তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলা শ্রম অসন্তোষ কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে না আসার মধ্যে করণীয় নির্ধারণে আবার একসঙ্গে বৈঠকে বসেছে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক ও শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
সোমবার উত্তরায় সংগঠনের নিজস্ব কার্যালয়ে উদ্যোক্তাদের ‘জরুরি মতবিনিময় সভা’য় ডাকা হয়েছে। বিকাল সাড়ে ৫টায় শুরু হওয়া এই বৈঠকে সংগঠনটির সাবেক সভাপতি, সদস্য কারখানাদের মালিক, সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি, শিল্প পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইসহ বিভিন্ন অংশীজনরা অংশ নেবেন বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদেরকে জানানো হয়েছে।
গত ৫ অগাস্ট প্রবল গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন শ্রেণি গোষ্ঠী ও পেশাজীবীরা নানা দাবি নিয়ে সোচ্চার হলেও এখন সেই প্রবণতা কিছুটা কমেছে। কিন্তু তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা নানা দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করার পর তা আর থামছেই না।
শ্রমিকদের কোনো সুনির্দিষ্ট দাবি নেই, গাজীপুর, টঙ্গী, সাভারের আশুলিয়ার একেক এলাকায় একেক দাবিতে তারা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, তবে বকেয়া বেতন আর সরকার পতনের পর চাপে পড়া বিভিন্ন কারখানার কর্তৃপক্ষের বেতন আটকে যাওয়ার বিষয়টি সামনে আসছে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর বিজিএমইএ নিজেদের মধ্যে বৈঠকের পর অনেক কারখানার বেতন পরিশোধ হয়, এরপর কারখানা সচল হওয়ার সংখ্যাও বেড়েছিল।
তবু সংকট থেকে বের হতে পারেনি এই খাত। এই অবস্থায় অভিযানে নামে যৌথ বাহিনী। কারখানায় হামলা, ভাঙচুরের অভিযোগে ১৫ জনেরও বেশি মানুষকে আটকের কথা জানানো হয়, শ্রমিকদের উসকানি দেওয়ার অভিযোগে নেত্রকোণা থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তবু পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। গত ১৪ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তিনজন উপদেষ্টা উপস্থিতিতে পোশাক খাতের উদ্যোক্তা, শ্রমিক প্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে সভা করে বিজিএমইএ। সেদিন সিদ্ধান্ত হয়, যে কারখানায় অসন্তোষ দেখা দেবে, শ্রম আইন অনুযায়ী সেই কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হবে। ‘নো ওয়ার্ক, নো পে’ নীতি, অর্থাৎ কাজ না করলে সেদিনের মজুরি না দেওয়ার ঘোষণাও হয়।
এরপর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতির খবর আসতে থাকে সংবাদ মাধ্যমে। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের আট দিনের মাথায় রোববারও বেশ কিছু কারখানায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ দেখানোর পর সোমবার পরিস্থিতির আবার অবনতি হয়।
সাভারের আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে বকেয়া বেতনের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে শ্রমিকরা। এর জের ধরে ৫১টি কারখানা বন্ধ হয়েছে, যার মধ্যে ৪৩টিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের নরসিংহপুর এলাকায় জেনারেশন নেক্সট পোশাক কারখানার কয়েক হাজার শ্রমিক এক মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে।
এর আগে দুপুরে সেনাবাহিনী, শিল্প পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও পোশাক খাতের ছয় প্রতিনিধি বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে।
সেখানে জানানো হয়, অগাস্ট মাসের বেতন পরিশোধ করেছে এমন কারখানার সংখ্যা দুই হাজার ৩৩টি বা ৯৫ শতাংশ। আর বেতন দিতে পারেনি ১১১টি কারখানা বা ৫ শতাংশ।
শ্রম অসন্তোষের কারণে ইতোমধ্যে ১৫-২০ শতাংশ রপ্তানি আদেশ বাতিল হয়ে গেছে বলে গত ১২ সেপ্টেম্বর জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
গত ৮ অগাস্ট অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর প্রশাসনে রদবদলের মধ্যে বিজিএমইএর নেতৃত্বেও বদল আসে। সংগঠনের সভাপতির পদ ছেড়েছেন এস এম মান্নান কচি।
নতুন সভাপতির দায়িত্বে এসেছেন ডিজাইন টেক্স নিটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে থাকা খন্দকার রফিকুল ইসলাম।
Discussion about this post