স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর :: গাজীপুরের শ্রীপুরে নিজের বাড়িতে স্ত্রীকে অন্য পুরুষের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে দুজনকেই অস্ত্র দিয়ে কোপানোর অভিযোগ উঠেছে এক যুবকের বিরুদ্ধে। এতে অভিযুক্ত যুবক ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারিয়েছেন। স্ত্রীকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ। এ দিকে ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত যুবক পলাতক রয়েছেন। সোমবার দুপুরে শ্রীপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চন্নাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি ধারালো বটি উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
নিহতের নাম—আশরাফুল ইসলাম (৩০)। তিনি দিনাজপুর জেলার হাকিমপুর উপজেলার পলি বটতলী গ্রামের আব্দুল ওয়াহাবের ছেলে। তিনি শ্রীপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে এসএস ফ্যাশন নামক একটি কারখানা পরিচালনা করেন। গুরুতর আহত হয়েছেন তাসলিমা খাতুন (২৮)। তিনি ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার বালিপাড়া গ্রামের আজিজুল হকের স্ত্রী। তাসলিমা নিহত আশরাফুলের কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন।
এ ঘটনায় হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত হলেন আজিজুল হক (৩০)। তিনি ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার বালিপাড়া গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে। আজিজুল হক পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি। তিনি শ্রীপুর পৌরসভার চন্নাপাড়া গ্রামে জমি কিনে বাড়ি করে বসবাস করছেন।
নিহত আশরাফুল ইসলামের শ্যালক আশরাফুল আলম বলেন, ‘আনুমানিক সাত বছর যাবৎ দুলাভাই আমার বোন ফাতেমাকে নিয়ে শ্রীপুরে থাকেন। তাদের দাম্পত্য জীবনে আনামনি নামে দুই বছর বয়সী একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। দুলাভাই চন্নাপাড়া গ্রামে এসএস ফ্যাশন নামে একটি কারখানা পরিচালনা করেন। আজ দুপুরে স্থানীয়রা ফোন করে বিষয়টি আমাকে জানালে আমি ঘটনাস্থলে এসে দেখি-আজিজুল হকের ঘরের মেঝেতে দুলাভাইয়ের গলাকাটা রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে আছে। পাশেই পড়ে রয়েছে ধারালো একটি বটি।’
তিনি আরও বলেন, ‘গুরুতর আহত নারী তাসলিমা দুলাভাইয়ের কারখানায় চাকরি করেন। তবে কি কারণে দুলাভাইকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে, সে বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’
চন্নাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোস্তফা কামাল জানান, আশরাফুলের পোশাক কারখানায় চাকরি করেন আজিজুলের স্ত্রী তাসলিমা। নিজের কারখানায় চাকরির সুবাদে আজিজুল বাড়িতে না থাকলে প্রায়ই কারখানা থেকে তাসলিমাকে নিয়ে বাড়িতে আসতেন আশরাফুল। তাসলিমার স্বামী আজিজুল না থাকায় আজও তার বাড়িতে আসেন আশরাফুল। দুপুরের দিকে আজিজুল বাড়ি এসে ঘরের দরজা বন্ধ পায়। এরপর অনেক ডাকাডাকি করে ঘরের দরজা খোলার পর আশরাফুলকে ঘরে দেখতে পায়।
স্থানীয় বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন, ‘আজিজুলের বাড়ি থেকে চিৎকার শুনে আমরা ঘটনাস্থলে দৌড়ে আসি। আসতে আজিজুল দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে দেখি আশরাফুলের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ দেখতে পাই। মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে একাধিক আঘাতসহ গলাকাটা রয়েছে। তাসলিমাকে রক্তাক্ত আহত অবস্থায় দেখতে পাই। পরে পুলিশে খবর দেওয়া হলে তারা এসে মরদেহ নিয়ে যায় এবং তাসলিমাকে হাসপাতালে ভর্তি করে।’
এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে গুরুতর আহত এক নারীকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহত আশরাফুলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আশরাফুলের শরীরে বিভিন্ন স্থানে কোপানোর আঘাত রয়েছে। তাঁর অণ্ডকোষ ও পুরুষাঙ্গের বেশির ভাগ অংশ ও গলা কাটা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে আলামত হিসেবে একটি ধারালো বটি উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই খুনি পলাতক রয়েছে। প্রাথমিকভাবে স্ত্রীর পরকীয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন।
Discussion about this post