মাস্টারপ্ল্যানের অংশ হিসেবে মাঝরাতে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ডিবি পুলিশ প্রধানের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়েছে বলে মনে করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) রাতে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, এই অভিযানের আগে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে, গুলি ফোটানো হয়েছে। একটি বাহানা তৈরি করে এরপর দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়েছে। সেখান থেকে বিস্ফোরক, লাঠিসোঁটাসহ নানা কিছু জনগণের সামনে তুলে ধরতে চায়।
তিনি বলেন, ডিবি পুলিশের এটা করা মানে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে একটা বার্তা দেওয়া যে, তারা যেন ভয় পেয়ে যায়। আমি এর তীব্র নিন্দা ও ঘৃণা জানাচ্ছি।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় যখন শূন্য, নেতাকর্মীরা যখন ঘুমাচ্ছিল, তখন মাঝরাতে কেন এই অভিযান? কারণ শূন্য কার্যালয়ে যে কোনো চক্রান্ত আঁটা যায়। এর আগেও ভিডিওতে দেখা গিয়েছিল যে, পুলিশ বিস্ফোরক নিয়ে বিএনপির প্রধান কার্যালয়ে প্রবেশ করেছিল।
ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে রিজভী প্রশ্ন রেখে বলেন, বিএনপি গণমানুষের দল। তারা বারবার সরকার গঠন করেছে। কেন সে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিস্ফোরক থাকবে, লাঠিসোঁটা থাকবে? এটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নোংরা চাতুর্য। মানুষের কাছে বিএনপিকে নোংরাভাবে সন্ত্রাসী দল হিসেবে চিহ্নিত করার জন্যই এই মধ্য রাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ নাটকটি মঞ্চস্থ করা হয়েছে। দেশবাসী সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ ধরনের নোংরা খেলা, নোংরা চাতুর্য সম্পর্কে আগেই অবগত।
অভিযানের আগে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের কথা উল্লেখ করে বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, অভিযান শুরুর আগে প্রথমে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ হলো রাতে। আমরা তখন বেরিয়ে এসেছি। তারপর কিছুক্ষণ গুলি হলো। বিএনপির কার্যালয়ে তো কেউই নেই। তাহলে ককটেল বিস্ফোরণটা কে করল? হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন করেছে, না হলে আশপাশের যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দিয়ে করানো হয়েছে পুলিশের প্রোটেকশনে। অফিস রেইড করতেই এটা (ককটেল বিস্ফোরণ, গুলি) ঘটানো হয়েছে। ওই সময়ে সেখানে অনেক আনরোলিং পারসনকে দেখা গেছে, তারা বিএনপি অফিসের আশপাশে বিচরণ করছে। তারা কারা? হয় গোয়েন্দা বাহিনীর লোক, না হয় পুলিশের ছত্রছায়ায় যুবলীগ-ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা।
তিনি বলেন, আমাদের অফিসের পিয়নরা ভয়ে পালিয়ে গিয়ে আশপাশে অবস্থান করেছেন। তারা যতটুকু আমাকে জানিয়েছেন সেটা এটাই যে, তারা (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) পূর্বের মতো একটা নাটক মঞ্চস্থ করার জন্যই বিএনপির প্রধান কার্যালয়ে মাঝরাতে হানা দিয়েছে, রেইড করেছে।
রিজভী বলেন, আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, এ ধরনের নোংরা চাতুর্যের আশ্রয় নিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। আজকে আওয়ামী লীগের ডামি সরকার যে অনাচার, দুঃশাসন তৈরি করেছে সেটাকে এই ধরনের নাটক দিয়ে আড়াল করতে পারবেন না। আপনাদের পতন অত্যাসন্ন। আজকে সাংবাদিকরা এত রাতে কার্যালয়ের সামনে ছুটে এসেছেন- এই নোংরা নাটক মঞ্চস্থ করার যে প্রচেষ্টা সরকারের পক্ষ থেকে, তার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী করেছেন তা তারা (সাংবাদিকরা) স্বচক্ষে দেখেছেন।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে বারোটা থেকে রাত একটা পর্যন্ত এ অভিযানের নেতৃত্ব দেন ডিবি প্রধান হারুন-অর-রশিদ। অভিযান শেষে ডিবি প্রধান বলেন, অভিযানে শতাধিক ককটেল, ৫-৬ বোতল পেট্রোল, পাঁচশর বেশি লাঠিসোঁটা ও ৭টি দেশি-বিদেশি অস্ত্র পাওয়া গেছে। তিনি আরও জানান, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণসহ ৭-৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
Discussion about this post