নিজস্ব প্রতিবেদক : গাজীপুরের শ্রীপুরে সেই ঝাড়ু বিক্রেতা জাহাম্মদ আলী মুনশিকে একটি গরু উপহার দিয়েছেন সৌদিপ্রবাসী এনামুল হক মোল্লা। আর আগের গাভী জোরপূর্বক বিক্রি করে দেওয়া বিএনপির নেতা বাবলু সরকারও টাকা ফেরত দিয়েছেন। এখন গরু ও টাকা পেয়ে খুব খুশি ভুক্তভোগী ঝাড়ু বিক্রেতা জাহাম্মদ আলীর স্ত্রী জামেনা খাতুন। ৩ নভেম্বর রোববার দুপুরে সৌদিপ্রবাসী এনামুল হক মোল্লার ছোট ভাই মাজাহারুল ইসলাম মোল্লা ঝাড়ু বিক্রেতা জাহাম্মদ আলীর বাড়িতে গিয়ে উপহারের তাঁর স্ত্রী জামেনা খাতুনের হাতে গরুটি তুলে দেন। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর অসহায় হতদরিদ্র পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রবাসী। প্রবাসী এনামুল হক মোল্লা শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের বরকুল গ্রামের মৃত মাওলানা আহাদ আলীর ছেলে। তিনি মক্কা নগরীর মেছপালা মহানগর বিএনপির নবগঠিত কমিটির সভাপতি ও বরমী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। ভুক্তভোগী জাহাম্মদ আলী মুনশি (৬৫) উপজেলার গলদাপাড়া গ্রামের মৃত আলী আকবরের ছেলে। তিনি বন থেকে ছন কুড়িয়ে ঝাড়ু তৈরি করে বিক্রি করেন। অভিযুক্ত মো. বাবলু সরকার (৫০) উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের গলদাপাড়া গ্রামের মৃত কাদির সরকারের ছেলে। তিনি কাওরাইদ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি।
প্রবাসী এনামুল হক মোল্লা মোবাইল ফোনে বলেন, ‘শনিবার একজন বয়স্ক নারীর কান্নার একটি ভিডিও আমার নজরে আসে। নারীর কান্না আমার হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে। বিষয়টি খুবই অমানবিক ও দুঃখজনক হওয়ায় আমি সিদ্ধান্ত নেই নারীর মুখে হাসি ফোটানোর। আমি শনিবার রাতেই আমার ছোট ভাই মাজাহারুল ইসলাম মোল্লাকে ফোন করে বিস্তারিত জানাই। পাশাপাশি কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করি। দ্রæত সময়ে কী করে একটি গরু অসহায় হতদরিদ্র পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়, সেই নিদর্শনা দেই ছোট ভাইকে।’ প্রবাসী এনামুল হক মোল্লার ছোট ভাই মাজাহারুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘ভাইয়ের একটি গরুর খামার রয়েছে। ভাইয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, খামারের একটি লাল রঙের গাভি ভুক্তভোগী ঝাড়ু বিক্রেতার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। গরুটি ঝাড়ু বিক্রেতার স্ত্রী জামেনা খাতুন হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।’ ভুক্তভোগী ঝাড়ু বিক্রেতার স্ত্রী জামেনা খাতুন বলেন, ‘আমি কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার বাড়িতে একটি গরু নিয়ে হাজির এক প্রবাসীর ভাই। আমি গরু পেয়ে কত যে খুশি হয়েছি এটা কীভাবে বলব। প্রবাসী ভাইয়ের জন্য আমার দোয়া সব সময় থাকবে। আমি অনেক খুশি হয়েছি। আমি প্রাণ খুলে দোয়া করি মহান আল্লাহ তায়ালা যেন ওনাকে ভালো রাখে। আর আমাদের মতো গরিব মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গরুটি নিয়ে যাওয়ার পর থেকে আমি কতবার খালি গোয়ালঘরে যাই। গরুকে যেখানে খাবার দিতাম, বেঁধে রাখতাম সেখানে ছোটাছুটি করছি, কোনো কিছুতে শান্তি লাগত না। প্রবাসী ভাইয়ের দেওয়া গরু পেয়ে আজ আমি মহাখুশি।’ ভুক্তভোগী ঝাড়ু বিক্রেতা জাহাম্মদ আলী মুনশি বলেন, ‘সাংবাদিকেরা আসার পর থেকে অভিযুক্তরা আমার বাড়িতে এসে মেম্বারের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে গেছে। রাতে কয়েকবার পুলিশ এসে আমাদের খোঁজখবর নিচ্ছে। শেষ সম্বল হারিয়ে আমি চোখেমুখে অন্ধকার দেখছিলাম, সেই মুহূর্তে একজন প্রবাসী ভাই আমার অন্ধকার দূর করল। এই ঋণ কোনো দিন পরিশোধ করা যাবে না। আমি সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানাই।’ কাওরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. মোমেনুল কাদের বলেন, ‘অভিযুক্তরা আমাকে ডেকে নিয়ে ভুক্তভোগীর গরু বিক্রির ৩০ হাজার টাকা দিয়েছে।’ কাওরাইদ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. এমদাদ হোসেন মন্ডল বলেন, ‘এ বিষয়ে বিএনপির পক্ষে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সোমবার তদন্ত রিপোর্ট জমা দিলে বিধি মোতাবেক তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। অভিযুক্তদের বহিষ্কারের বিষয়টি নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মন্ডল বলেন, ‘সালিস বসিয়ে গরু বিক্রি করে টাকা ভাগাভাগি করে নেওয়ার বিষয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী ঝাড়– বিক্রেতা জাহাম্মদ আলী মুনশি। আসামিকে গ্রেপ্তারে কাজ করছে পুলিশ।’
উল্লেখ্য, গত ২৭ অক্টোবর রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপির নেতা মো. বাবলু সরকারের নেতৃত্বে উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের গলদাপাড়া গ্রামের ভুক্তভোগী ঝাড়ু বিক্রেতা জাহাম্মদ আলী মুনশিকে মিথ্যা অপবাদে দিয়ে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গ্রাম্য সালিস বসানো হয়। সালিসে জাহাম্মদ আলীর একমাত্র সম্বল গাভি বিক্রি করে টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নেওয়া হয়।
Discussion about this post