অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ সর্বোচ্চ ২ বছর বা আরও কম হওয়া উচিত বলে মনে করেন ৫৩ শতাংশ ভোটার। আর ৪৭ শতাংশ চান এই মেয়াদ হোক ৩ বছর বা আরও বেশি।
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাউথ এশিয়ান ইন্সটিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভার্নেন্সের (এসআইপিজি) গবেষণায় এ তথ্য উঠে আসে।
বুধবার (০২ অক্টোবর) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে নাগরিকদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক জাতীয় জরিপের ফল প্রকাশ করে এসআইপিজি।
জরিপের তথ্য ও ফলাফল উপস্থাপন করেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ড. আকরাম হোসেন। তিনি বলেন, ৯ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর দেশের আটটি বিভাগের ১৭টি জেলায় মোট এক হাজার ৮৬৯ জনের ওপর এই জরিপ করা হয়। এটি জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সর্বপ্রথম সরাসরি পরিচালিত একটি জাতীয় প্রতিনিধিত্বমূলক জরিপ।
তিনি বলেন, উত্তরদাতাদের বৃহত্তম অংশ (৬৩%) মধ্যবয়সী (২৮-৫০ বছর), ২২ শতাংশ জেনারেশন জেড (১৮-২৭ বছর) এবং ১৪ শতাংশের বয়স ৫০ বছরের উপরে। এ ছাড়া জরিপের উত্তরদাতাদের ৫৪ শতাংশ শহরাঞ্চল ও ৪৬ শতাংশ গ্রামীণ অঞ্চলের।
জরিপের তথ্যানুযায়ী, উত্তরদাতাদের প্রায় ৫৩ শতাংশ মনে করেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ দুই বছর বা তার কম হওয়া উচিত। যেখানে ৪৭ শতাংশ মনে করেন এই অন্তর্বর্তী সরকারকে তিন বছর বা তার বেশি ক্ষমতায় থাকতে হবে।
জরিপে আরও জানা যায়, নাগরিকরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বর্তমান অবস্থা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে তাদের বন্যা ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করেছেন। বাংলাদেশ পুলিশ, শিক্ষা ব্যবস্থা, রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারের ওপরও নাগরিকদের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পেয়েছে।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমি মনে করি এই গবেষণাটা সঠিকভাবেই করা হয়েছে এবং এই জরিপে যে বিষয়টি উঠে এসেছে এটা বোধ হয় আমাদের সবারই জানা। আমরা নিজেরা যে বিষয়টি উপলব্ধি করি, অন্যের কাছ থেকে শুনি এই গবেষণায় যেটা এসেছে সেটা তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
তিনি বলেন, একটা জিনিস, যেটা আমার মনে হয় সুস্পষ্টভাবে মানুষের উপলব্ধিতে ছিল, এমনকি মানুষের বক্তব্যতেও ছিল, সেটা হচ্ছে বিচার। যারা এত বছর ক্ষমতায় থেকে অন্যায় করেছে, যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, যারা ফৌজদারি অপরাধ করেছে, আর্থিক অপরাধ করেছে এবং যারা নির্বাচনী অপরাধ করেছে, তাদের বিচারের কথাটা আমার মনে হয় সবার মনেই ছিল। সবাই চেয়েছে এটা যেন হয়। এ যে জনআকাঙ্ক্ষা। জনগণ চাচ্ছে- এদের বিচার হোক। আমরা চাই তাদের স্বচ্ছ ন্যায়বিচার হোক। ন্যায়বিচারের মাধ্যমে তাদের দোষী সাব্যস্ত করে বিচার করা হোক। একই সঙ্গে রাষ্ট্র মেরামত হোক যাতে এর পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
বদিউল আলম মজুমদার আরও বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন আগেও হয়েছে কিন্তু আমরা তার সুফল পাইনি। এর কারণ হলো পলিটিক্যাল কালচার। আমাদের রাজনীতিবিদরা যে অঙ্গীকার করেন, জনগণ যেটা চায় সে ব্যাপারে ক্ষমতায় যাওয়ার পরে যদি আন্তরিকতার সঙ্গে তারা সেটা বাস্তবায়ন না করেন তাহলে তার সুফল কখনোই পাওয়া যাবে না। সুফল যদি পেতে হয় তাহলে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন করতে হবে, আমাদের রাজনৈতিক দলের পরিবর্তন করতে হবে। আমরা যদি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চাই তাহলে আমাদের মন-মানসিকতা গণতান্ত্রিক হতে হবে। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে গণতান্ত্রিক হতে হবে।
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ইতিহাস ও দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমানের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন- এসআইপিজির উপদেষ্টা অধ্যাপক সালাহউদ্দিন এম. আমিনুজ্জামান, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নাভিন মুর্শিদ প্রমুখ।
Discussion about this post