ছোট্ট তুলতুলে, মায়াবী মুখায়ব। মায়ের কোলে নিরুদ্বেগ ঘুমে আচ্ছন্ন শিশু। মুখখানি ছাড়া পুরো কোমল শরীর তোয়ালে পেঁচানো। হেলিকপ্টারের বিকট শব্দেও ঘুম ভাঙেনি তাদের। মায়ের চোখ অশ্রুসিক্ত। এ অশ্রুধারা আনন্দের নাকি সন্তানের জীবন নিয়ে উদ্বেগের, তা স্পষ্ট ধরা পড়েনি। আপাতত নিরাপদ স্থানে পৌঁছতে পারছেন, হয়তো এই ভেবে কান্না ধরে রাখতে পারেননি!
বন্যায় বিধ্বস্ত ফেনীর পরশুরামের বিলোনিয়া সীমান্ত এলাকা থেকে গতকাল হেলিকপ্টারে দুই নবজাতককে উদ্ধার করে র্যাব নিরাপদ স্থানে নেওয়ার সময় এমন দৃশ্যপট দেখা যায়। মুহূর্তে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয় ছবিটি। বড় হয়ে হয়তো ওরা জানবে, হঠাৎ এক বন্যায় কী দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল তাদের। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ থেকে ওরা প্রাণে বেঁচেছে।
র্যাবের কাছ থেকে পাওয়া ভিডিও এবং স্থিরচিত্রে দেখা যায়, হেলিকপ্টারে পাশাপাশি সিটে দুই নবজাতক নিয়ে বসে আছেন স্বজনরা। দুই নারী বুকের মধ্যে আগলে রেখেছেন দুই শিশুকে। অক্সিজেন সাপোর্ট দিয়ে সুস্থ করে তাদের নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেওয়া হয়। দুই শিশু ছাড়াও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের উদ্ধার করা হয়েছে।
হেলিকপ্টারে উদ্ধার আরেক নবজাতকের মা হলেন রাবেয়া খাতুন। শুক্রবার তিনি ফুটফুটে সন্তানের জন্ম দেন।
নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ বন্যাদুর্গত এলাকা হতে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা পানিবন্দিদের হেলিকপ্টারের মাধ্যমে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া অনেক পানিবন্দি মানুষ– যারা ত্রাণ পাচ্ছিলেন না, তাদের খুঁজে বের করে র্যাবের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। বন্যাকালে ও বন্যা-পরবর্তী সময়ে খাদ্য সংকট, খাবার পানির দুষ্প্রাপ্যতা এবং বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের ব্যাপারে সতর্ক করা হচ্ছে।
র্যাব জানায়, মানবিক বিপর্যয় রোধে বন্যার্তদের মাঝে চলমান সহায়তা কার্যক্রম চলবে। বন্যা পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে কেউ যেন আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে না পারে, সে জন্য নিয়মিত টহল কার্যক্রমের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
Discussion about this post