দূর্নীতিবাজদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন তারা। তবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, বার্ষিক উন্নয়ন সহায়তার থোক বরাদ্ধ থেকে ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে নাটোর সদর উপজেলা পরিষদের সৌন্দর্য্য বর্ধণ প্রকল্পে ৬০ লক্ষ টাকা বরাদ্ধ দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়। চলতি বছরের মে ও জুন মাসে দুইটি ধাপে এই অর্থ বরাদ্দ পায় উপজেলা পরিষদ। জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও বর্তমানে এই প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। তবে টেন্ডার ছাড়াই প্রকল্পের কাজ হওয়ায় দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে খোদ প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। প্রশ্ন উঠেছে কাজের মান নিয়ে। ৬০ লক্ষ টাকার প্রকল্পের কাজ টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানা হয়নি। কোটেশন প্রক্রিয়ায় ছয়টি প্যাকেজে ১৮ জন ঠিকাদারদের কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরমধ্যে তিনজন ঠিকাদার পান পুরো প্রকল্পের কাজ।
অন্যদিকে প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই গত জুন মাসে বিল তুলে নেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ইতোমধ্যে তিনজন ঠিকাদারকে কাজের জন্য পে-অর্ডারের ৫০ শতাংশ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি অর্থ কাজ সম্পন্ন হলে পরিশোধ করা হবে। এদিকে বিনা টেন্ডারে কোটেশন পদ্ধতিতে কাজ করার দায় তৎকালীন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও প্রকল্পের হোপ শরিফুল ইসলাম রমজানের উপর চাপানোর চেষ্টা করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আখতার জাহান সাথী। তবে তার কাছে প্রকল্পের বরাদ্ধ পত্র চাইলে তিনি তা দেখাতে পারেননি। তার দেওয়া তথ্যমতে, গত মে মাসে ৪০ লক্ষ ও জুন মাসে ২০ লক্ষ প্রকল্পের অর্থ এসেছে। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় সময় জটিলতার কারণে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যাওয়া সম্ভব হয়নি। উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবং সে সময়ে প্রকল্পের হোপ বা প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের অনুমোদনক্রমে কোটেশন প্রক্রিয়ায় ঠিকাদার নিয়োগ ও কাজ শুরু করার অনুমতি দেওয়া হয়। কোটা আন্দোলন এবং সরকার পতনের পরে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদাররা গা ঢাকা দেওয়ায় বর্তমানে ঠিকাদারদের প্রতিনিধিরা প্রকল্পের কাজ করছেন। এতে কাজের গুনগত মান সঠিক হচ্ছে না।সেই সাথে কাজ শেষ করতে দীর্ঘ সময় লাগছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা পরিষদের এক কর্মকর্তা জানান, ঠিকাদারদের অনুপস্থিতিতে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সি.এ রবিউল ইসলাম রবিন,তার বড় ভাই গ্রামীন সড়ক অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ কাজের সুপারভাইজার রেজাউল, উপজেলা প্রকৌশলীর সি.এ জালাল উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে বর্তমানে পরিষদের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজগুলো হচ্ছে। গত রবিবার সরেজমিনে সদর উপজেলা পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, সরকারের থোক বরাদ্ধকৃত অর্থে উপজেলা পরিষদের সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য লোহার ছাতা, শিশুদের খেলার স্লিপার, গাড়ি, দোলনা, প্রজাপতি আনা হয়েছে। অন্যদিকে উপজেলা পরিষদের অভ্যন্তরে রাস্তা সংস্কার, আরসিসি রাস্তা, ভবনের ইন্টারকানেক্টটেড রাস্তা, ডরমেটরি সংস্কার, পতাকা স্ট্যান্ড, গ্যারেজ, সিসি রাস্তার কাজ শেষ হয়েছে। দুটি পরিত্যক্ত ভবনের সংস্কার কাজ, শিশুদের খেলার স্লিপার, দোলনা বাসনোর কাজ চলমান রয়েছে। তবে আবাসিক এলাকার সৌন্দর্য্যবধনের কাজ এখনও শেষ হয়নি। বাকি রয়েছে রাস্তার পাশের স্ট্রিট লাইট বসানোসহ প্রকল্পের আনুষাঙ্গিক কাজ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার জানান, প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই টাকা তুলে নেওয়ার মানে হল দুর্নীতি করা। টেন্ডার ছাড়াই কাজ হওয়ায় আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি । অন্যদিকে রাষ্ট্র হারাচ্ছে রাজস্ব। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আব্দুল্লাহ আল নোমান পিয়াস জানান, যে সকল কর্মকর্তার দূর্নীতি করছে তাদের বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। জনগন সচেতন থাকলে এই ধরণের দূর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব।
উপজেলা প্রকৌশলী শেখ মোঃ আবু সাঈদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মাত্র একমাস আগে আমি সদর উপজেলা পরিষদে যোগদান করেছি। আমি আসার আগেই প্রায় ৮০ শতাংশ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে এবং ঠিকাদাররা বিল তুলে নিয়েছে। কাজের মান নিয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, বর্তমানে যে কাজ চলছে তা সন্তোষজনক। তবে আগের কাজগুলোর মান খতিয়ে দেখতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আখতার জাহান সাথী জানান, সময় স্বল্পতার কারণে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। এর পরিবর্তে উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন সম্বনয় সভায় গৃহিত সিদ্ধান্তের আলোকে কোটেশন প্রক্রিয়ায় ঠিকাদার নিয়োগ করে কাজ শুরু করা হয়। জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে প্রকল্পের ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
এছাড়া অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে তিনি বলেন, অর্থ আত্মসাতের কোন ঘটনা ঘটেনি। সামনে অডিট আছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আমরা প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারব। আপনাদের দেখার বিষয়, বরাদ্ধকৃত অর্থ প্রকল্পের কাজে ব্যয় হচ্ছে কিনা। তিনি আরো বলেন, দেরিতে হলেও কোন অনিয়ম ও দুর্নীতি ছাড়াই গুনগত মান ঠিক রেখে প্রকল্পের কাজ সম্পুর্ণ করা হবে।
Discussion about this post