বালাদুল আমিন : অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করেছে রেজিস্ট্রেশন সার্ভিসের সদস্যরা। বৈষম্যহীন, জনবান্ধব ও স্বচ্ছ রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস গড়তে ১১ দফা দাবিতে সারা দেশে কর্ম বিরতি পালন করছিলেন তারা। পরে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলের আশ্বাসে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস অন্তর্বতীকালীন সংস্কার ও উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ ইমরুল খোরশেদ ও সদস্য সচিব মো. মকছু মিয়া সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
বাংলাদেশ রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস এসোসিয়েশনের দাবিগুলো হচ্ছে সেবাদানে দায়িত্ব ও কর্মপরিধির গুরুত্ব এবং রাজস্ব আদায়ে অবদান বিবেচনায় রেজিস্ট্রেশন সার্ভিসকে ক্যাডার সার্ভিসে উন্নীত করতে হবে। মন্ত্রণালয়ে পৃথক ‘রেজিস্ট্রেশন বিভাগ’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং স্বীয় বিভাগীয় অফিসারদের নিয়োগ করে মন্ত্রণালয়ে রেজিস্ট্রেশন সার্ভিসের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
ষষ্ঠ গ্রেডে সিনিয়র সাব-রেজিস্ট্রার ও অতিরিক্ত জেলা রেজিস্ট্রার পদ সৃজন করতে হবে এবং জেলা রেজিস্ট্রার পদসহ ঊর্ধ্বতন সব পদকে আপগ্রেড করে নিবন্ধন অধিদপ্তরের নূতন অর্গানোগ্রাম বাস্তবায়ন করতে হবে। কর্মকর্তা ও কর্মচারী বদলির ক্ষেত্রে অনিয়ম ও বদলি বাণিজ্য দূর করতে একটি কার্যকরী ‘কর্মকর্তা এবং কর্মচারী বদলি নীতিমালা’ প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। বৈষম্যের শিকার হয়ে সাময়িক বরখাস্তকৃত ও সংযুক্ত কর্মকর্তাদেরকে অবিলম্বে পদায়ন করতে হবে। অনলাইনে দলিল রেজিস্ট্রির জন্য জনস্বার্থে দলিল ই-রেজিস্ট্রেশন সেবা সারাদেশে অতি দ্রুত চালু করতে হবে। জনগুরুত্বপূর্ণ দলিলের বালাম বহির ডিজিটাল আর্কাইভ ও ডিজিটাল ইনডেক্স ডাটাবেজের ব্যবস্থা করতে হবে।
রেজিস্ট্রারিং অফিসারের আইনগত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। সেবার মান বৃদ্ধি ও সেবা সহজীকরণে রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮ ও রেজিস্ট্রেশন বিধিমালা, ২০১৪ এবং সংশ্লিষ্ট কতিপয় আইন ও বিধিমালা সংশোধন করতে হবে। নিবন্ধন অধিদফতরের জন্য নিজস্ব ভবন নির্মাণ করতে হবে। এছাড়া জনবান্ধব সেবা নিশ্চিতকল্পে সারাদেশের পুরোনো ও জরাজীর্ণ জেলা রেজিস্ট্রার অফিস ও সাব-রেজিস্ট্রার অফিসসমূহের জন্য আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত ভবন নির্মাণ করতে হবে। যেসব ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে, সেগুলোর নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। জেলা ও তদুর্ধ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য গাড়ি ও পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে। ভিজিট ও কমিশনে দলিল রেজিস্ট্রেশনের জন্য নিজ অধিক্ষেত্রের মধ্যে এবং অধিক্ষেত্রের বাইরে দূরত্বের ওপর ভিত্তি করে যৌক্তিক সম্মানী নির্ধারণ করতে হবে।
ভ্রমণভাতার হারও যৌক্তিকভাবে পুনঃনির্ধারণ করতে হবে। জনগুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডের নিরাপত্তা ও জনবহুল এ কার্যালয়ের সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সদস্য অথবা আনসার সদস্য মোতায়েন করতে হবে। নকলনবিশদের চাকরি জাতীয়করণ করতে হবে। এছাড়া অস্থায়ী কর্মচারী উমেদার, ঝাড়ুদার, নৈশপ্রহরীদের বাস্তবসম্মত বেতন প্রদান করে তাদের চাকরি স্থায়ী করতে হবে। দলিল লেখকদের পারিশ্রমিক যৌক্তিক হারে পুনঃনির্ধারণ করতে হবে এবং দলিল লেখক (সনদ) বিধিমালা, ২০১৪ সংশোধন করতে হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আইন উপদেষ্টা প্রস্তাবনাগুলো গভীর মনোযোগের সঙ্গে শোনেন। এবং পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে সভা-সমাবেশ পরিহার করে সরকারের সকল দফতরের দাবি-দাওয়া লিখিত আকারে উপস্থাপনের নির্দেশনার প্রতি সম্মান জানিয়ে বাংলাদেশ রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস এসোসিয়েশন তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে। তাদের উপর অর্পিত দায়িত্বসমূহ নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে পালন করবেন এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফসল বর্তমান সদাশয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সকল নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবে।
Discussion about this post