দেশের সীমান্তে ঢুকে মানুষ মারলেও পতাকা বৈঠক করে বলা হতো সব ঠিক হয়ে গেছে—এ কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, সেই দিন শেষ হয়ে গেছে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) উদ্দেশে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, ‘বিজিবির মতো একটা ফোর্সকে (বাহিনী) পিঠ দেখাতে বলেছে সীমান্তে। সীমান্তে আমাদের লোক মারে, বিজিবি পতাকা বৈঠক করতে বাধ্য হয়। আমি বলেছি যে পিঠ দেখাবেন না। এনাফ ইজ এনাফ (যথেষ্ট হয়েছে)।’
এদিকে গত রোববার চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সীমান্তের ওপারে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলো আজ এ খবর প্রকাশ করেছে।
পিলখানায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের সীমানার মধ্যে ঢুকে মারে, আর আমরা বলি, পতাকা বৈঠক করেছে, সব ঠিক হয়ে গেছে বা আমি জানি না। দ্যাট ডেজ আর ওভার (সেসব দিন শেষ হয়ে গেছে)।’
দেশের বিভিন্ন বাহিনীকে দানব বানানো হয়েছে উল্লেখ করে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘১৫ বছর এই ফোর্সগুলোকে দানব বানিয়েছে। যারা বানিয়েছে তাদের আন্তর্জাতিক আদালতে নিয়ে যাওয়া হবে। তারা কত লোক মেরেছে। প্রত্যেকটি ইনস্টিটিউশন ধ্বংস করেছে। এগুলো ন্যাশনাল ফোর্স (বাহিনী), কারও পারসোনাল (ব্যক্তিগত) ফোর্স নয়।’
পুলিশ বাহিনী প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘পুলিশ খুবই অনুতপ্ত। এখানে (পিলখানা) আসার সময়ও দেখলাম, পুলিশের সঙ্গে ছাত্ররা কাজ করছে। পুলিশ খুবই অনুতপ্ত। পুলিশকে দানব বানানো হয়েছে। যারা এটি করেছে তাদের আমরা ভুলে যাব না। অবশ্যই বিচার করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘একটু সবুর করেন, কতগুলো প্রক্রিয়া আছে। সরকারি অ্যাকশন (ব্যবস্থা) নিতে গেলে অনেকগুলো প্রসেস (প্রক্রিয়া) আছে। যেগুলো টপাটপ করা যায় না। সুতরাং ধৈর্য ধরতে হবে।’
গতকাল দেওয়া নিজের বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘অনেক কথার মধ্যে অনেক কথা চলে আসে। যদি আমি এমন কোনো কথা বলে থাকি, সেটা ভুল বুঝেছেন, সেটার জন্য আমি দুঃখিত।’
১৫ আগস্ট নিয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আজ বিকেলে আমরা বসব, সেখানে আলোচনা হবে।’ সেদিনের নিরাপত্তাব্যবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করব। পুলিশ থাকবে, বিজিবি-র্যাব থাকবে। হয়তো সেনাবাহিনীও থাকবে।’
ছাত্রদের উদ্দেশে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘তোমাদের আন্দোলন কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না। এই আন্দোলনের তো ইমেজ (ভাবমূর্তি) আছে। আর পুলিশ তো অনুতপ্ত।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সবকিছুর একটা প্রসেস (প্রক্রিয়া) আছে। আমি লিস্ট (তালিকা) করছি। যাদের অন্যায়ভাবে বের করা হয়েছে, আবার যারা এর মধ্যেই ছিল না—আপনারা যাদের কথা বলছেন, সেটা আমরা দেখব। তবে আমরা খুঁজছি, বের করার চেষ্টা করছি হুকুমের আসামিদের।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘যাদের কথা বলা হচ্ছে, তাদের সবার লিস্ট (তালিকা) আমাদের কাছে আছে। দু-এক দিনের মধ্যে আপনারা অ্যাকশন (ব্যবস্থা) দেখবেন।’
অস্ত্র জমা দেওয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘অস্ত্র ফেরত দিতে বলেছি। যদি জমা না দিয়ে ধরা পড়েন, তাহলে দুই রকমের শাস্তি পাবেন। নিষিদ্ধ অস্ত্র ছিনতাই এবং নিষিদ্ধ অস্ত্র পাওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন। সুতরাং নিজেরা ভয়ে আসতে না পারলে অন্য কাউকে দিয়ে জমা দেন।’
পুলিশের পোশাক প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা যত দ্রুত সম্ভব ইউনিফর্ম চেঞ্জ (পোশাক পরিবর্তন) করতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে যেন মানবিক পুলিশ হয়, সে জন্য আমরা পুলিশ কমিশন গঠনের চিন্তাভাবনা করছি।’
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক ঘটনায় বিজিবির তিন সদস্য নিহত ও ১৩০ জন আহত হয়েছেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বিজিবি হাসপাতালে গেলে তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীসহ বিজিবি সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক ঘটনায় বিজিবির তিন সদস্য নিহত ও ১৩০ জন আহত হয়েছেন। আন্দোলনে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। এদের মধ্যে তিনজনকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে এবং তিনজন শিক্ষার্থী বর্তমানে বিজিবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আজ বিজিবি হাসপাতালে গেলে তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীসহ বিজিবি সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
Discussion about this post