গতকাল শুক্রবার দুপুরে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) পঙ্গু হাসপাতালের তৃতীয় তলায় মডেল বি ওয়ার্ডে পৌঁছার পর এমন দৃশ্যের অবতারণা হয়। বি ওয়ার্ডের প্রবেশপথে চোখে পড়ে ছোট কাগজে লেখা ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত রোগীদের জন্য বিশেষায়িত ওয়ার্ড’।
মুরসালিন কালের কণ্ঠকে বলে, ‘রেস্টুরেন্টের মালিকের কথায় তাঁর অন্য আরেকটি রেস্টুরেন্টে কাজের জন্য যাইতেছিলাম। রাস্তা পার হওয়ার সময় হঠাৎ টের পাই আমার ডান পা অবশ হয়ে যাচ্ছে, আর হাঁটতে পারছিলাম না। হাত দিয়ে দেখি রক্ত গড়ায়া পড়ছে। আমি তখন বাঁচাও, বাঁচাও বলে চিৎকার করেছি। কেউ ভয়ে আমাকে ধরেনি। শেষে হঠাৎ মায়ের কথা মনে পড়ে। তখন মায়েরে ফোন দিয়া কই, মা, আমার পায়ে গুলি লাগছে, আমাকে বাঁচাও।’
মুরসালিন বলে, ‘এখানে আসার এক দিন পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসকরা জানান, ডান পায়ের ঊরুতে গুলি লেগে হাড় ভেঙে আলাদা হয়ে গেছে, সঙ্গে ধমনিগুলো ছিঁড়ে গেছে। এখন আর পা রাখা সম্ভব নয়। মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে। এরপর তো পা কেটে ফেলে দিল।’
ওয়ার্ডটিতে কর্তব্যরত নার্স জানান, এই ওয়ার্ডে ভর্তি ৩৯ জন রোগীর মধ্যে ৩৬ জন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বিভিন্নভাবে আহত হয়েছে। এদের মধ্যে ২১ জন এক পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। উভয় পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে ছয়জন। চারজন হাতে, পাঁচজন হাত ও পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এর মধ্যে একজনের অঙ্গহানি হয়েছে। আরো বেশ কয়েকজনের অঙ্গহানির আশঙ্কা রয়েছে।
আহত রোগীর অঙ্গ কেটে ফেলা প্রসঙ্গে নিটোরের ইয়োলো-১ ইউনিটপ্রধান অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যেসব রোগী পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে এবং রক্তনালি বা ধমনি ছিঁড়ে গেছে, তাদের পা কেটে ফেলতে হয়। কারণ এতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে মাংসে পচন ধরলে রোগী মারা যাবে। পরবর্তী সময়ে রোগীর শারীরিক অনেক ক্ষতি হয়। কিডনিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নষ্ট হয়ে যায়। তাই রোগীকে বাঁচাতে আক্রান্ত অঙ্গটি কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিতে হয় চিকিৎসককে।’
Discussion about this post